চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা
আজও কর্মবিরতি, খুনিদের বিচার চেয়ে মিছিল-মানববন্ধন

আদালতপাড়ার আইনজীবী সমিতি ভবনের নিচে মানববন্ধন করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। ছবি: সমকাল
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪ | ১৮:৩৮
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেছেন আইনজীবীরা। কর্মবিরতির কারণে ৭৪টি আদালতে বিচারিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়নি। আদালতপাড়ায় খুনিদের বিচার চেয়ে মিছিল ও মানববন্ধন করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামসহ কয়েকটি সংগঠন। তারা আসামিদের পক্ষে না দাঁড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছেন। ইসকন নিষিদ্ধ করতে স্লোগান দেন আইনজীবীরা। ওই দিনের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী।
আজ বৃহস্পতিবার আদালতপাড়ার আইনজীবী সমিতি ভবনের নিচে মানববন্ধন করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এখানে জেলা আইনজীবী সমিতির শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখেন। একই দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম ‘ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুল সংখ্যাক আইনজীবী অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশরাফ হোসেন চৌধুরী, ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট চট্টগ্রামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট চট্টগ্রামের কো-কনভেনার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শামসুল আলম প্রমুখ।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শোকাহত ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কঠিন সময় পার করছি। অতীতে চট্টগ্রামের আদালত অঙ্গন ও আশেপাশে এ ধরনের ঘটনা আগে হয়নি। গত পরশু ইসকনের এক সন্ত্রাসী নেতাকে গ্রেপ্তার করে তাকে আদালতে তোলার পর বিজ্ঞ আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন। প্রিজন ভ্যানে তোলার পর ইসকন সমর্থিত সন্ত্রাসীরা ভ্যানটি ঘেরাও করে আদালত অঙ্গনে উল্লাস করেছে। আমরা পুলিশকে নিষ্ক্রিয় দেখেছি। নিরাপদ স্থানে দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। এটার পেছনে পুলিশের ইন্ধন আছে বলে আমরা মনে করি। আইনজীবী আলিফকে হত্যার সময়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে পর্যাপ্ত পুলিশ, আর্মি, বিজিবি ছিল। কিন্তু তাদের কেন কেন ডাকা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন রেখেছেন আইনজীবী এই নেতা।
পুলিশ কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে আইনজীবী নেতা নাজিম উদ্দিন বলেন, চিন্ময় দাসের হাতে হ্যান্ডমাইক কিভাবে গেল, এর জবাব দিতে হবে। না হলে পুলিশ কমিশনার চট্টগ্রাম থাকতে পারবেন না। আমরা পুলিশ কমিশনারকে চাই না। জুলাই ৩৬-এ অনেক রক্ত গিয়েছে। অনেকে শহীদ হয়েছেন। তাদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা যাবে না। আমরা সব জানি, চিনি। পুলিশ প্রশাসন এখনো বসে আছে। আপনাদের হুঁশিয়ার করছি, আপনারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করুন। আমরা গিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে ফেলবো না হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজুর রহমান বলেন, আদালতের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দ্বিতীয় দিনের মতো মামলার শুনানি হচ্ছে না। চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বেঞ্চ সহকারী মো. কফিল উদ্দীন বলেন, আমাদের ট্রাইব্যুনালে বৃহস্পতিবার কোনো মামলার শুনানি হয়নি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ‘ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাফর ইকবাল বলেন, কোর্ট বিল্ডিংয়ের ১৮৬ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনা এটি। আমার ভাইয়ের রক্তে আজ আমাদের ক্যাম্পাস লাল হয়ে গেছে। আমরা মানুষকে ইনসাফ দিই, অথচ আমরা আজ বে-ইনসাফের শিকার হয়েছি। আসামিদের পক্ষে আমরা দাঁড়াবো না।
এদিকে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে জেলা আইনজীবী সমিতির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দ্বিতীয় দিনের মতো আইনজীবী সমিতির পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হত্যার প্রতিবাদে ছয়টি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সিদ্ধান্তগুলো হলো- সমিতির পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালোব্যাজ ধারণ, কর্মবিরতি, আইনজীবী আলিফের আত্মার মাগফেরাত কামনায় কোর্ট হিল জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং একইদিনের অবকাশকালীন প্রীতি সমাবেশে বাতিল। এছাড়া ১ ডিসেম্বর দুপুর ২টায় আইনজীবী দোয়েল ভবনের সম্মুখ থেকে শোক মিছিল অনুষ্ঠিত হবে এবং সমিতির বার্ষিক ইনডোর গেইমস স্থগিত থাকবে।
- বিষয় :
- চট্টগ্রাম
- আইনজীবীর মৃত্যু