ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

জলাবদ্ধ সড়কে মৃত্যুফাঁদ

জলাবদ্ধ সড়কে মৃত্যুফাঁদ

চরউজিলাব ইউনিয়নের বারৈচা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কের গর্তে জমে থাকা বৃষ্টির পানি সমকাল

বেলাব (নরসিংদী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৪ | ০০:৪৩ | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১৫:৪৪

অসংখ্য গর্তে ভরে গেছে সড়ক। বৃষ্টি হলেই এসব গর্তে জমে থাকে পানি। তখন ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করে। একটু অসতর্ক হলেই ঘটে দুর্ঘটনা। ঘটে প্রাণহানি। বেলাব উপজেলার চরউজিলাব ইউনিয়নের বারৈচা বাসস্ট্যান্ড থেকে রায়পুরা সড়কটির এমন বেহাল অবস্থা। গত বৃহস্পতিবার বারৈচা বাসস্ট্যান্ডের কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় নান্নু মিয়া নামে কাঠমিস্ত্রির। সড়কের এক পাশে বড় গর্তে অটোরিকশা উল্টে জমে থাকা পানিতে মারা যান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বারৈচা বাসস্ট্যান্ডের কাছে গত কয়েক মাসে অন্তত ২০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে বারবার দুঘর্টনা ঘটলেও স্থায়ী মেরামতের কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তবে নরসিংদী সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) দাবি– কয়েকবার সড়কটির ওই স্থানে মেরামত করেছেন তারা। তাদের মতে, সড়কের দুই পাশ দিয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায়ই জলাবদ্ধতা ও গর্তের সৃষ্টি হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েও জায়গা না পাওয়ায় তা করা হয়নি।

বারৈচা বাসস্ট্যান্ড থেকে রায়পুরা উপজেলার সড়কটি নির্মাণ করে নরসিংদী সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এটি বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন বারৈচা বাজারে সবজি বিক্রি করতে নিয়ে যান চাষিরা। কিন্তু বারৈচা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল। সবেচেয়ে খারাপ অবস্থা বাসস্ট্যান্ড এলাকার তোতা মিয়ার মার্কেটের কাছে। সড়কের এখানেই গভীর গর্ত। বৃষ্টি হলেই এই গর্তে জমে থাকে পানি। সড়কের দুই পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নেই। বৃষ্টির দিন পানি জমে এসব গর্ত রূপ নেয় পুকুরে। সড়কের যেখানে গভীর গর্ত, সেখানে মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া দূরের কথা, নেই কোনো সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড বা নিশানা। এখানেই গত বৃহস্পতিবারে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন অটোরিকশার এক যাত্রী।

স্থানীয়রা জানান, বারৈচা-রায়পুরা সড়কটি দিয়ে বারৈচা বাজার, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বারৈচা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বারৈচা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রায়পুরা শহর, রায়পুরা কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মানুষ যাতায়াত করে। বারৈচা বাসস্ট্যান্ড থেকে বারৈচা সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মিটার রাস্তার অবস্থা খারাপ। দীর্ঘদিনের বেহাল সড়কটি সংস্কার না করায় দিন দিন খানাখন্দ ও গভীর গর্ত হয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

গত শনিবার সকালে বেহাল সড়কটি ঘুরে দেখা যায়, সড়কের গর্তে পানি জমে আছে। এর মধ্যেই চলছে বিভিন্ন যানবাহন। বৃষ্টির পানি জমে থাকায় গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। লোকজন যে সড়কের পাশ দিয়ে হাঁটবে, তারও উপায় নেই।
শামিমা হক নামে এক কলেজছাত্রী জানান, এই সড়ক দিয়ে রায়পুরা কলেজে আসা-যাওয়া করেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দেখছেন সড়কের এক পাশে বড় গর্ত। বৃষ্টি এলেই পানির নিচে চলে যায় সড়কের এক পাশ। ভয়ে কোনো রিকশা যেতে চায় না এই সড়ক দিয়ে। অনেক কষ্টে কলেজে আসা-যাওয়া করেন তিনি।

অটোরিকশাচালক বাবুল মিয়া বলনে, এই সড়ক দিয়ে লাগাতার যানবাহন চলাচল করে। এতদিন হয়ে গেল এখন পর্যন্ত গর্তগুলো ভরাট করছে না কেউ। যদি রাস্তার দু’পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকত, তাহলে এমনটা হতো না।
মোটরসাইকল চালক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি এই রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করি। বারৈচা-রায়পুরা সড়কের মাথায় খানাখন্দে ভরা, এখান দিয়ে মোটরসাইকল চালানো ঝুঁকিপূর্ণ।’
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় চরউজিলাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম সম্রাটের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, দুইবার সড়ক ও জনপথ থেকে ইটের সলিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
নরসিংদী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল ইসলাম বলেন, বেলাব উপজেলার বারৈচা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য দরপত্র হয়েছে। মাসখানেকের মধ্যে কাজ শুরু হবে। বর্তমান সমস্যা সমাধানের জন্য অস্থায়ীভাবে সংস্কারকাজ করা হবে দু-একদিনের মধ্যেই।

আরও পড়ুন

×