সিটির ভোটে ইসি কঠোর
দুই মন্ত্রীকে সতর্ক, তলব আজমতকে

ছবি: ফাইল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩ | ২২:৩৪
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাঁকে সশরীরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এসে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রিসভার দুই সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলকে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে গাজীপুরসহ পাঁচ সিটি নির্বাচনে আচরণবিধি মেনে চলতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আওয়ামী লীগ ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যাতে সিটি নির্বাচনের প্রচারকাজে অংশ না নেন, সে বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয় ওই চিঠিতে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধি মানতে মন্ত্রী-এমপিদের তৎপরতায় উদ্বিগ্ন ইসি। তাই শুরুতেই মাঠ পর্যায়ে কঠোর বার্তা দেওয়ার কৌশল নিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। বিএনপিসহ তাদের নেতৃত্বাধীন জোট এবং বাম ঘরানার বেশ কয়েকটি দল এই নির্বাচন বর্জন করছে। দলীয় সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না– এই অভিযোগ তুলে তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলেছে। এমন পরিস্থিতি পাঁচ সিটি নির্বাচন বর্তমান কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গতকাল নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ইসির পক্ষ থেকে আচরণবিধি মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু সরকারি দলের লোকজনই বিধি ভঙ্গ করছেন। কারও কারও মধ্যে কিছুটা হলেও কৌশল করে আচরণবিধি না মানার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যাঁরা সরকারে থাকেন, তাঁরাই আচরণ বিধিমালা ভঙ্গ করে থাকেন। অথচ সরকারে যাঁরা থাকেন, তাঁদের কাছ থেকে ইসি আরও দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে। কেননা, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি সরকারি দলের দায়িত্বও অনেক বেশি।
ইসি গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে আগামী ৭ মে বিকেল ৩টার মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় সভা, মিছিল, শোভাযাত্রা ও শোডাউন করে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে কেন প্রার্থিতা বাতিল করা হবে না অথবা যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সে বিষয়ে তাঁকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। আজমত উল্লাকে দেওয়া শোকজে বলা হয়েছে, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় সভা, মিছিল, শোভাযাত্রা ও শোডাউনের বিষয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নজরে এসেছে, যা সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালার পরিপন্থি। এই বিধান লঙ্ঘনের কারণে প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ রয়েছে।
দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিধি ভঙ্গের অভিযোগ
গাজীপুরের স্থানীয় এমপি এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজম্মেল হক এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলকে আলাদা চিঠি দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। এতে বলা হয়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণসূচি জারি করেন। বিষয়টি রিটার্নিং অফিসার অবহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই মন্ত্রীর একান্ত সচিবদের আচরণবিধির বিষয়টি অবগত করা হয়। তার পরও মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। এই তৎপরতা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে চিঠিতে উল্লেখ করে বিষয়টি তাঁদের অবহিত করতে একান্ত সচিবদের অনুরোধ করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ, আওয়ামী লীগ ও জাপাকে চিঠি
আচরণবিধি মানতে সরকার, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাঁদের সমপদমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, এমপি এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র) হিসেবে যাতে দলীয় কার্যক্রম গ্রহণকালে অথবা অন্য কোনো কার্যক্রম গ্রহণে আচরণবিধি মেনে চলেন তার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জাতীয় পার্টির মহাসচিবকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনে সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যাতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণকালে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলেন, তার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্বাচন কমিশন বিশেষভাবে নির্দেশনা দিয়েছে।