ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

সংসদে ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশের দাবি এ. কে. আজাদের

সংসদে ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশের দাবি এ. কে. আজাদের

ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ. কে. আজাদ। ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪ | ২২:২৯ | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ | ১০:৪৭

জাতীয় সংসদে ঋণখেলাপিদের নামের তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ. কে. আজাদ। একই সঙ্গে তিনি সরকারের এত সংখ্যক মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে একটি প্রশাসনিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। 

রোববার সংসদের বৈঠকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

এদিকে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে একাধিক সদস্য কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার পদ্ধতির সমালোচনা করেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে এ. কে. আজাদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। মূলত তার পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা। এই টাকা কারা নিল। তাদের নাম ১২ বছরের বালক থেকে শুরু করে সবাই জানে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জন্যই এসব নাম সংসদে প্রকাশের জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, যারা ব্যাংকের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছেন, এখন যদি ১৫ শতাংশ কর দিয়ে তাদের টাকা আনতে দেওয়া হয়, তা অন্যায়। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। তাহলে সার্বভৌম পার্লামেন্ট কীভাবে এমন একটি বিষয়ে বৈধতা দিতে পারে, তা বোধগম্য নয়। করদাতাদের ৩০ শতাংশ দিতে হলে তাদের কেন হবে না? কেন বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না?

ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য বলেন, এবার বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে জনপ্রশাসন খাতে ব্যয় বাজেটের ২২ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। অথচ উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এখানে প্রশ্ন, স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়ে একটি মন্ত্রণালয়কে বাজেটের ২২ শতাংশ দিয়ে দেওয়া হলে তা শরীরের চেয়ে মাথা ভারী হয়ে যায় না? বিশ্বে মন্দা চলছে। আয় বুঝে ব্যয় করতে হবে। মূল বাজার ইউরোপ-আমেরিকা কিনতে পারছে না। ফলে আমাদের রপ্তানি নেতিবাচক।

তিনি আরও বলেন, একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী সংসদে বলেছেন, প্রশাসনের একটি বিরাট অংশ যারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিচার হওয়া উচিত।

এ. কে. আজাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেখানে স্মার্ট বাংলাদেশ ঘোষণা করেছেন, সেখানে অ্যানালগ ব্যবস্থা চলতে পারে না। এতগুলো মন্ত্রণালয়, দপ্তর দরকার আছে কিনা, তা দেখার জন্য একটি প্রশাসনিক কমিটি করা হোক। তারা অডিট করে সরকারকে প্রস্তাব দিক এত মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও কর্মকর্তা দরকার আছে কিনা।

তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে– এসিল্যান্ড ও ইউএনওদের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকায় গাড়ি কেনা হচ্ছে। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে মন্ত্রীরা নিজের টাকার গাড়িতে চলাফেরা করেন। এতে কিন্তু তাদের মানসম্মান কমে যাচ্ছে না।

সংসদকে তিনি বলেন, এখন ভাবার সময় এসেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চললে সামনের বছর বাজেটের আকার আরও কমাতে হবে। আজ অর্থনৈতিকভাবে যে দুঃসময় চলছে, এটি আরও প্রকট হবে। সবাইকে এখনই সতর্ক হতে হবে।

২০ জুন প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ক্যাপিটাল মেশিনারি বা মূলধন যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। বিষয়টি উল্লেখ করে এ. কে. আজাদ বলেন, শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ। অনেক ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে গেছে বা স্বল্প পরিসরে চলছে। দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ দিন দিন কঠিন হচ্ছে। ঋণের সুদহার, বিদ্যুৎ-জ্বালানির অপর্যাপ্ততা, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত উদ্যোক্তারা। প্রতিবেশী ভারতের কয়েকটি রাজ্য বিনিয়োগ টানতে নানামুখী প্রণোদনা দিচ্ছে।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দীন বলেন, এর আগে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কেউ টাকা সাদা করেনি। ১৫ শতাংশ কর দিতে হলে কেউ অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শন করবে না। এটি ৫ শতাংশ করা হলে বিপুল অপ্রদর্শিত আয়  প্রদর্শন করবে মানুষ।

এই সংসদ সদস্য বলেন, দেশে এখন বড় ব্যাধি দুর্নীতি। উন্নয়নের সঙ্গে দুর্নীতিও বেড়ে গেছে। দুর্নীতির লাগাম টানা না গেলে উন্নয়ন ধরে রাখা যাবে না। দেশ বাঁচাতে হলে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে। ব্যাংকে দুর্নীতি বেড়ে গেছে। ব্যাংকের পদস্থ কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান তারাই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত।

তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশ চলে গেলেও তার বিচার হয়নি। তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকে টাকা নেই। কিছুদিন আগে কিছু দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তা এখনও কার্যকর হয়নি। গ্রাহকেরা টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। অদূরদর্শী সিদ্ধান্তে ব্যাংকের নাম প্রকাশ করায় ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের ফান্ড শূন্য হয়েছে।

সোহরাব উদ্দীন বলেন, কিছু ব্যক্তি পুঁজিবাজারে এসে হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে চলে গেছে। তারা পরিচিত মুখ। ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতি এখন চরম চাপে। এ বিষয়ে সমাধান তো দূরের কথা, এ বিষয়ে বাজেটে আলোচনাই করা হয়নি।

জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য মাসুদ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত এবং যারা কর দেন না কালো টাকার মালিক তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এটি কোন বিবেচনায়  যুক্তিসংগত। 

তিনি বলেন, কালো টাকা দুই রকম। একটা বেশি কালো, আরেকটা কিছুটা কম কালো। যেটা অর্জনের রাস্তা বৈধ কিন্তু কর দেননি— যেমন চিকিৎসক, আইনজীবীদের আয় এটা কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া যায়। কিন্তু যেটার অর্জনের রাস্তাই অবৈধ সেটাকে কোনোভাবেই বৈধতা দেওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে দিতে হলেই জরিমানা দিয়ে এবং বিনিয়োগের শর্ত দিয়ে তা করা যেতে পারে।

মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী দাবি করেন, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো নিয়ে একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করছে। তার অংশ হিসেবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছে। এটা এমনভাবে লেখা হচ্ছে যেন বিশাল ভুল হয়ে গেছে।

কক্সবাজারে সেনানিবাস না থাকলে দখল করে নিত আরাকান আর্মি

সেনানিবাস না থাকলে কক্সবাজার এলাকা আরাকান আর্মি দখল করে নিত বলে জাতীয় সংসদে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার-৩ আসনের সরকার দলীয় এমপি ও হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল। 

নিজ নির্বাচনী এলাকা মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিয়ানমারের আরাকান আর্মি সশস্ত্র লড়াই করছে। আমার নির্বাচনী এলাকা থেকে মাত্র দুই কিলোমিটারের মধ্যে তাদের অবস্থান। প্রধানমন্ত্রী সেনানিবাস না দিলে আজকে কক্সবাজার অনিরাপদ হয়ে যেত। এতদিন তারা দখল করে ফেলত। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে সেনানিবাসের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন। আমাদের রক্ষিত করেছেন।

বাংলাদেশে অবস্থান করা মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়ে সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা নিয়ে একটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করা উচিত। তাহলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাড়বে, ভারতের নিরাপত্তা বাড়বে। মসজিদের ইমামদের চাকরি সরকারিকরণের দাবি জানান কমল।

কক্সবাজারের হাজার হাজার মানুষ বিদেশের বিভিন্ন কারাগারে আছে দাবি করে তিনি বলেন, মিয়ানমারের কারাগারে আটক অনেককে ফেরত আনা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে আটক বাংলাদেশিদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ফেরত আনার দাবি করছি। কক্সবাজার জেলার যেসব প্রবাসী সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ আরব উপসাগরীয় দ্বীপে থাকেন, তারা যখন বিভিন্ন মিশনে (কূটনৈতিক মিশন) পাসপোর্ট নবায়ন করতে যায়, মিশনে থাকা কর্মকর্তারা তাদের চেনেন না। বলে তোমরা রোহিঙ্গা। তারা বোঝে না কক্সবাজার ও রোহিঙ্গাদের ভাষার মধ্যে তফাত। তিনি সংশ্লিষ্ট মিশনগুলো কক্সবাজারের ভাষা বোঝা কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান। 

কমল বলেন, যেন  কক্সবাজারের মানুষ হয়রানি না হয়।

আরও পড়ুন

×