ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৭ বছর

করোনার ছোবলে করুণ অবস্থায় আহত শ্রমিকরা

করোনার ছোবলে করুণ অবস্থায় আহত শ্রমিকরা

ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া নূপুর পরা পায়ের ছবিটি রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির প্রতীক হয়ে আছে- ফাইল ছবি

আবু হেনা মুহিব

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২০ | ১৪:৪১

সাভারের মজিদপুরের পান-বিড়ির ছোট্ট দোকানি আবু কালাম। রানা প্লাজা ধসে একটি পা হারান। কাটা বাঁ পায়ে কৃত্রিম অঙ্গ লাগানো। যতটুকু সম্ভব ওই পায়ে চাপ কম দিয়ে কোনো রকমে দোকানে উঠে বসেন তিনি। বাকি সব কাজ করে দেন স্ত্রী সোনিয়া। দুই ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে কালামের পাঁচজনের সংসার কোনো রকমে চলছিল; কিন্তু এখন আর চলছে না। করোনার ছোবলে গোটা পরিবারটি এখন এলোমেলো। দোকান খুলতে দেয় না পুলিশ। ত্রাণ নিয়ে কাড়াকাড়ি করার শারীরিক অবস্থা নেই তার। স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েরাও কারও কাছে হাত পাততে নারাজ। ফলে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। সমকালকে আবু কালাম বলেন, 'ভাই কীভাবে বেঁচে আছি আল্লাহ ছাড়া কেউ বুঝবে না।'

এ রকম আহত আড়াই হাজার শ্রমিক পরিবারের প্রায় একই অবস্থা। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এ রকম শোচনীয় দুরবস্থার কথা জানা গেছে। শ্রমিক নেতাদের মতে, প্রায় দুই মাস ধরে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রভাবে অনেক সমর্থ পরিবারই বিপদে পড়েছে। সেখানে পঙ্গু বেকারদের অবস্থা সহজেই অনুমান করা যায়। ত্রাণ পেতেও এখন এক রকম দৌড়ছুট করতে হয়। সেখানে পঙ্গু শরীর নিয়ে তারা কতটুকুই করতে পারে। রানা প্লাজা ধসের সাত বছরের মাথায় এসে করোনা প্রার্দুভাবে এ রকম করুণ পরিণতির মুখে পড়েছে আড়াই হাজার পরিবার।

জানতে চাইলে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, প্রতিদিনই আহতদের অনেকেই তাদের ত্রাণ সহায়তার জন্য ফোন করছেন। রানা প্লাজায় আহতদের এই দুর্যোগকালে ত্রাণ সহযোগিতা দেওয়ার কথা বিজিএমইএর। কিন্তু তাদের এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেই। বিদেশি ক্রেতাদেরও এ নিয়ে নূ্যনতম কোনো সাড়া নেই। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন রানা প্লাজার আহত শ্রমিকরা।

সাত বছর আগে রানা প্লাজা ধসে আহতদের পুনর্বাসনে ট্রাস্ট ফর ইনজুরড ওয়ার্কার্স মেডিকেল কেয়ার ইনক্লুডিং রানা প্লাজা ওয়ার্কার্সের (টিআইডব্লিউএমসি) সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, আহতদের চিকিৎসার বাইরে অন্য কোনো খাতে খরচ করার এখতিয়ার তাদেরও নেই। টিআইডব্লিউএমসির সমন্বয়ক কৃষ্ণ সেন গতকাল সমকালকে বলেন, প্রতিদিনই আহত শ্রমিকদের কাছ থেকে ফোন পাচ্ছেন তারা। এখন আর কেউ চিকিৎসার জন্য ফোন করছেন না। সবার একই দাবি, ত্রাণ সহায়তা। কিন্তু তারা কিছু করতে পারছেন না। তিনি বলেন, করার মতো কিছু টাকা তাদের হাতে আছে। তবে এই তহবিল যে নীতিমালার অধীনে গঠন করা হয়েছে এবং ব্যয় প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে, তার বাইরে তারা যেতে পারছেন না। তিনি জানান, জনতা ব্যাংকে এখনও রানা প্লাজায় আহতদের চিকিৎসা বাবদ আট কোটি টাকা মেয়াদি সঞ্চয় (এফডিআর) জমা আছে। একই অ্যাকাউন্টে তাজরীন ফ্যাশনস কারখানার শ্রমিকদেরও চিকিৎসা বাবদ এক কোটি ২৫ লাখ টাকা এফডিআর আছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) উদ্যোগে আরও অর্থ আসার কথা রয়েছে। তিনি স্বীকার করেন, করোনাভাইরাসের কারণে সত্যিই আহতদের পরিবার অনেক কষ্টে আছে।

টিআইডব্লিউএমসির বাইরে ব্র্যাক ইউএসের অর্থে গুরুতর আহত ১১০ জনের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সাভার সিআরপির মাধ্যমে এসব আহতের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম গতকাল সমকালকে জানান, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। জানা গেছে, আর দুই মাস পর আগামী জুনে এ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সাত বছরের মেয়াদের প্রকল্পটি আর সম্প্রসারণ হচ্ছে না।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাজধানীর অদূরে সাভারে রানা প্লাজা নামে একটি বহুতল ভবন ধসে পড়ে। এতে ভবনের পাঁচ পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ শ্রমিক প্রাণ হারান। আহত হন আড়াই হাজার। এ দুর্ঘটনাকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে মনে করা হয়।

তিন দিনের কর্মসূচি : রানা ট্র্যাজেডির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে। তবে করোনার কারণে সব কর্মসূচিই অনলাইনের মাধ্যমে পালন করা হবে। তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। গতকাল সংগঠনের ফেসবুক পেজে লাইভে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ কর্মসূচি শুরু হয়। এতে কথা বলেন সংগঠনের সভা প্রধান তাসলিমা আখতার। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ শুক্রবার দিনব্যাপী রানা প্লাজার ঘটনায় নিহতদের ছবি এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া হাতে স্বজনসহ সবাই মিলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি পোস্ট দেওয়া। সকাল ১১টা ১ মিনিটে নীরবতা পালন। বিকেল ৪টায় মতবিনিময় সভা। এ ছাড়া ২৫ এপ্রিল দু'দিনব্যাপী অনলাইন ছবির প্রদর্শনী পূর্ণ বেতন চাই। অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকেও আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

×