অতিবর্ষণে শসা ক্ষেতের সর্বনাশ

সাদুল্লাপুরের বকশীগঞ্জ এলাকায় বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত শসাক্ষেত সমকাল
সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪ | ০০:১৭
সাদুল্লাপুর বাজারে প্রায় ২০ দিন আগেও প্রতি কেজি শসা বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়। সেই শসা এখন ১০০ টাকায়ও মিলছে না। এর কারণ, শসার উৎপাদন কমায় বাড়তি দামেও পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। অতিবৃষ্টির কারণে পানি জমেছে অনেক উচুঁ-নিচু স্থানে। মাটি ভিজে কর্দমাক্ত হওয়ায় গোড়া পচে মারা যাচ্ছে শসা গাছ। তাতে মৌসুমের শেষ সময়ের শসা উৎপাদনের আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক। এ অবস্থার কারণে আমন রোপণের ক্ষেত্রে আর্থিক সংকটে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমের শসা উৎপাদনের শেষ সময় চলছে। এখন শুরু হবে আমন রোপণ মৌসুম। বেশি পরিমাণে বৃষ্টি না হলে আরও কিছু দিন ক্ষেত থেকে শসা উত্তোলন করতে পারতেন কৃষক। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হতেন তারা। তাই এখন থেকে কৃষকদের তুলনামূলক উঁচু জমিতে শসা চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আগাম শসা রোপণ করলে বৃষ্টি কিংবা বন্যায় ক্ষতি কম হবে। শসাক্ষেত থেকে দ্রুত পানি নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সাদুল্লাপুরের ১৭০ হেক্টর জমিতে শসা চাষ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে কৃষি অফিস। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার টন।
ইসলামপুর গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘একদিন পরপরই ক্ষেত থেকে শসা উত্তোলন করতে হয়। তুলতে একটু দেরি হলে পেকে যায় শসা। কিন্তু বৃষ্টি শুরু হওয়ায় শসা উৎপাদনে ভাটা পড়েছে। মারা যাচ্ছে শসা গাছ। অধিকাংশ কৃষকেরই শসাক্ষেত নষ্ট হয়েছে।’
গত ১৫ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত সাদুল্লাপুরে ১৯৬ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া। তাই শসা গাছের গোড়ায় অতিরিক্ত পানি জমে দ্রুত মারা গেছে। এই কর্মকর্তা বলেন, মৌসুমের শেষ সময়ে এই বৃষ্টি না হলে আরও কিছু দিন ক্ষেত থেকে শসা উত্তোলন করতে পারতেন কৃষক।
সাদুল্লাপুর বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন জানান, তিন সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি শসা বিক্রি করেছেন ৩০ টাকায়। আর রোববার ১০০ টাকা কেজিতেও শসা মিলছে না। আড়তে শসা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গ্রাহকের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।
আড়তদার আব্দুল মালেক বলেন, কয়েকদিন ধরে শসা আমদানি নেই। বৃষ্টির কারণে শসা উৎপাদন হচ্ছে না। কৃষক বলছেন গাছ মারা গেছে।
বৃষ্টি কিংবা বন্যার পানিতে ক্ষতির কবল থেকে বাঁচতে আগামী মৌসুমে আরও আগে শসা চাষের পরিকল্পনা করতে হবে বলে জানান উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুর রব সরকার। তাঁর ভাষ্য, তুলনামূলক উঁচু জমিতে শসা উৎপাদন ভালো হয়। এর সঙ্গে শসাক্ষেত থেকে বাড়তি (বৃষ্টি অথবা বন্যার) পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। শসা গাছ সবসময় পরিচর্যায় রাখলে উৎপাদন ভালো হয়। তাতে লাভবান হবেন কৃষক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, অতিবর্ষণে এবার গ্রীষ্মকালীন শসা ও মরিচক্ষেত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষককে আগাম আমন ধান রোপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
- বিষয় :
- শসা