চরাঞ্চলের মানুষের দুঃখ ভাঙা সেতু

সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের শুয়াকৈর গ্রামে ঝিনাই নদীর ওপর ভাঙা সেতু সমকাল
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫ | ০১:০০
ঝিনাই নদীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে বন্যায় ভেঙে যাওয়া গার্ডার সেতু। ভেঙে পড়ার প্রায় পাঁচ বছরেও সেতুটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। সেতুটি ভেঙে থাকায় ভোগান্তির শিকার চরাঞ্চলের অর্ধশত গ্রামের মানুষ।
ভাঙা সেতুটি সরিষাবাড়ী উপজেলা কামরাবাদ ইউনিয়নের শুয়াকৈর গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝিনাই নদীর ওপর। চরাঞ্চলের মানুষের উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি ভাঙা সেতুর সঙ্গে যুক্ত। সেতুটি ভেঙে পড়ার পর থেকে ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হতে হচ্ছে।
২০২০ সালের ২২ জুলাই বন্যার পানির তোড়ে ২০০ মিটার গার্ডার সেতুর মাঝের চারটি পিলার ও তিনটি স্প্যানসহ ৬০ মিটার নদীতে ভেঙে পড়ে। এর পর থেকে নদী পারাপারে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন চরাঞ্চলের মানুষ। শুয়াকৈর গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ঝিনাই নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ হওয়ার পর থেকে প্রায় ১৪ বছর ভোগান্তি ছিল না চরাঞ্চলের মানুষের। কৃষক তাদের ফসল নিয়ে হাটবাজারে, শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে, চিকিৎসাসেবাসহ জরুরি প্রয়োজনে সহজেই যাতায়াত করতে পারতেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের ২০০৩-০৪ অর্থবছরে এলজিইডির অর্থায়নে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রায় দুই কোটি টাকায় সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় এম এইচ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আক্তারুজ্জামান। শুয়াকৈর গ্রাম এলাকায় ঝিনাই নদীর ওপর ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০০৬ সালে। এর প্রায় ১৪ বছর পর ২০২০ সালের ২২ জুলাই বন্যার পানির তোড়ে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের গার্ডার সেতুর মাঝের চারটি পিলার ও তিনটি স্প্যানসহ ৬০ মিটার নদীতে বিলীন হয়। সেতুটি নির্মাণের পর থেকে চরাঞ্চলের অর্ধশত গ্রামের মানুষ ২৪ ঘণ্টা সুবিধামতো উপজেলা সদরে যাতায়াতসহ কৃষিপণ্য পরিবহন করতে পারতেন। সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এই সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এখন কৃষিপণ্যের ন্যাযমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চরের কৃষকরা।
স্থানীয়রা জানান, সেতুটি নির্মাণের পর এলাকার হাজারো বেকার যুবক ও নিম্ন আয়ের মানুষ অটোরিকশা ও ভ্যান চালিয়ে উপার্জন করতেন। এতে এলাকার মানুষের অভাব-অনটন কিছুটা কমে যায়। এসব যান চলাচলের ফলে চরাঞ্চলের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, মুমূর্ষু রোগী যে কোনো সময় যাতায়াত করতে পারতেন। সেতুটি ভেঙে পড়ায় অটোরিকশা, ভ্যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছেন নিম্ন আয়ের হাজারো মানুষ।
কথা হয় ভুক্তভোগী মঞ্জুরুল ইসলাম, আলি আকবর, সাইফুল ইসলাম, আব্দুর রশিদ, হাফিজুর রহমান ও বাছেদ মিয়া নামে কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, এখন বন্যা চলে এসেছে। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই নদীর ওপর ভাঙা সেতু সংস্কারের দাবি জানালেও কোনো সাড়া মেলেনি। যাতায়াতের কষ্টে আছেন তারা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত সেতুটি নির্মাণের দাবি তাদের।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের ভাষ্য, ভাঙা সেতুর পাশে নতুন করে
সেতু নির্মাণকাজের সব তথ্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে
পাঠানো হয়েছে। সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি চলমান। নতুন করে সেতু নির্মাণের জন্য ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
- বিষয় :
- সেতু