শিশু হত্যার নেপথ্যে ফ্রি ফায়ার গেম

মিনহাজ হোসেন আবির
গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫ | ০০:৩১
নাটোরের বড়াইগ্রামে শিশুর লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রহস্য উদ্ঘাটনের তথ্য দিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে মিনহাজ হোসেন আবির (১০) নামে ওই শিশুটির লাশ উদ্ধার হয়। মহিষভাঙ্গার বনপাড়া পাটোয়ারী ফিলিং স্টেশনের কাছে নির্মাণাধীন মসলা মিলের ফাঁকা মাঠে পড়ে ছিল তার লাশ। শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইল ফোনে ফ্রি ফায়ার গেম নিয়ে দ্বন্দ্বের একপর্যায়ে শিশুটিকে মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে তারই বন্ধু।
মিনহাজ হোসেন আবির মহিষভাঙ্গার কাতার প্রবাসী মিলন হোসেনের একমাত্র সন্তান। সে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো বনপাড়া আদিব ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। অভিযুক্ত শিশুটিও (১২) একই গ্রামের বাসিন্দা। সে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। আবিরের স্বজনরা জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে আবির তার বাবার স্মার্টফোন ও বাইসাইকেল নিয়ে বের হয়। সন্ধ্যার পরও সে না ফেরায় বড়াইগ্রাম থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন তার বাবা মিলন হোসেন। পরে রাতেই শুকনো পাতা দিয়ে লুকিয়ে রাখা মরদেহ পাওয়া যায়।
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) শোভন চন্দ্র হোড় শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে আবির তার ওই বন্ধুর (১২) সঙ্গে বসে মোবাইল ফোনে ফ্রি ফায়ার গেম খেলছিল। খেলাকে কেন্দ্র করে দু’জনের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ওই শিশুটি রেগে উঠে পাশে থাকা ইট দিয়ে আবিরের মাথায় বারবার আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় আবির। এ সময় পাশেই থাকা শুকনা গাছের পালার নিচে মরদেহ লুকিয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায় ওই শিশু। শুক্রবার সকালে পুলিশ তাকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে আবিরকে হত্যার কথা স্বীকার করে।
আবিরের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বনপাড়া পৌরসভার মহিষভাঙ্গা কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। আবিরের বাবা মিলন হোসেন ঈদের ছুটিতে দেশে ফিরেছিলেন। এভাবে একমাত্র সন্তান হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন তিনি। মিলন বলেন, ‘বছরখানেক পর ছেলেকে জড়িয়ে সময় কাটানোর জন্য দেশে ফিরেছিলাম। বৃহস্পতিবার বিকেলে সে আমার মোবাইল ফোন আর সাইকেল নিয়ে বের হয়েছিল। ভাবিনি, এটাই হবে আমাদের শেষ দেখা।’ মিলন বলেন, ‘মোবাইলের আসক্তি থেকে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করা এখনই সবচেয়ে জরুরি। সন্তানকে সময় দিন, ভালোবাসুন। কারণ সুযোগ হারালে কিছুই আর ফিরে আসে না।’
- বিষয় :
- শিশু
- শিশু হত্যা