নির্মিত হবে বহুতল ভবন
চট্টগ্রামে পাহাড়ি মাটিতে শতবর্ষী পুকুর ভরাট
মহানগরে জলাধার সংকট, এক যুগে হাওয়া ২৪ হাজার

চট্টগ্রাম নগরীর ওয়্যারলেস মোড়ে ১৯৫২ সালে মুসল্লিদের ওজু করার জন্য পুকুরটি খনন করা হয়েছিল। ডোবা দেখিয়ে সেটি ভরাট করা হচ্ছে। তৈরি হবে বহুতল ভবন। মঙ্গলবার তোলা -মো.রাশেদ
আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ | ০১:১৪ | আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৬:৫৪
চট্টগ্রাম নগরে এক যুগে হারিয়ে গেছে প্রায় ২৪ হাজার জলাধার। খুলশী ওয়্যারলেস কলোনির পুরোনো জামে মসজিদসংলগ্ন শতবর্ষী পুকুরে নজর পড়েছে প্রভাবশালী চক্রের। রাতে পাহাড়ি এলাকা থেকে মাটি এনে ৬১ শতাংশের দুই পাশ ভরাট করছে সিএ প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (সিপিডিএল)। এখানে হবে হাউজিং। সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তরের তিন সদস্যের টিম সরেজমিন সত্যতা পেয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। একই সঙ্গে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে সিপিডিএলকে।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিদর্শক সাখওয়াত হোসেন বলেন, নোটিশের জবাব ও শুনানিতে হাজির হতে সময় চেয়েছে সিপিডিএল। ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। জবাব সন্তোষজনক না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নগরের ওয়্যারলেস কলোনির জামে মসজিদসংলগ্ন পুকুর ও এর চার পাশে ১০১ শতাংশ জমি রয়েছে। মালিক নুর নাহার বেগম ও মসুদা বেগম। কয়েক বছর আগেও পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ হতো। কিন্তু এখন পতিত। জমিটি ডেভেলপার কোম্পানি সিপিডিএল কিনে নেয়। তারা হাউজিং করার পরিকল্পনা থেকে বৈদ্যুতিক মোটরের মাধ্যমে পানি অপসারণ করে। এর পর শুরু করে ভরাটের কাজ।
বিএস খতিয়ান অনুযায়ী পুকুর ৬১ শতক জমিতে। ২০ শতক বাড়ি ও ২০ শতক নাল জমি। সপ্তাহখানেক হলো রাতে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা থেকে হলুদ ও কালো মাটি এনে পুকুরের দুই পাশের বিশাল অংশ ভরাট করা হয়েছে। সরেজমিন এক্সক্যাভেটরের মাধ্যমে মাটি সমান করতে দেখা যায়। সিপিডিএলের তত্ত্বাবধায়ক মো. রাশেদ জানান, জায়গাটি কেনার পর হাউজিং করার জন্য তাদের কোম্পানি ভরাট করছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন এসে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। তবে পুকুর ভরাটের অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিডিএল কর্মকর্তা হাসিব রশিদ বলেন, ‘আমাদের কেনা জমিতে দৃশ্যমান কোনো পুকুর নেই। আমরা কোনো পুকুর ভরাট করছি না। জমিটি ডোবার মতো ছিল, তা ভরাট করা হচ্ছিল।’ তিনি বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর নোটিশ দিয়েছে। আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাব দেব। হাউজিং নয়, খেলার জন্য কৃত্রিম টার্ফ তৈরি করা হবে।’
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর পরিদর্শক মনির হোসেন বলেন, ‘পুকুর ভরাট করে কোনো স্থাপনা কিংবা অবকাঠামো করার সুযোগ নেই। নোটিশ করলেও শুনানিতে হাজির হয়নি সিপিডিএল। সময় চেয়েছে তারা। সহযোগিতা না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয় ওয়্যারলেস কলোনির বাসিন্দা সিদ্দিকুল আলম বলেন, ‘ছোটবেলা পুকুরটিতে অনেক সাঁতার কেটেছি। শুধু অর্থের লোভে স্মৃতিময় পুকুর নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। গত বছর এ পুকুরের পানির কারণে আগুন সর্বগ্রাসী হতে পারেনি। কয়েক বছরের মধ্যে বিশাল ভবন হবে। কেউ বিশ্বাসই করবে না এখানে পুকুর ছিল। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয়, ভবিষ্যতে আগুন লাগলে কী হবে, একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।’
- বিষয় :
- পুকুর ভরাট