কুষ্টিয়া
পুলিশ হত্যা মামলায় ‘পুরুষশূন্য’ জেলেপাড়ায় লুটপাটের অভিযোগ, গুলিবিদ্ধ ১

কুষ্টিয়ায় পুলিশ হত্যা মামলায় ‘পুরুষশূন্য’ জেলেপাড়ায় নারী ও শিশুরা। ছবি: সমকাল
কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৪ | ১৮:১৩
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তরুণ শেখ (৪৮) নামে এক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গত বুধবার মধ্যরাতে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বেড় কালোয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যবসায়ী ওই এলাকার মৃত মোশাররফ শেখের ছেলে। বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে গুলির ঘটনা নিয়ে মিশ্র বক্তব্য পাওয়া গেছে।
আহত তরুণ শেখ অভিযোগ করে বলেন, আমাদের পাড়ায় জেলেপাড়ার লোকজন আশ্রয় নিয়েছে। এমন অভিযোগে কয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আব্দুলের খালেকের ছেলে রিপন, শিপন ও স্থানীয় দুষ্কৃতকারী লিটনসহ ৬-৭জন আমার বাড়িতে রাত আড়াইটার দিকে ঢুকে। এ সময় বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে আমার পায়ে ও হাতে কয়েক রাউন্ড গুলি করে দ্রুত চলে যায়। আমি থানায় বিচার চেয়ে মামলা করব।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে রিপন ও শিপন বলেন, একটি মামলায় দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কেউ জেলে ছিল, কেউ পালিয়ে ছিল। গত বুধবার আদালত থেকে জামিন নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছি। রাতে দুই রাউন্ড গুলির শব্দ শুনেছি। তবে আমরা কেউ এ ঘটনায় জড়িত নয়।
আর পুলিশের দাবি, রাতে আসামি ধরতে গেলে স্থানীয় লোকজন পুলিশের কাজে বাঁধা দেয় এবং আক্রমণ করে। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ দুই রাউন্ড ফাঁকা রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে আসামি নিয়ে চলে আসে। এ ঘটনায় কেউ আহত আছে কি না, তা জানা নেই পুলিশের।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, তরুণ শেখ নামের এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার বাম হাতের কব্জির ওপরে এবং বাম পায়ের হাঁটুর নিচে গুলি লেগেছে। অস্ত্রোপচার করে দুটি গুলি বের করা হয়েছে। এখন তিনি শঙ্কামুক্ত।
এদিকে গত সোমবার পদ্মা নদীতে কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যার অভিযোগে কুমারখালী থানায় একটি মামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টায় কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২০–২৫ জনকে। মামলায় কয়েকজন জেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পলাতক রয়েছেন কয়া ইউনিয়নের বেড় কালোয়া এলাকার জেলেপাড়ার পুরুষরা।
সেই সুযোগে তাদের বাড়িতে থাকা জাল, টিউবওয়েল, মাছ ধরার অন্যান্য সামগ্রী ও নৌকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে কয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আব্দুলের খালেক, তার ছেলে রিপন ও শিপনসহ তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীপাড়ে অবস্থিত জেলেপাড়ায় সুনসান নীরবতা। কোনো পুরুষ লোক নেই। আতঙ্কিত নারীরা নদীপাড়ে জড়ো হয়ে আছেন।
এ সময় জেলে রাজুর স্ত্রী লাবনী খাতুন বলেন, মেম্বার গ্রুপের সঙ্গে জেলেপাড়ার নেতা ইয়ারুলের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। সম্প্রতি পুলিশের মামলায় জেলেপাড়ার সকল পুরুষ পালিয়েছে। অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। সেই সুযোগে খালেক মেম্বর, তার ছেলে রিপন ও শিপনসহ ২০-৩০ জন লোকজন বার বার জেলেপাড়ায় এসে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। মেয়েদের মারধর করছে। জাল, নৌকা ও টিউবওয়েল লুট করে নিয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে অজ্ঞাত স্থান থেকে ফোনে বলেন, মেম্বরের লোকজন তার জাল ও নৌকা নিয়ে গেছে। সব বাড়িতেই লুটপাট করছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আব্দুল খালেক মেম্বারের বাড়িতে ২০-৩০ জন লোকের সমাগম। তবে মেম্বার বাড়িতে নেই।
এ সময় সকল অভিযোগ অস্বীকার করে মেম্বারের ছেলে রিপন বলেন, আমি গতকাল (বুধবার) জামিনে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছি। আমি বা আমার লোকজন জেলেপাড়ায় যাই না। পূর্ব শত্রুতার জেরে তারা মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
এ বিষয়ে জানতে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের সরকারি নম্বরে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
পদ্মায় পুলিশ হত্যা মামলার তদন্ত করছেন নৌ পুলিশ বলে জানান কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপারেশন ও মিডিয়া) পলাশ কান্তি নাথ। তিনি বলেন, রাতে আসামি ধরতে গেলে স্থানীয় লোকজন পুলিশের কাজে বাঁধা দেন এবং আক্রমণ করে। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ দুই রাউন্ড ফাঁকা রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে আসামি নিয়ে চলে আসে। এ ঘটনায় কেউ আহত আছে কি না, তা জানা নেই পুলিশের। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- কুষ্টিয়া
- পুলিশ হত্যা
- মামলা