কোটি টাকার প্রকল্পে থাবা বিএনপি নেতাদের

.
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫ | ২৩:৫৫
লক্ষ্মীপুরের বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) শিল্পনগরীতে কোটি টাকার একটি প্রকল্পে ঠিকাদারকে সরিয়ে বিএনপি নেতারা কাজ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চলতি মাসে শেষ হওয়া ওই প্রকল্পে নিম্নমানের কাজে ক্ষোভ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, শিল্পনগরীতে সড়ক, ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণের লক্ষ্যে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। গত মার্চে শিপড়া ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্পের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়। গত ২২ মে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে সময় বাড়িয়ে ৪ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ৪২০ ফুট দীর্ঘ সড়ক, তিনটি কালভার্ট, নতুন ড্রেন এবং বিসিক ভবনের সংস্কার করা হয়েছে। তবে বাস্তবে মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। স্থানীয় বিএনপি নেতারা প্রভাব খাটিয়ে নিজেরাই কাজটি করেন।
শিপড়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী চন্দন ঘোষ অভিযোগ করেন, প্রকল্পের ওয়ার্ক অর্ডার পেলেও স্থানীয় বিএনপি নেতারা তাঁকে কাজটি করতে দেননি। প্রভাব খাটিয়ে এই প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ নেন পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কাজী হেলাল উদ্দিন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিম ও চররুহিতা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মো. সবুজ। তারা নিজেরা কাজ ভাগাভাগি করে নেন। এতে কাজের গুণগত মান ঠিক থাকেনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, বিসিকের নতুন সড়কে পানি জমা, ঢেউয়ের মতো উঁচু-নিচু জায়গা এবং ভাঙন দেখা দিয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক ও ড্রেনের নির্মাণকাজে পাথর, রড ও সিমেন্ট ঠিকমতো
দেওয়া হয়নি।
বিসিকসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা সিরাজ মিয়া, তাজুল ইসলাম ও রফিক জমাদার জানান, ঠিকভাবে মাটি না ভরাট করেই ঢালাই দেওয়া হয়েছে। এতে নতুন সড়কে ঢেউয়ের মতো তৈরি হয়েছে, যা যান চলাচলের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল কাদের বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম কোটি টাকার কাজ হবে মানসম্মত। কিন্তু এখনই রাস্তায় পানি জমে যাচ্ছে, মানুষ পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছে। এটা দেখে মনে হয়, কাজ শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেছে।’
বিসিকের প্রকল্পের কাজে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কাজী হেলাল উদ্দিন বলেন, ঠিকাদারের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমেই কাজটি তারা করেছেন। জোর করে নিয়ে নয়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিম বলেন, আগে বিভিন্ন
উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ছাত্রলীগ (নেতারা) করেছে। এখন ছাত্রদল উন্নয়ন কাজ করবে এটা স্বাভাবিক, সবাই জানে।
সড়কের কিছু জায়গায় পানি জমার বিষয়টি নজরে এসেছে জানিয়ে বিসিক প্রকৌশল শাখার টেকনিক্যাল অফিসার আশিকুর রহমান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে কাজের মান পুনরায় মূল্যায়ন করা হচ্ছে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক মো. ফজলুল করিম জানান, কাজটি দেখতে আঞ্চলিক
পরিচালক, টেকনিক্যাল কর্মকর্তাসহ অনেকে এসেছেন। অনিয়মের অভিযোগের বিষয়টি তারাও তদন্ত করে গেছেন।
- বিষয় :
- বিএনপি