ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ভেজাল মসলায় সয়লাব বাদাঘাট বাজার

ভেজাল মসলায় সয়লাব বাদাঘাট বাজার

তাহিরপুরের বাদাঘাট বাজারের হান্নানের কারখানায় তৈরি হচ্ছে ভেজাল মসলা সমকাল

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৪ | ২৩:৩১

ভেজাল ও নিম্নমানের মসলায় সয়লাব তাহিরপুর উপজেলার বৃহৎ হাট বাদাঘাট বাজার। নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব মসলা তৈরি করা হচ্ছে ইট, অটো মিলের কুঁড়া ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে।
সেগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে। বিভিন্ন দোকানপাটে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি হচ্ছে এসব মসলা।
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি চক্র এই ভেজাল মসলা প্রস্তুত ও বিক্রিতে তৎপরতা বাড়িয়েছে। এতে করে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় অনেক ক্রেতা।
তাহিরপুর উপজেলার পাইকারি হাট হচ্ছে বাদাঘাট বাজার। সেখান থেকেই বিভিন্ন হাটবাজারের পাইকাররা মসলা কিনে উপজেলার সবক’টি হাটবাজারে খুচরা ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করেন। সেখান থেকে এ মসলা কেনেন ভোক্তারা। ঈদ সামনে রেখে দোকানে দোকানে পৌঁছে গেছে এসব ভেজাল ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মসলা। এসব মসলার মধ্যে মরিচের সঙ্গে ইটের গুঁড়া, হলুদে মটর ডাল, ধনিয়ায় স’মিলের কাঠের গুঁড়া ও পোস্তদানায় সুজি মেশানো হচ্ছে। বেশি লাভের আশায় বাদাঘাট বাজারের মসলা ভাঙানোর মিলগুলো এসব ভেজাল মসলার জোগান দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বাজার পর্যায়ের একটি বড় সিন্ডিকেট। অসাধু দোকানদাররাও বেশি লাভের আশায় এসব ভেজাল মসলা বেশি বিক্রি করছে।

৭ জুন বাদাঘাট বাজারের আহাদ উল্লাহ নামের এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেজাল মসলার ছবি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেন, ‘বাদাঘাট বাজারের মসলা বানানোর কারখানা। কাঠের গুঁড়া, অটোর কুঁড়া আর সঙ্গে দিচ্ছে লাল রঙের কেমিক্যাল। সঙ্গে অল্প কিছু মরিচ। সব একসঙ্গে মিশিয়ে এগুলো মেলিং করে বাজারজাত করানো হয়। আর সাধারণ মানুষ এগুলো বাজার থেকে কিনে খায়। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এগুলো যেন একটু নজরে দেন। মানুষকে কীভাবে বোকা বানানো হয়, তা আমি আজ নিজ চোখে দেখলাম।’ তাঁর এ লেখা সেদিন সন্ধ্যায় পোস্ট করার পর ভাইরাল হয়। এক পর্যায়ে সেটি স্থানীয়দের মুখে মুখে আলোচিত হয়। সচেতন মহল এমন অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও তোলে।

তাহিরপুর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মকবুল হোসেন জানান, বাদাঘাট বাজারের মসলা মিলগুলো ভেজাল মসলা তৈরি করছে। অনেকেই তাঁর কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তিনি সরেজমিনে ব্যবস্থা নেবেন।
তবে ভোক্তাদের অভিযোগ থাকলেও এ ব্যাপারে বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাদাঘাট বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সেলিম হায়দার বলেন, ‘ভেজাল মসলা তৈরির ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে মসলা ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নানের মিল ঘরে আমরা যাই। হান্নানের বাড়ি উত্তর ইউনিয়নের বারহাল গ্রামে। তবে সেখানে আমাদের যাওয়ার খবর পেয়েই সে সবকিছু সরিয়ে ফেলে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বাজারের ব্যবসায়ীরা তার পণ্য কিনে এই অবৈধ কাজে সহায়তা দেবে না। ভবিষ্যতে এমন কাজ করলে হান্নানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং তাকে পুলিশে হস্তান্তর করা হবে।’

আরও পড়ুন

×