ইউপি চেয়ারম্যানকে পিটিয়ে আহত: অভিযুক্তের পা কাটতে লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা

যশোর-চৌগাছা সড়কের ফুলসারা নিমতলা বাজারে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ শুরু হয়। ছবি: সমকাল
যশোর অফিস
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫ | ১৮:৫৭
চাঁদার দাবিতে যশোরের চৌগাছা ফুলসারা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ঢালিকে পিটিয়ে আহত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। আজ বৃহস্পতিবার সকালে যশোর-চৌগাছা সড়কের ফুলসারা নিমতলা বাজারে বিক্ষোভ শুরু হয়। কয়েক ঘণ্টা চলে এ বিক্ষোভ সমাবেশ। প্রথমে সড়ক অবরোধ করলেও পরে রাস্তার পাশে বিক্ষোভ করে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
বিক্ষোভ চলাকালে অভিযুক্ত সন্ত্রাসী লিটনের পা কেটে নিতে পারলে তাকে এক লাখ টাকা পুরস্কার মাইকে ঘোষণা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
বিক্ষোভ চলাকালে মাইকে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নানা স্লোগান ও বক্তব্য দিতে থাকেন এলাকাবাসী। সমাবেশে ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি জ্বালাময়ী বক্তব্য দেন। বক্তব্যের একপর্যায়ে সন্ত্রাসী লিটনের পা কেটে আনতে পারলে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এ সময় উপস্থিত জনতা করতালি দিয়ে সমর্থন জানান।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ফুলসারা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল লতিফ বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ঢালি এলাকার মানুষের কাছে সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। চাঁদার দাবিতে তাকে পিটিয়ে হাত পা ভেঙে দিয়েছে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী লিটন, মামুন, টিটো ও তার সহযোগিরা। তাদের শাস্তির দাবিতে দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষে রাস্তায় নেমেছে বিক্ষোভে। সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
তিনি আরও বলেন, ক্ষোভে পড়ে হয়ত উনি পায়ের মূল্য ঘোষণা করেছেন। এলাকার প্রত্যেকটি মানুষ সন্ত্রাসী লিটন ও তাদের ওপর চরম ক্ষুব্ধ। নিরীহ চেয়ারম্যানকে এভাবে হাত পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনা কেউ মেনে নিতে পারছে না।
উল্লেখ্য, বুধবার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার ফুলসারা ইউনিয়নের মান্দারতলা এলাকায় দুর্বৃত্তরা জিয়াউর রহমানকে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে পিটিয়ে তার হাত পা ভেঙে দেন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। জিয়াউর রহমান ঢালি সদ্য কার্যক্রম স্থগিত হওয়া সংগঠন আওয়ামী লীগের ফুলসারা ইউনিয়ন শাখার সভাপতি।
চেয়ারম্যানের স্বজনের অভিযোগ, ফুলসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরী। রাজনীতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গত ২৮ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন। এরপর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগনেতা জিয়াউর রহমান ঢালি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পাওয়ার পর স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও একাধিক মামলার আসামি সন্ত্রাসী লিটনের নেতৃত্বে পাঁচ থেকে ছয়জন জিয়াউর রহমানের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। তাদের চাঁদা না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন লিটন। বুধবার দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মোটরসাইকেলে বাড়িতে যাওয়ার পথে লিটন ও তাদের সহযোগীরা পথরোধ করে। এরপর অস্ত্র ঠেকিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। পরে হকিস্টিক দিয়ে দুই পা ও হাত ভেঙে দিয়ে পালিয়ে যায়।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াউর ঢালি জানান, চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে একটি পক্ষ আমাকে মেনে নিতে পারেন না। আমাকে হত্যার চেষ্টা শুরু করে। স্থানীয় সন্ত্রাসী লিটন আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলো। সেই টাকা না দেওয়াতে আমার ওপর হামলা চালিয়েছে। মারধরের এক পর্যায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করার চেষ্টা করছিলো, কিন্তু স্থানীয় লোকজন চলে আসাতে তারা পালিয়ে যায় ।
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. হাসিবুর রহমান বলেন, আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে আনা হলেও বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত।
চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, পুলিশ হামলায় জড়িতদের আটকে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
- বিষয় :
- যশোর