ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

বৈরী আবহাওয়ায় উৎপাদন কমেছে, দামেও হতাশা

বৈরী আবহাওয়ায় উৎপাদন কমেছে, দামেও হতাশা

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার খোলাবাড়ী এলাকায় ভ্যানে করে পাট বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন এক কৃষক সমকাল

রাজ্জাক মিকা, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর)

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪ | ০০:৫৭

এ বছর বাজারে পাটের দাম একেবারে কম। অন্য বছর ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এবার প্রতি মণে পাওয়া যাচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা। বাজারে পাটের চাহিদা নেই। সিন্ডিকেটের কারণে এবার এ অবস্থা। পাট চাষ করে কোনো চাষির উৎপাদন খরচ উঠবে না। সবাইকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। কথাগুলো বলছিলেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামের পাটচাষি মকবুল হোসেন মলু।
দেওয়ানগঞ্জে মৌসুমের শুরুতে খরা, আগাম বন্যা, বৈরী আবহাওয়া ও বাজারে দাম না থাকায় লোকসান গুনছেন মকবুলের মতো অনেক পাটচাষি। তারা বলছেন, এ ফসলের আবাদ করে খরচ না ওঠায় লোকসান গুনছেন সবাই। এ অঞ্চলে অন্তত আট হাজার পাটচাষি রয়েছেন। বন্যার কারণে প্রায় অর্ধেক পাট ক্ষেতেই নষ্ট হয়েছে। আর যে ফসল টিকেছে, তারও ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে এ অঞ্চলে বাজার নেমে গেছে। লোকসান জেনেও বাধ্য হয়ে বিক্রি করছেন তারা।
এ বছর চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের আবদুর রউফ। এতে খরচ হয়েছিল ৪০ হাজার টাকা। বৈরী আবহাওয়া ও আগাম বন্যার কারণে পাট পেয়েছেন ২০ মণ। এতে কোনোমতে খরচ উঠে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, কারও কারও ক্ষেতের পাট নষ্ট হয়েছে খরায় পুড়ে। তাদের উৎপাদন ব্যয় উঠবে না।
চলতি বছরে উপজেলায় ৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কৃষি অফিস। তবে প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ২ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির উঠতি পাট আগাম বন্যার পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। বাকি ১ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদন করেছেন অন্তত ৮ হাজার কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে তীব্র খরায় অনেক ক্ষেতের পাটগাছ পুড়ে যায়। এসব জমিতে চাষিরা দ্বিতীয়বার এ ফসলের আবাদ করেননি। এ কারণে মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। অনেক চাষি কৃত্রিম উপায়ে পানিসেচ দিয়ে প্রাথমিকভাবে আবাদ করেছেন। এতে বাড়তি শ্রমের পাশাপাশি ব্যয় বেড়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে বাজারও পড়ে গেছে। এখন বাজারে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ পাট। উন্নতমানের গুলোর দাম ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। তবে বাজারে ন্যায্যমূল্য পেলে লোকসান গুনতে হতো না বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
উপজেলার পাথরেরচর গ্রামের আবদুল জব্বারের ভাষ্য, তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন তিনি। ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার টাকা। খরার কারণে এক বিঘা জমির ফসল পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। বাকি দুই বিঘা জমিতে উৎপাদন হয়েছে ১০ মণ। বাজারে দাম না থাকায় উৎপাদন ব্যয় ওঠেনি তাঁর। বাধ্য হয়ে লোকসানে বিক্রি করতে হয়েছে।
সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন উপজেলার পোল্যাকান্দি গ্রামের আনিছুর রহমান। তাঁর খরচ হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা। বন্যায় দেড় বিঘা জমির ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। বাকি আড়াই বিঘায় পাট উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১১ মণ। তিনি বলেন, দাম না থাকায় পাট বিক্রি করে খরচ ওঠেনি। দামের আশায় শেষ দিকে বিক্রি করেও লোকসান গুনতে হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর আজাদ বলেন, এ বছর পাটের ফলন ভালো হয়নি। খরায় ফসল পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা। যে পাট উৎপাদন হয়েছে, তার মানও ভালো নয়। দাম না থাকায় বেশির ভাগ চাষির খরচ উঠবে না। অনেকের ভালো পাট থাকা সত্ত্বেও ভালো দাম পাচ্ছেন না।

 

আরও পড়ুন

×