ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বন্ধ ২০ বরফকল

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বন্ধ ২০ বরফকল

.

 নোমান সিকদার, চরফ্যাসন (ভোলা) 

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫ | ০১:৫৫

ভোলার চরফ্যাসনে বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তি থামছেই না। দিনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছে লাখো মানুষ। দিনে-রাতে সমানতালে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সাধারণ গ্রাহকের ভোগান্তির পাশাপাশি বরফকলসহ কারখানায় উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে মৎস্য খাতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে হাসপাতালে রোগীর কষ্ট বেড়েছে।
ভোলার চরফ্যাসনে দিন রাত মিলিয়ে দু-তিন ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ মিলছে না। লাগামহীন বিদুৎ বিভ্রাটের কারণে ৩৫টি বরফকলের মধ্যে ২০টি বন্ধ হয়েছে। বাকি ১৫টি সীমিত পরিসরে চলছে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন বরফকলসহ ছোট-বড় কারখানার কয়েকশ শ্রমিক। বরফ উৎপাদন না থাকায় উপকূলের মাছঘাটগুলোতে পচে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার মাছ। চলতি মৌসুমে বরফকল, আড়ত ও ট্রলার মালিক ছাড়াও এ পেশায় সংশ্লিষ্টদের প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। একই কারণে দুটি অটো রাইস মিলসহ ছোট-বড় অর্ধশত কারখানাও বন্ধ রয়েছে। বাসাবাড়ির বৈদ্যুতিক পাখা, ফ্রিজসহ ইলেকট্রনিকস সামগ্রী অকেজো হয়ে পড়ছে। পৌরসভাসহ উপজেলার লক্ষাধিক গ্রাহক বিদুৎ নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে আছে। 
সামরাজ আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি আজিজ পাটোয়ারী জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বরফ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে মাছ সংরক্ষণ নিয়ে বিপদে পড়েছেন তারা। বরফ সংকটের কারণে মাছ মোকামে চালান করতে সমস্যা হচ্ছে। আড়তেই পচে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার মাছ। গত কয়েক দিন দুই কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের। 
বরফকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়া জানান, ৫৮ দিন ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে বরফ উৎপাদন বন্ধ ছিল। এখন বরফকল সচল হলেও দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। এরই মধ্যে ২০টি বরফকল বন্ধ হয়ে গেছে। 
একই অভিযোগ ট্রলার মালিক ছালাউদ্দিনের। তাঁর ভাষ্য, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বরফ উৎপাদন বন্ধ। ট্রলারে মাছ সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত বরফ না থাকায় সাগরে যেতে পারছে না জেলেরা। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক জেলে। আর ভরা মৌসুমে লোকসানের মুখে পড়েছেন ট্রলার মালিকরা।
অটো রাইস মিল মালিক কামাল গোলদার জানান, লাগামহীন লোডশেডিংয়ে অনেক রাইস মিল বন্ধ হয়ে গেছে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা।  
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, চরফ্যাসন সাব-স্টেশনের ধারণক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) টানাপোড়েন এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে কারিগরি ত্রুটির কারণে বিদ্যুতের এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। শীত মৌসুমের আগে চলমান এ বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই বলে জানান তারা। 
বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, কোরবানি ঈদের আগে থেকেই ভোলার ৩৪ মেগাওয়াট রেন্টালের দুটি ট্রান্সফরমারের মধ্যে একটি বিকল। বোরহানউদ্দিন উপজেলার রেন্টালের একটি ট্রান্সফরমার বিকল। তাই ভোলায় ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। সচল ১৪ মেগাওয়াট ট্রান্সফরমার দিয়ে জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সহনীয় রাখার চেষ্টা চলছে। একটি ট্রান্সফরমার দিয়ে ৩৩ কেভি ফিডার লাইনের মাধ্যমে সীমিত আকারে ছয় উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
ওজোপাডিকোর চরফ্যাসন আবাসিক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, ভোলার বোরহানউদ্দিনের ৩৩ কেভি রেন্টালের দুটি ট্রান্সফরমার একটি বিকল। এ কারণে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। দিনে-রাতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। 
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) জিএম সুজিত কুমার বিশ্বাস জানান, ভোলার বোরহানউদ্দিনের দুটি রেন্টাল প্লান্টের একটি ট্রান্সফরমার বিকল। দ্রুত সেটি সংস্কারে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।  

আরও পড়ুন

×