শাহজালালে প্রায় দুই কেজি স্বর্ণ উদ্ধারের মামলা
এবারও আড়ালেই থেকে গেল নেপথ্যের হোতারা

ইন্দ্রজিৎ সরকার
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৩:৪১
সৌদি আরবের তায়েফে একটি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন মোহাম্মদ বাহার মিয়া। দুই বছর আগে তিনি দেশে ফেরেন। তবে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই তাঁকে আটক করা হয়। তাঁর কাছে পাওয়া যায় প্রায় দুই কেজি স্বর্ণ। তখনকার দর অনুযায়ী ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ওই স্বর্ণ তাঁকে আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়েছেন বলে জানান বাহার। সম্প্রতি এ মামলার তদন্ত শেষ হলেও জানা যায়নি স্বর্ণের গন্তব্য। সেই সঙ্গে চোরাচালানের আরও অনেক ঘটনার মতো এবারও আড়ালেই থেকে গেছে নেপথ্যের হোতারা।
২০২১ সালের ৮ মে শাহজালালে ওই ১.৯৮৫ কেজি স্বর্ণ জব্দের ঘটনায় কাস্টমস কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার রায় বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন। প্রথমে থানা পুলিশ মামলাটির তদন্ত করে। পাঁচ মাস পর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটির ঢাকা মহানগর উত্তর ইউনিট তদন্তে বাহার মিয়াসহ দু’জনের সংশ্লিষ্টতা পায়। অন্যজন হলেন মো. ময়েজ ওরফে মজর। তিনি পলাতক।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা মহানগর উত্তরের পরিদর্শক মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান জানান, সৌদি আরবে বাহারের সঙ্গে একই হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন ময়েজ। পাশাপাশি রুমে থাকার সুবাদে দু’জনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তিনিই চার্জার লাইট ও সসপ্যানের প্যাকেটে ভরে স্বর্ণের চালান বাহারের হাতে তুলে দেন। সেগুলো নেওয়ার জন্য শাহজালাল বিমানবন্দরে ময়েজের এক আত্মীয় আসার কথা ছিল। তবে সেই আত্মীয়ের খোঁজ মেলেনি। তার আগেই বাহার আটক হন। এতে আর কেউ জড়িত ছিল কিনা তাও জানা যায়নি।এদিকে সোয়া কোটি টাকার স্বর্ণের প্রকৃত মালিক যে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ময়েজ নন, তা অনেকটাই নিশ্চিত তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে বাহার কোনো স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাহার শুধু বাহক হিসেবে কাজ করেছেন। আবার স্বর্ণের প্রাপক ময়েজের আত্মীয় হলে তারা নিশ্চয়ই বিমানবন্দরে আসতেন। কিন্তু কেউ না আসায় এর সঙ্গে চোরাকারবারি চক্রের যোগসাজশের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তারা গোপন সূত্রে স্বর্ণ জব্দের বিষয়টি জানতে পেরে গা-ঢাকা দেয়। পুলিশ বা পিবিআইয়ের তদন্তে চক্রের কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
তদন্ত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সৌদি আরব যান বাহার। প্রায় তিন বছর পর ফেরার দিন বিমানবন্দরে সন্দেহজনক আচরণের কারণে তাঁকে আটক করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। তাঁর কাছে স্বর্ণ বা অবৈধ কিছু আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। পরে তাঁর ব্যাগ স্ক্যান করে ভেতরে চার্জার লাইট ও সসপ্যানের মধ্যে সুকৌশলে লুকানো পাঁচটি স্বর্ণের বার জব্দ করা হয়। এগুলোর মালিকানার সপক্ষে কোনো বৈধ কাগজ দেখাতে পারেননি বাহার।
নিয়ম অনুযায়ী জব্দ স্বর্ণ বিমানবন্দরের শুল্ক গুদামে জমা দেওয়া হয়। পরে জব্দ করা সোনালি পদার্থ এলেই স্বর্ণ কিনা– তা পরীক্ষা করানো হয় সংশ্লিষ্টদের দিয়ে। গত ১৭ মে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, নমুনায় ৯৯.৯০ শতাংশ স্বর্ণ রয়েছে, যা ২৩.৯৮ ক্যারেট। আর বাহারের কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল ফোনটি পাসওয়ার্ড প্রোটেকটেড (পিনলক) হওয়ায় ফরেনসিক পরীক্ষার সময় এর থেকে তথ্য উদ্ধার করা যায়নি। কারণ ফোনের পাসওয়ার্ড রিমুভ বা লক বাইপাস করা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মামলার সার্বিক তদন্ত, সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ, ১৬৪ ধারার জবানবন্দি, জব্দ আলামতের বিশেষজ্ঞ মতামত পর্যালোচনা ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় গ্রেপ্তার বাহার এবং পলাতক ময়েজের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের ২৫-বি-এর ১ (বি) ধারার অপরাধের প্রমাণ মিলেছে।