তীব্র গরমে জনশূন্য ব্যস্ততম নগরী ময়মনসিংহ

নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকাগুলো জনশূন্য হয়ে গেছে। ছবি: সমকাল
নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৫ | ১৯:২২
তীব্র রোদ আর প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ময়মনসিংহ নগরীর জনজীবন। বৃষ্টি না হওয়ায় গরমের মাত্রা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকাগুলো জনশূন্য হয়ে গেছে। খুব বেশি দরকার না হলে ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউই।
তীব্র গরমে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। রাস্তায় রিকশা-ইজিবাইক নিয়ে যারা বের হয়েছেন তারা ঘেমে একাকার হয়ে গেছেন। আবার বাইরে লোক না থাকায় ঠিকমতো ভাড়াও পাচ্ছেন না তারা।
আজ শুক্রবার তীব্র গরম পড়ায় রাস্তার পাশে ফুটপাথের ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে। মূল নগরীতে গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় একটু স্বস্তি পেতে উঁচু ভবনের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকেই।
দুপুরের দিকে নগরীর শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ মোড়, গাঙ্গিনাপাড়, নতুন বাজার, জেলা স্কুল মোড়, চরপাড়া মোড়, সানকিপাড়া, টাউন হল মোড়, কাচিঝুলি মোড় ও বাইপাস মোড়ে গিয়ে দেখা যায় রাস্তাঘাট একেবারেই জনশূন্য। নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা গাঙ্গিনারপাড়। দুপুর আড়াইটায় এলাকাটিতে দেখা যায়, সড়কজুড়ে নেই চিরাচরিত যানজট।
সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ নগরীতে মোট ১২ হাজার লাইসেন্সধারী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। তবে এর বাইরেও কয়েক হাজার লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশা আছে। ফলে সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে।
শুক্রবার তীব্র দাবদাহে এসব এলাকা প্রায় জনশূন্য দেখা গেছে। পুরো গাংগিনারপাড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র ৪-৫টি অটোরিকশা চলাচল করছে। তবে অধিকাংশ রিকশাই ফাকা। এই এলাকায় কোনো গাছপালা না থাকায় কয়েকজন রিকশাচালক ও পথচারী বড় বিল্ডিংয়ের নিচে ছায়ায় দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় চড়পাড়া মোড়ে সারাদিন প্রচণ্ড যানজট থাকে। শুক্রবার দুপুর ৩টায় কথা হয় রিকশাচালক রুহুল আমিনের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রচণ্ড গরমে হাসফাঁস অবস্থা। রাস্তায় খুব একটা যাত্রী নেই। সকাল ৮টায় বের হয়েছি। এতো গরম না থাকলে প্রতিদিন দুপুরে খাবারের আগে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজগার হয়। কিন্তু আজকে এখন পর্যন্ত ২৩০ টাকা পেয়েছি। রোদ কমলে হয়তো কিছু টাকা ভাড়া পাওয়া যাবে। এই টাকা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে যাবে।
নতুন বাজার এলাকায় অটো রিকশাচালক ষাটোর্ধ মোসলেম উদ্দিন জানান, প্রতিদিন খরচসহ গাড়ির আমদানি দিতে হয় ৮০০ টাকা। গরমের কারণে আজ শহরে যাত্রী নেই। এখন পর্যন্ত ৫০০ টাকা ভাড়া পেয়েছি। সারাদিনের আরো ১০০০ টাকা ইনকাম করতে না পারলে মালিককে কী দেব আর নিজেই কী নিব?
জুম্মার নামাজ শেষে বাস সিন্ডিকেট জামে মসজিদের সামনে সমকালের সাথে কথা হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদের। নামাজ শেষ করেই তড়িঘড়ি করে বাসায় চলে যাচ্ছেন তিনি। তিনি জানান, ভেবেছিলাম শুক্রবার ছুটির দিনে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে একটু বাইরে ঘোরাফেরা করব। কিছু কেনাকাটাও করতে চেয়েছিলাম। এখন দেখি প্রচণ্ড গরমে নিজেই বাইরে টিকতে পারছি না। তাই আজকে আর স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাসা থেকে বের হবো না। ঘোরাফেরার প্রোগ্রাম বাদ দিয়ে আমি নিজেই এখন বাসায় চলে যাচ্ছি।
হাসপাতাল গেটের সামনে নান্দাইলের মাহির ইবন বলেন, বাসায় অসুস্থ রোগী তাই বাড়ি থেকে ওষুধ কিনতে বের হয়েছি। রাস্তায় মোটরসাইকেল রেখে ১০ মিনিটের জন্য ফার্মেসিতে এসেছি। ওষুধ কেনা শেষ করে দেখি মোটরসাইকেলের ওপর আর বসা যাচ্ছে না।
এদিকে প্রচণ্ড গরমে রাস্তার পাশের ফুটপাতের বিভিন্ন ধরনের জুসের দোকানে হালকা ভিড় দেখা গেছে। পথচারীদের গরমে ক্লান্ত হয়ে আখ ও লেবুর শরবত খেতে দেখা গেছে। শরবতের দোকানদাররা বলছেন, দুপুরের পর থেকে গরম বাড়ছে। বিকেল বেলা বেচাকেনা আর একটু বেশি হবে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত তিনদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে না ময়মনসিংহে। সর্বশেষ ৬ মে ৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এর আগে ৪ মে শূন্য দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এখন পর্যন্ত মে মাসে মাত্র দুইদিন অল্প বৃষ্টিপাত হওয়ায় গরম বেড়েছে বলে জানান তারা।
শুক্রবার দুপুর তিনটায় এ মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাসের শুরুতে ১ তারিখে তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বশেষ মঙ্গলবারের পর আর কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আজ সর্বোচ্চ গরম পড়েছে বলে জানান আবহাওয়া অফিস ময়মনসিংহের উচ্চ পর্যবেক্ষক মো. মনিরুজ্জামান।
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খান সমকালকে বলেন, অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া যারা আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তারা গরমে দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময়ে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, হিটস্ট্রোক, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের এ সময় নিরাপদে রাখতে হবে। তাছাড়া যারা কর্মজীবী মানুষ তারা ভর দুপুরে অতিরিক্ত গরমে এড়িয়ে সকালে ও বিকেলে কাজ করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, এই গরমে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করা বাদ দিয়ে নরমাল পানি কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে অল্প অল্প করে বারবার খেতে হবে। যেকোনো ধরনের সফট ড্রিংক এবং আইসক্রিম জাতীয় খাবার পরিহার করে ডাবের পানি, দেশি ফলমূল খেতে হবে। পোলাও মাংস এবং অন্যান্য রিচ ফুড এই গরমে সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে। যারা হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হবেন তাদেরকে দ্রুত ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে। সুস্থ না হলে তাকে স্যালাইন দিতে হবে এবং দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।