স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ, পিবিআইকে তদন্তের আদেশ

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫ | ০৪:২৪ | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৫ | ০৪:৫৩
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ধষর্ণের শিকার হয়েছে। গত ১৭ জুন ওই শিক্ষার্থীকে তার চাচাতো ভাই নিজ বাড়িতে হাত-পা বেঁধে ও মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। আদালত অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আদেশ দিয়েছেন।
ওই শিক্ষার্থীর মা জানান, গত ১৭ জুন তার মেয়ে বাড়িতে চাচাতো বোনের সঙ্গে খেলাধুলা করছিল। মেয়ের চাচাতো ভাই জাকির হোসেন (২০) কৌশলে তাকে ঘরে নিয়ে যায়। এর পর মেয়ের হাত-পা বেঁধে ও মুখ চেপে ধর্ষণ করে। বিষয়টি কাউকে জানালে মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় জাকির। কিন্তু মেয়ের অসুস্থতা দেখে জিজ্ঞাসা করলে তখন ঘটনা খুলে বলে। এর পর জাকিরের বাবাকে ঘটনা জানানো হলে তিনি বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন। বাজার থেকে মেয়ের জন্য ওষুধ এনে দেন।
তিনি আরও জানান, বিষয়টি পরে আশপাশের কয়েকজন জেনে যাওয়ায় আপসে মীমাংসার কথা বলে কোথাও যেতে দেয়নি। কিন্তু রোববার মেয়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় প্রথমে সাটুরিয়া উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রোববার থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসা করানো হয়। মঙ্গলবার দুপুরে মানিকগঞ্জ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিলে মেয়েকে বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় কয়েকজন ও জাকিরের বাবা বলেছিলেন ঘটনা নিজেদের মধ্যে, তাই থানা-পুলিশ করার দরকার নেই। নিজেরাই আপসে মীমাংসা করে নেব। কিন্তু তারা মীমাংসার নামে ঘুরাতে থাকে ও মেয়েকে চিকিৎসা করাতে বাধা দেয়। গত ২২ জুন সাটুরিয়া থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ জানায়- ধর্ষণের মামলা প্রমাণ করা কঠিন। বিষয়টি যখন নিজেদের মধ্যে হয়েছে, তাই আপসে মীমাংসা করে নেন। পরে এক আত্মীয়র সহযোগিতায় মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা করা হয়েছে।’
শিশুটির মামা রুবেল হোসেন জানান, তার ভগ্নিপতি সহজ সরল দিনমজুর। জাকির একজন রাজমিস্ত্রির সহযোগী। ঘটনাটি তার বোনের পরিবার গোপন রেখেছিল। কিন্তু ভাগনির অবস্থা খারাপ হওয়ায় রোববার তারা ঘটনাটি জানায়। এর পর ভাগনিকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করি। তার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, তা ক্ষমার করা যায় না। জাকিরের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত।
মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. রুমা আক্তার জানান, ধর্ষণের ঘটনার ৫ দিন পর ওই শিশুটিকে রোববার ভর্তি করা হয়। তার রক্তক্ষরণ বন্ধসহ অন্যান্য চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার দুপুরে তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
মামলা না নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্ষণের অভিযোগে এক নারী থানায় মামলা করতে এসেছিলেন। তাদের লিখিত অভিযোগ করতে বলা হয়। কিন্তু পরে আর তারা কেউ থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেননি।’
মানিকগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর হুমায়ুন কবির বলেন, ধর্ষণের শিকার মেয়েটির মা বাদী হয়ে মঙ্গলবার আদালতে মামলা করেছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ এম এ হামিদ মামলাটি আমলে নিয়ে তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।