ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

কিশোর তোফাজ্জলের কাঁধে চারজনের সংসারের বোঝা

কিশোর তোফাজ্জলের কাঁধে চারজনের সংসারের বোঝা

তোফাজ্জল

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫ | ০৪:০৯

একটি ভাঙাচোরা বাইসাইকেলই তার ভরসা। এ সাইকেল চালিয়ে ১৫ কিলোমিটার দূরের খাসিয়াপুঞ্জিতে কাজ করে কিশোর তোফাজ্জল। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই তাকে ৪ জনের সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। প্রতিদিন মাত্র দুই-আড়াইশ টাকা উপার্জনে পরিবারের তিন অসুস্থ সদস্যকে নিয়ে সংসারের বোঝা টানতে হচ্ছে তোফাজ্জলকে। 
কমলগঞ্জ উপজেলার ৯ নম্বর ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দী গ্রামের আলী আহমেদ (৬৫)-এর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন। 

সমকালের সঙ্গে আলাপকালে তোফাজ্জেল জানায়, তার পরিবারের তিনজন অসুস্থ। বাবা দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে আক্রান্ত, বোন আয়েশা খাতুন (২৫) মানসিক ভারসাম্যহীন। এছাড়া বয়োবৃদ্ধ দাদি সমিতা বিবিও (৮২) দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। স্থানীয় খাসিয়াপুঞ্জিতে কাজ করে প্রতিদিন যা আয়-রোজগার হয় তাতে দু’বেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না তাদের। মাঝেমধ্যে প্রতিবেশীদের করা সামান্য সহযোগিতাই তাদের একমাত্র ভরসা।

প্রতিবেশী ফজল মিয়া, আবু শহীদ জানান, তোফাজ্জলদের পরিবার প্রকৃতই খুব অসহায় ও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। পরিবারের তিনজনই অসুস্থ। তাদের সাহায্য করার মতো আত্মীয়স্বজন তেমন কেউ নেই। প্রতিবেশীরা মাঝেমধ্যে তাদের সাহায্য করেন। 

গত মঙ্গলবার তোফাজ্জলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি আবাসন প্রকল্পের ছোট্ট একটি ঘরে মেঝেয় জরাজীর্ণ কাঁথায় শুয়ে আছেন সমিতা বিবি। অপুষ্টি আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় ক্লান্ত। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। পা ভেঙে এক বছর ধরে শয্যাশায়ী। 

বাবা আলী আহমেদ জানালেন, তিনি হার্টের রোগী। দীর্ঘদিন ধরে কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। ছেলে তোফাজ্জলই তাঁর একমাত্র ভরসা। প্রতিদিন তাঁর ছেলে খাসিয়াপুঞ্জিতে (খাসিয়া গ্রাম) কাজ করতে যায়। ছেলের সামান্য আয়ে কোনোক্রমে সংসার চলে যাচ্ছে। কখনও কখনও দুই বেলা খাবার জোটানোই কঠিন হয়ে পড়ে।

সমিতা বিবি অস্ফুট কণ্ঠে বলেন, ‘ডালভাত খেয়ে ঈদের দিন পার করেছি। ক্ষিদের জ্বালায় রাতে ঘুম আসে না। ১৩-১৪ বছরের একরত্তি নাতি আর কিইবা করবে। তবু যা করছে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। চাল-ডাল আনলে ওষুধ আনতে পারে না। প্রায়ই অনাহারে থাকতে হয়। প্রতিবেশীরা কেউ খাবার দেয়, কেউ সামান্য টাকা-পয়সা দেয়। এভাবেই টিকে আছি।’

ইসলামপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ জানালেন, পরিবারটি এতটাই অসহায় যে, একসময় তাদের মাথাগোঁজার ঠাঁই ছিল না। কয়েক বছর আগে সরকারি আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে এ পরিবারের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোফাজ্জলদের দুরবস্থা জেনে অনেকে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে তাদের সহায়তা করছেন। পরিবারটির অসুস্থদের সুচিকিৎসা ও তাদের আত্মনির্ভরশীল করতে সরকারি সহায়তার দাবি জানান তিনি। 

আরও পড়ুন

×