ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বগুড়া-৭ আসন

গুরু-শিষ্যের লড়াইয়ে বিপাকে আ.লীগ

গুরু-শিষ্যের লড়াইয়ে বিপাকে আ.লীগ

আছাদুর রহমান দুলু ও সাজেদুর রহমান সাহীন

এস এম কাওসার, বগুড়া

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৩ | ২৩:১৭ | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩ | ২৩:১৭

আছাদুর রহমান দুলু ও সাজেদুর রহমান সাহীন। দু’জনই বগুড়ার শাজাহানপুরের বাসিন্দা। একসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগ করেছেন। রাজনীতিতে ভিপি সাহীনকে সবাই জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দুলুর শিষ্য হিসেবে জানেন। প্রকাশ্যে তারা বিষয়টি স্বীকারও করেন। বর্তমানে দুলু জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আর ইউপি চেয়ারম্যান সাহীন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন দুলু ও সাহীন। এতদিন দুলু এগিয়ে থাকলেও হঠাৎ সাহীন জোরেশোরে মাঠে নামায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। তাদের ঘিরে দলে দেখা দিয়েছে বিভক্তি।

আসনটিতে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মোরশেদ মিল্টনের মনোনয়ন বাতিল হয়। পরে দলটির সমর্থন নিয়ে এমপি হন স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলু। বিএনপিবিহীন ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি জাতীয় পার্টিকে (এরশাদ) ছেড়ে দেয়। এর মধ্যে ২০১৪ সালে বিজয়ী হন জাপা নেতা অ্যাডভোকেট আলতাফ আলী। এবার আসনটি জাতীয় পার্টিকে না দিতে কেন্দ্রে আবেদন করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। দলীয় মনোনয়নের আশায় আগে থেকেই মাঠে কাজ করছেন দুলু। তবে দুই মাস আগে নৌকা নিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ভিপি সাহীন। প্রতিদিন তিনি কর্মী সভা, গণসংযোগসহ নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

দুলু ও সাহীন ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সাহীনের পক্ষে মাঠে না নামায় গাবতলী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ও গাবতলী সদর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক আহম্মেদকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘ভিপি সাহীনের পক্ষে কাজ না করায় অপবাদ দিয়ে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দলের প্রার্থী নিশ্চিত হওয়ার আগে আগে আমি কারও পক্ষে কাজ করব না।’

গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে পদবঞ্চিতদের একাংশ সাহীনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। দুলুর অনুসারী বলে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম ভুলন, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হক মঞ্জু, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম এখন সাহীনের পক্ষে মাঠে সক্রিয়। একই বিভক্তি দানা বেঁধেছে শাজাহানপুরেও। সেখানেও দুলু ও সাহীনের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ চরমে পৌঁছেছে। স্থানীয় নেতাকর্মীর অভিযোগ, মনোনয়ন পাওয়ার আগেই কর্মীদের নিয়ে যে টানাহেঁচড়া, তাতে সবাই বিব্রত। কে খুশি, কে বেজার হবে– তা নিয়ে সবাই দ্বিধায় পড়েছেন।

জানতে চাইলে ভিপি সাহীন বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারও বিরোধ নেই। দুলু আমার রাজনৈতিক গুরু। কিন্তু আমারও তো এমপি হতে ইচ্ছা হয়। এ জন্য মাঠে নেমেছি। তবে দল যাঁকে বেছে নেবে, তাঁর পক্ষেই কাজ করব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফারুক আমার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন। সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

আছাদুর রহমান দুলু বলেন, ‘সাহীন আমার হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছে। হঠাৎ সে নির্বাচনের ইচ্ছা পোষণ করায় নেতাকর্মী বিব্রত। আমি আমার কাজ করছি; কাউকে নিয়ে মাথাব্যথা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘১০ বছর ধরে মাঠে রয়েছি। দু’বার মহাজোটকে আসন ছেড়ে দেওয়ায় বঞ্চিত হয়েছি। এবার আমরা কাউকে আসনটি না দিতে আবেদন করেছি। এর পরও দলের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেব।’

আরও পড়ুন

×