পার্বত্যাঞ্চলে এখন কারও নিরাপত্তা নেই: সন্তু লারমা

রাঙামাটি অফিস
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৩ | ১৫:১৫ | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৩ | ১৫:১৫
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা বলেছেন, পার্বত্যাঞ্চলে আজকে কারও নিরাপত্তা নেই। তাদের সামনে একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। দুরু দুরু বুক নিয়ে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটাতে হচ্ছে।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নে পাহাড়ের সব জুম্ম জনগোষ্ঠীকে আন্দোলন-সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে সাহসী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহু সামনে রেখে আজ সোমবার রাঙামাটিতে আয়োজিত বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর হলে এসব উৎসব ভালোভাবে উদযাপন করতে পারেননি।
তিনি অভিযোগ করেন, পার্বত্যাঞ্চলে যে শাসন ও আইনি ব্যবস্থা চলছে সেটা গণতান্ত্রিক, মানবিক ও আইনসম্মত নয়। আজকে বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলে সামরিক শাসন ব্যবস্থার বাস্তবতা আমরা দেখি না। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ বছর পরও শাসক গোষ্ঠী পাহাড়ে যে শাসন ব্যবস্থা চালাচ্ছে সেটা অমানবিক, গণবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক। পার্বত্য চুক্তিকে লঙ্ঘন ও চুক্তির বিরোধিতা করে শাসন জারি রাখা হয়েছে। পাহাড়ে বসবাসরত ১৩টি ভাষাভাষি ১৪টি জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব চিরতরে বিলুপ্ত করার জন্য শাসক গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের প্রকৃত বসবাসকারীদের ভূমি থেকে উৎখাত করে বহিরাগতরা জায়গা দখল করে তাদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করছে। এর মাধ্যমে তারা এখানকার সমাজ ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চায়। আমরা মন খুলে কথা বলতে পারি না। নিশ্চিন্ত ঘুমাতে পারি না। আমরা কোনো না কোনো ধরনের অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হচ্ছি।
তিনি বলেন, সমঅধিকার, সমমর্যাদা নিয়ে পাহাড়ের মানুষ বেঁচে থাকতে চায়। আদিবাসী জুম্ম জনগণ আজও তাদের অধিকার ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়নি।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যে নিপীড়ন, নির্যাতন ও অত্যাচার আমাদের জীবনের ওপর চলছে আমরা অবশ্যই তার অবসান চাই।
রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে র্যালির উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মী শিশির চাকমা। বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহু উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরউত্তম তংচংগ্যা, শিক্ষাবিদ অঞ্জুলিকা খিসা, সুজনের জেলা শাখার সম্পাদক এম জিসান বখতেয়ার, ভবতোষ দেওয়ান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পাহাড়ি শিল্পীরা মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবশেন করেন। পরে পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বর পর্যন্ত বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিতে পাহাড়ি নারী-পুরুষরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে অংশ নেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত পাহাড়ি সম্প্রদায়ের তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু-বিষু-বিহু উৎসব আগামীকাল বুধবার শুরু হচ্ছে। একে ঘিরে পাহাড়ের পাড়ায়-মহল্লায় চলছে উৎসবের আমেজ।