পটুয়াখালী জেলা বিএনপি
সম্মেলন ঘিরে উচ্ছ্বসিত হলেও কাউন্সিলরদের নিয়ে প্রশ্ন

.
বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫ | ০০:১০
বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় বিএনপির ৮টি সাংগঠনিক কমিটির সব মেয়াদোত্তীর্ণ। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের জন্য ৩ মাস সময় দিয়ে গত বছরের ২৪ নভেম্বর চিঠি দেয় কেন্দ্র। ৭ মাস পর প্রথম এর বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে আগামীকাল বুধবার। ২৩ বছর পর এদিন পটুয়াখালী জেলার সম্মেলন হবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রধান অতিথি হয়ে ভার্চুয়ালি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।
সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মী উচ্ছ্বসিত হলেও কাউন্সিলরদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও থানার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কাউন্সিলরদের নিয়ে জেলা সম্মেলন হচ্ছে বলে অনেকের অভিযোগ।
এ বিষয়ে দলের বিভাগীয় পর্যায়ের এক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ অজুহাত দেখিয়ে বাতিল করলে তাদের প্রতি অবিচার করা হতো। তাই এ কমিটি নিয়েই জেলা সম্মেলন হচ্ছে।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বরিশাল মহানগরসহ ৮ সাংগঠনিক কমিটির সম্মেলন সম্পন্নের জন্য ২৪ নভেম্বর দলের নির্দেশনায় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুকে চিঠি দেন। তাতে উল্লেখ করা হয়, পত্রপ্রাপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও থানা সম্মেলন করে জেলা ও মহানগর সম্মেলন করতে হবে।
পটুয়াখালী জেলায় ৮টি উপজেলা ও ৫টি পৌর কমিটি রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকলেও তা মেয়াদোত্তীর্ণ। উপজেলা কমিটিগুলো গঠিত হয়েছে ২০২২ সালের শেষ ভাগে কিংবা ২০২৩ সালের শুরুতে। তারও আগে গঠিত হয় ইউনিয়ন কমিটি। এসব কমিটির দুই বছরের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির পদধারীদের নিয়ে জেলা সম্মেলনে প্রায় দেড় হাজার কাউন্সিলর নির্ধারিত হয়েছেন।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২০২২ সালের ২ অক্টোবর কলাপাড়া পৌর ও ২৭ নভেম্বর উপজেলা কমিটি, একই বছরের ১০ আগস্ট রাঙ্গাবালী উপজেলা কমিটি, দশমিনা উপজেলা কমিটি ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর, ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল দুমকী এবং ১১ জুলাই মীর্জাগঞ্জ ও গলাচিপা উপজেলা কমিটি অনুমোদিত হয়। প্রতিটি উপজেলায় সম্মেলন হওয়ার ৮-১০ মাস পর কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। সে হিসাবে জেলা সম্মেলনের আগে একমাত্র গলাচিপা ও মীর্জাগঞ্জ কমিটির মেয়াদ আছে ৯ দিন। ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে বাউফল।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কাউন্সিলরদের নিয়ে জেলা সম্মেলন সাংগঠনিকভাবে বিধিসম্মত কিনা– প্রশ্নে উপজেলা কমিটির কেউ কথা বলতে রাজি হননি। রাঙ্গাবালী উপজেলা সভাপতি রহমান ফরাজী বলেন, ‘এসব বিষয়ে জেলা নেতারা জানেন। তাদের জিজ্ঞাসা করুন।’ গলাচিপা উপজেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে ফোন সংযোগ কেটে দেন। বাউফলের যুগ্ম আহ্বায়ক সামুয়েল আহমেদ লেনিন বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে হামলা-মামলার আতংকে প্রায় ৪ বছর আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে দল চলছে। জেলার সম্মেলনের পর উপজেলায় সম্মেলন সম্পন্ন হবে।
কুয়াকাটা পৌর কমিটি গঠিত হয় ২০২৩ সালের ৩০ মে। কুয়াকাটা পৌর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ড. শহিদুল ইসলাম শাহিন দীর্ঘ বছর পর জেলার সম্মেলন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। কাউন্সিলর হিসেবে তিনি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। তাঁর ভোটে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনিসহ বেশির ভাগ কাউন্সিলর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির, এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি শাহিন।
বাউফল উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আপেল মাহমুদ ফিরোজ বলেন, ‘সম্মেলন নিয়ে আমরা খুব আনন্দিত। সোমবার সন্ধ্যায় শহরে আনন্দ মিছিল করেছি।’ বেশির ভাগ কাউন্সিলর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, তাঁর উপজেলায় দলের আরেক পক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ করেছিল। সেটির তদন্ত করতে দীর্ঘ বছর লাগায় সম্মেলন করা যায়নি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে জেলার সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টির ফোনে একাধিক কল দিলেও তিনি ধরেননি। ফোন না ধরায় কথা বলা সম্ভব হয়নি বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর সঙ্গেও।
তবে বিএনপির বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘কমিটিগুলো কাগজে মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও বাস্তবতার নিরিখে মেয়াদোত্তীর্ণ নয়।’ তিনি বলেন, দুই থেকে আড়াই বছর আগে ধাপে ধাপে ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটি গঠন হয়। এর পর থেকে জেলা সম্মেলন করার জন্য দল প্রস্তুত ছিল। কাউন্সিলররা বারবার তাগিদও দিচ্ছিলেন। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আমলে পটুয়াখালীতে সম্মেলন করার নিরাপত্তা ছিল না। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণের অজুহাত দেখিয়ে বাতিল করলে তাদের প্রতি অবিচার করা হতো। তাই এ কমিটি নিয়েই জেলা সম্মেলন হচ্ছে।
পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০২ সালের ২১ মে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে সভাপতি ও স্নেহাংশু সরকার কুট্টিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আধিপত্য নিয়ে দু’জনের বিরোধে জেলা বিএনপি প্রকাশ্যে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ২০০৯ সালের ৯ জুন আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়াকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের কমিটি দেয় কেন্দ্র। তাতেও বিরোধ মেটেনি। এর পর ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে সভাপতি ও রব মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩ মে আব্দুর রশিদ চুন্নুকে আহ্বায়ক ও স্নেহাংশু সরকার কুট্টিকে সদস্য সচিব করে কমিটি হলে জেলার রাজনীতিতে আলতাফ হোসেন চৌধুরী কোণঠাসা হয়ে পড়েন।
- বিষয় :
- বিএনপি