ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

দেড় যুগ ধরে পড়ে আছে চারটি উৎপাদকের বাজার

দেড় যুগ ধরে পড়ে আছে চারটি উৎপাদকের বাজার

নীলফামারী পৌরসভায় কৃষকদের জন্য নির্মিত পাইকারি বাজারে ব্যক্তি পর্যায়ে ইজারার মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে ফার্নিচার সমকাল

নীলফামারী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫ | ০০:৫৮

নীলফামারীতে প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চারটি উৎপাদকের বাজার বা গ্রোয়ার্স মার্কেট ও একটি পাইকারি  মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ এসব মার্কেট এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনই করা হয়নি। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে এসব অবকাঠামো ফেলে রাখায় প্রান্তিক কৃষকের কোনো কাজে আসছে না। 

২০০৭-০৮ অর্থবছরে ‘উত্তর-পশ্চিম শস্য বহুমুখীকরণ (এনসিডিপি)’ প্রকল্পের আওতায় নীলফামারী জেলা সদরসহ সৈয়দপুর, কিশোরগঞ্জ ও ডোমারে গ্রোয়ার্স মার্কেট ও একটি হোলসেল মার্কেট নির্মাণ করা হয়। সরকারি খাস জমিতে এসব মার্কেট নির্মাণে ব্যয় হয় আড়াই কোটি টাকা। অর্থায়ন করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহায়তায় বাস্তবায়ন করে এলজিইডি। এসব মার্কেটে প্যাকিং হাউস, গ্রেডিং, শর্টিং, ওয়াশিং, ড্রাইং ইউনিট, লোডিং, আনলোডিং এরিয়া,  গোডাউন, নারী কর্নার, বাজার কমিটির কার্যালয়, ট্রেনিং সেন্টার, স্যানিটারি ল্যাট্রিনসহ ড্রেন, রাস্তা ও ডাস্টবিন নির্মাণ করা হয়। 
এক থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য এসব মার্কেটে আনার কথা ছিল। অথচ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থেকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অবকাঠামোতে ফাটল, দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়াসহ দরজা-জানালার গ্রিল ভেঙে গেছে। কিছু অংশ অবৈধ দখলদারদের দখলে ব্যক্তিলাভে ব্যবহার হচ্ছে। আর হোলসেল মার্কেটটি পৌরসভা ইজারা দিচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, জেলার চারটি গ্রোয়ার্স মার্কেটের মধ্যে তিনটিতে কোনোদিন হাটই বসেনি। এমনিক আশপাশের কৃষকরাই জানেন না, তাদের জন্য এটি করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ডোমার গ্রোয়ার্স মার্কেটে ধানের মৌসুমে কয়েকজন পাইকার ধান কেনেন। বাকি সময় থাকে পরিত্যক্ত। এ ছাড়া সৈয়দপুরের চিকলী বাজারের গ্রোয়ার্স মার্কেট চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের হাতে। 
হোলসেল মার্কেটটি এখন পৌরসভার দখলে। গত সরকারের আমলে নীলফামারী পৌরসভা নিয়মবহির্ভূতভাবে ছয় বছর ধরে ইজারার মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়। সর্বশেষ ২ লাখ টাকা দিয়ে বরাদ্দ নিয়েছেন সদরের নতুন বাজার এলাকার আব্দুর রশিদ নামে একজন ব্যবসায়ী। তিনি সেখানে সপ্তাহে দু’দিন কাঠের ফার্নিচারের ও দু’দিন বাঁশের হাট বসান। আব্দুর রশিদ জানান, এর আগের বছরেও তিনি বরাদ্দ পেয়েছিলেন। গত ছয় বছর থেকে মার্কেটটি এভাবে বরাদ্দ দিচ্ছে পৌরসভা।   

জেলার বড় পাইকারি আড়ত বিসমিল্লাহ সবজি মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মোকছুদ আলম গোল্ডেন বলেন, গ্রোয়ার্স মার্কেটের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকদের  উৎপাদিত ফসল সরাসরি বড় পাইকারদের কাছে বিক্রির কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজে আসেনি। তিনি মার্কেটগুলো চালুর দাবি জানান।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম জানান, তিনি এ ব্যাপরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে। মার্কেটগুলো সংস্কার করে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
গ্রোয়ার্স মার্কেট সম্পর্কে জানতেনই না সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই-আলম সিদ্দিকী। অথচ পদাধিকার বলে তিনি এ মার্কেটের সভাপতি।  জানার পর তিনি বলেছেন, মার্কেট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। মার্কেটের ইজারা সম্পর্কেও কিছু জানেন না নীলফামারী পৌরসভার পৌর প্রশাসক সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, যেহেতু প্রশাসকের দায়িত্বে তিনি নতুন, তাই বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম হলে, সামনের বছর থেকে আর দেওয়া হবে না। 

আরও পড়ুন

×