ভারতের শুল্ক আরোপের প্রভাব সাঁথিয়ায়
মোকামে কমেছে কৃষকের পেঁয়াজ

জালাল উদ্দিন, সাঁথিয়া (পাবনা)
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৩ | ২০:১০ | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৩ | ২০:১০
দেশের ‘পেঁয়াজের ভান্ডার’খ্যাত পাবনার সাঁথিয়ার কৃষকরা এ বছর ১৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেন। উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার টন। দেশের মোট চাহিদার সাত ভাগ পূরণ হয় সাঁথিয়ার পেঁয়াজে। কিন্তু পেঁয়াজে ভারতের শুল্ক আরোপের খবরে কৃষকরা দেশি পেঁয়াজ মোকামে আনা কমিয়ে দিয়েছেন। বেশি দাম পাওয়ার আশায় এটি তাদের কৌশল বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের হিসাবমতে, এ বছর পেঁয়াজ ওঠার মৌসুম শেষ হয় গত এপ্রিলে। ওই সময় কৃষকরা পাইকারি ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হন। অথচ প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনের খরচ ছিল গড়ে ৩০ টাকা। উৎপাদন খরচ না ওঠায় লোকসান দিতে হয় প্রান্তিক চাষির। তবে সচ্ছল কৃষকের ঘরে এখনও ৩৫ হাজার টনের মতো পেঁয়াজ মজুত আছে।
এদিকে সাঁথিয়ায় গত সোমবারের তুলনায় বুধবার দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে পাঁচ থেকে ছয় টাকা দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৭২ থেকে ৭৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর আগে দাম ৬৬ থেকে ৭২ টাকার মধ্যে ছিল। আর ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের পাইকারি দাম গত দু’দিনে ১৬ থেকে ১৮ টাকা বেড়ে ৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
সরেজমিন কয়েকটি পেঁয়াজের হাটে গিয়ে জানা যায়, সাঁথিয়ার হাটগুলোতে শুধু দেশি পেঁয়াজের আমদানি হয়ে থাকে। কৃষকদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা সরাসরি পেঁয়াজ কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যান। সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাট, কাশীনাথপুর, বোয়াইলমারী, বনগ্রাম হাটসহ কয়েকটি হাটের আড়তে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজও বিক্রি হয়ে থাকে।
হাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিকের তুলনায় পেঁয়াজের আমদানি বেশ কম। আড়তদার, ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জানান, ভারতের শুল্ক আরোপের খবরে কৃষকরা দাম বেশি পাওয়ার আশায় হাটে পেঁয়াজ আনা কমিয়ে দিয়েছেন। এবার পেঁয়াজের ফলন কিছুটা কম হওয়ায় মজুতের পরিমাণ নিয়ে কৃষি বিভাগের তথ্য তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না।
সাঁথিয়ার বোয়াইলমারী হাটের আড়তদার মালেক ও কালু, ব্যবসায়ী আবু দাউদ, করমজা চতুরহাটের আড়তদার মুন্নাফ প্রামাণিক বলেন, ‘কৃষকরা এখন সব খবর রাখেন। তাই ভারতের শুল্ক আরোপের খবরে তারা পেঁয়াজের দাম বাড়ার আশা করছেন। এজন্য হাটে পেঁয়াজ আনা কমিয়ে দিয়েছেন। এতে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ-ছয় টাকা বাড়লেও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে অনেক বেশি।
করমজা চতুরহাটের ইছামতী কাঁচামাল আড়তের ব্যবস্থাপক আশরাফুল আলম জানান, শুল্ক আরোপের খবরের পর থেকে আড়তে ভারত থেকে আমদানি করা কোনো পেঁয়াজ আসেনি। গৌরীগ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার জানান, এ বছর তিনি ১২ বিঘা জমিতে আবাদ করে প্রায় ৭০০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছেন। এরই মধ্যে বেচা হয়েছে ৩৫০ মণ। ভারতের শুল্ক আরোপের খবর পেয়ে বেশি দামের আশায় বাকি পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন।
করমজা চতুরহাটের ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিকারক আকছেদ আলী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে গত ১৯ আগস্ট ৪৫ টাকা কেজি দরে এক ট্রাক পেঁয়াজ এনেছিলেন। কিন্তু ভারতের শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর থেকে কেজিতে ১৫ টাকা দাম বেড়ে গেছে। এজন্য ভারতীয় পেঁয়াজ আনা এখন বন্ধ রেখেছেন।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী জানান, আগামী অক্টোবরের শেষ দিকে সাঁথিয়ায় আগাম জাতের পেঁয়াজ আবাদ শুরু হবে। সেই পেঁয়াজ উঠতে আরও মাস তিনেক সময় লাগবে। অর্থাৎ স্থানীয় নতুন পেঁয়াজ উঠতে এখনও পাঁচ থেকে ছয় মাস দেরি আছে। কৃষকের মজুত পেঁয়াজে এখনও বেশ কিছুদিন চলবে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
- বিষয় :
- পেঁয়াজ
- পেঁয়াজের দাম
- দেশি পেঁয়াজ
- ভারতীয় পেঁয়াজ