ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

শিক্ষক মুরাদের হাতে ছাত্রী হয়রানির প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ

শিক্ষক মুরাদের হাতে ছাত্রী হয়রানির প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ

গ্রেপ্তার শিক্ষক মুরাদ হোসেন। ছবি: সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৮:৪৩ | আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২২:৩২

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের একটি শাখার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রী নিপীড়নের প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। স্কুলের পাশে কোচিং সেন্টারে পড়ানোর সময় তিনি ছাত্রীদের শরীরে হাত দেন, তাদের যৌন হয়রানি করেন। মুরাদের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ থেকে এর প্রমাণ মিলেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মাহবুব-উজ-জামান, অতিরিক্ত  উপকমিশনার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার ইমরান হোসেন মোল্লা। 

তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগী আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ২২ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছে। আসামি এসব অভিযোগ অস্বীকার করার চেষ্টা করলেও এ বিষয়ে অনেক তথ্য পাচ্ছি।’

ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের দায়ের করা মামলায় গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর কলাবাগান থেকে শিক্ষক মুরাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। 

ড. মহিদ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘শিক্ষক মুরাদকে জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় ফোন করে তিনি যৌন নিপীড়নমূলক কথা বলতেন। তাঁর মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ থেকে বেশ কিছু ভিডিও ও অডিও রেকর্ড উদ্ধার করা হয়েছে।’ 

শিক্ষক মুরাদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আসছে জানিয়ে ড. মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘সব কিছু মাথায় রেখে তদন্ত চলছে।’ মুরাদের নিপীড়নের শিকার অনেক ছাত্রী এখন মুখ খুলছে বলেও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।

এর আগে, ডিএমপির লালবাগ থানায় ভিকারুননিসার এক শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে শিক্ষক মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়ে ভিকারুননিসার আজিমপুর শাখায় লেখাপড়া করে। গত বছর সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় মুরাদের কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। কোচিংয়ে শিক্ষক মুরাদ ছাত্রীদের আপত্তিকর কৌতুক শোনান। গত বছরের ১০ মার্চ বিকেলে সব শিক্ষার্থী চলে গেলেও ওই ছাত্রীকে কৌশলে কোচিংয়ে বসিয়ে রাখেন মুরাদ। পরে তার শরীরে হাত দেন। ঘটনা ধামাচাপা দিতে ভয় দেখান। মুরাদ তাকে বলেন, ‘এই ঘটনা জানাজানি হলে তোমার মা-বাবার সম্মানহানি হবে। এ ছাড়া স্কুল থেকে তোমাকে বের করে দেবে।’

এ ঘটনায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ভিকারুননিসা নূন স্কুলের আজিমপুর ক্যাম্পাসের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শিক্ষক মুরাদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন। পরে তারা প্রেস ক্লাবের সামনেও মানববন্ধন করেন।

অভিযোগ এক বছর আগের, এখন সেটা প্রমাণ করা সম্ভব কিনা– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ডিএমপির অতিরিক্ত এই কমিশনার বলেন, ‘ফৌজদারি অপরাধ কখনও তামাদি হয় না, ৫০ বছর হলেও তার বিচার হতে পারে।’ কোচিং বাণিজ্যের বিরোধ থেকে এমন অভিযোগ আনা হচ্ছে কিনা– জানতে চাইলে ড. মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘সেটাও তদন্ত করে দেখা হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘নারী ও শিশুদের বিষয়ে পুলিশ অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাদের সঙ্গে কেউ অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তির দায় কখনও প্রতিষ্ঠান নেয় না। প্রতিষ্ঠানটিতে অনেকে চাকরি করেন। তারা নিশ্চয় এমন আচরণ করছেন না। বিক্ষিপ্তভাবে একজন শিক্ষক যদি এ ধরনের কাজ করেন, সে দায় অন্য শিক্ষকরা নেবেন না।’

একই প্রতিষ্ঠানে তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। তদন্তে তারা দায়মুক্তি পেয়েছেন। এটি পুলিশের তদন্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা– এমন প্রশ্নে ড. মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘এটি একাডেমিক বিষয়। প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কমিটি রয়েছে। তাদের দায়িত্বের জায়গা আছে, সেগুলো তারা দেখেন। তবে ফৌজদারি বিষয়গুলো পুলিশের অংশ।’ 

তিনি বলেন, ‘শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রমাণে মেডিকেল প্রতিবেদন জরুরি নয়। অভিযোগ প্রমাণের আরও অনেক প্রক্রিয়া রয়েছে। পুলিশ প্রত্যেক নাগরিকের অধিকারের বিষয়ে সংবেদনশীল। যৌন নিপীড়ন-সংক্রান্ত অপরাধ কত দিন, কত জায়গায়, কতবার হয়েছে, সবই তদন্তে বেরিয়ে আসবে।’

আরও পড়ুন

×