ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

বিহঙ্গ

পরিযায়ী পাখি ১৭ রঙের শুমচা

পরিযায়ী পাখি ১৭ রঙের শুমচা

খয়েরি মাথা শুমচা। খুলনার রূপসা এলাকা থেকে তোলা তুহিন ওয়াদুদ

স্বপন চৌধুরী, রংপুর

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৫ | ০০:৩৯ | আপডেট: ১৩ জুন ২০২৫ | ১১:৩৮

খয়েরি মাথা শুমচা বা হালতি। গ্রীষ্মের দুর্লভ পরিযায়ী পাখিটির শরীরজুড়ে রঙের বাহার। খুলনা-বাগেরহাট অঞ্চলের কিছু স্থান ও চট্টগ্রামের হাজারিখিল বনে শুমচার দেখা মেলে। প্রজননকালে এরা ঘন গাছগাছালিতে সমৃদ্ধ এলাকায় আসে। পুরো বর্ষা কাটিয়ে চলে যায় অন্য বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চলে।

লাল, কালো, খয়েরি, নীল, সবুজ, সাদাসহ ১৭টি রং শুমচার শরীরে। তারা আকাশে ওড়াউড়ি করলে মনে হয় ঠিকরে পড়ছে রংধনুর আভা। সাধারণত ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা থেকে আমাদের দেশে শুমচা প্রজাতির পাখি আসে।

পিট্টিডি পরিবারভুক্ত পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম পিট্টা ম্যাগারিনকা। খুলনার রূপসার একটি গ্রাম থেকে সম্প্রতি খয়েরি মাথা শুমচার ছবি তুলেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি জানান, রূপসার গ্রামটি গাছগাছালিতে পূর্ণ। পাখিটি খাওয়ার জন্য মাটিতে নেমে এলে ছবিটি তোলা হয়। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালের কিছুদিন শুমচা বাংলাদেশে থাকে। এখন খয়েরি মাথা শুমচার দেখা মেলা ভার।

পাখি গবেষক শরীফ খান এক প্রবন্ধে লিখেছেন, শুমচার শরীরে মোট ১৭টি রঙের আশ্চর্য ও শৈল্পিক কারুকাজ রয়েছে। উড়লে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে রংধনুর সাত রঙের ঝলমলে আভা।

পাখি গবেষকরা জানান, শুমচা লাজুক ও নিভৃতচারী। মানুষের আগমনসহ অপ্রত্যাশিত কোনো কিছুর উপস্থিতি সহ্য করতে পারে না। মুহূর্তে হাওয়া হয়ে যায় পাতার ফাঁকে কিংবা ডালের আড়ালে।

খয়েরি মাথা শুমচা শালিকের চেয়েও ছোট। লম্বায় ১৯ সেন্টিমিটার, ওজন সর্বোচ্চ ৬৫ গ্রাম। দেহ সবুজ, মাথার চাঁদি খয়েরি। ঘাড় কালচে খয়েরি। গলা ও গাল কালো। চোখ কালচে বাদামি। এদের ঠোঁট কালো। ডানা উজ্জ্বল নীল, পা কালচে।

শুমচার বাচ্চাদের রং অনেকটা বিবর্ণ। পেট বাদামি। চোখের রং একই। চিরসবুজ বনের তলদেশে পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায়। এরা বনের মধ্যে বাসা বাঁধে। সাদা রঙের সর্বোচ্চ দুই থেকে পাঁচটি ডিম দেয়। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুমচার প্রজনন সময়। মেয়ে-ছেলে উভয় পাখি পালা করে ডিমে তা দেয়। বাচ্চারা উড়তে শেখার পর স্থায়ী আবাস না গড়ে অন্যত্র পাড়ি জমায়।

খয়েরি মাথা শুমচা মাটি থেকে আড়াই-তিন ফুটের মধ্যে বিচরণ করে। বেশি ওপরে ওড়াউড়ি করে না। ভেজা মাটি বা ভেজা বনতল এদের প্রিয় আবাস। প্রজনন সময়ে নির্দিষ্ট এলাকা ছেড়ে কোথাও যায় না। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে কেঁচোসহ নানা কীটপতঙ্গ। অন্যান্য পরিযায়ী পাখির সঙ্গে মেশে না। আলাদা নিভৃতে ঘুরে বেড়ায়।
২০০৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ : উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ’ বইয়ে শুমচা পাখিকে বাংলাদেশে দুর্লভ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ-বিষয়ক সংস্থা (আইইউসিএন) এটিকে বিশ্বের ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত প্রাণী বলেছে।

বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে শুমচা প্রজাতি সংরক্ষিত। অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, খয়েরি মাথা শুমচা দেখা যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে। সুন্দর শুমচা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্যই টিকিয়ে রাখা জরুরি। 

আরও পড়ুন

×