মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় অনুসন্ধান-৪
ট্রাস্টের ৩১ প্রতিষ্ঠানে স্বপ্নের জলাঞ্জলি

কোলাজ
আবু সালেহ রনি
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:৫৫ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৮:৪৮
সত্তর ও আশির দশকে শিশু-কিশোর সবার কাছেই ‘মিমি চকলেট’ ছিল খুবই আকর্ষণীয়। বিজ্ঞাপনের সংলাপে বলা হতো– ‘মামি আসেনি, কিন্তু মিমি এসেছে।’ দেশে তখন অন্য কোনো চকলেট বার তেমন পাওয়া যেত না। তাই ব্যবসা হয়েছে অনেকটা একচেটিয়া। অথচ ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে সেই মিমি চকলেট। টানা কয়েক বছর লোকসানের পর ২০১৮ সালে মিমি কোম্পানি বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।
স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকার তেজগাঁওয়ে মিমি চকলেট ফ্যাক্টরির তত্ত্বাবধানে ছিল মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ১৮টি লাভজনক প্রতিষ্ঠান নিয়ে ১৯৭২ সালে এই ট্রাস্ট গঠন করে বঙ্গবন্ধু সরকার। পরে জিয়া ও এরশাদ সরকার আরও ১৪টি প্রতিষ্ঠান যুক্ত করে। ট্রাস্টের উদ্যোগে আরও চারটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬। সব প্রতিষ্ঠানই বিভিন্ন সময়ে লাভজনক ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে শুধু মিমি চকলেট কোম্পানি নয়; একে একে বন্ধ হয়ে গেছে ট্রাস্টের ৩১টি প্রতিষ্ঠান।
এর মধ্যে রয়েছে দেশে কোমল পানীয় কোকা-কোলা উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান তাবানী বেভারেজও। আইনি মারপ্যাঁচ ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে কোকা-কোলা ২০০৬ সালে নিজস্ব উপায়ে বিপণন শুরু করে। ২০০৮ সালে তাবানী বেভারেজ কোম্পানিও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ট্রাস্টের আওতায় থাকা ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের ৭২.৩৮ একর সম্পত্তি রয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের বন্ধ থাকা ৩১টি প্রতিষ্ঠানের সম্পদ কাজে লাগিয়ে ‘আয়বর্ধক’ করার উদ্যোগ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। চলছে এসব প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত সার্বিক পর্যালোচনাও। এ লক্ষ্যে গত চার মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ট্রাস্টের ছয়টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক।
জানতে চাইলে উপদেষ্টা সমকালকে বলেন, ‘লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো কেন লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এবং ধুঁকছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই সরকারের মেয়াদ কতদিন, জানা নেই। তবে এরই মধ্যে আমরা ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে এমন একটি রূপরেখা করতে চাই, যার মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে যেতে পারে।’
সমকালের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ট্রাস্টের ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠানই লোকসানের দোহাই দিয়ে এইচ এম এরশাদের আমলের শেষদিকে এবং ১৯৯১ সাল থেকে বিএনপি সরকারের পাঁচ বছরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তখন থেকেই ব্যবস্থাপনার ঘাটতি ও দুর্নীতির কারণে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। ২০০৮ সালের মধ্যে বন্ধ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮-এ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৮ ও ২০২০ সালে বন্ধ হয়ে যায় ‘মিমি চকলেট’ লিমিটেড এবং ইস্টার্ন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। বর্তমানে ঢাকার টয়েনবি সার্কুলার রোডে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ জায়গায় পূর্ণিমা ফিলিং অ্যান্ড সার্ভিস স্টেশন চালু রয়েছে। এটি এখনও লাভজনক। এ ছাড়া ট্রাস্টের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত চারটি প্রতিষ্ঠান (মার্কেট) থেকে নিয়মিতি ভাড়া আদায় হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান বিগত সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়।
বন্ধ থাকা ৩১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাতটি গুটিয়ে নেওয়া হয় এবং সাতটি প্রতিষ্ঠানের পুঁজি প্রত্যাহার করা হয়। বিএনপি সরকারের আমলে ১৯৯২ সালে বাক্স রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ, ২০০১ সালে গুলিস্তান ফিল্ম করপোরেশন এবং ২০০৩ সালে দুর্বার অ্যাড ও ঢাকার আনিস ফিল্ম করপোরেশন গুটিয়ে ফেলা হয়। ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকারের আমলে গুটিয়ে ফেলা হয় লাভজনক চু-চিন-চৌ চায়নিজ রেস্তোরাঁ, ফিল্ম ইকুইপমেন্ট ও মডেল ইলেকট্রিক্যাল। এ ছাড়া পুঁজি প্রত্যাহার করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে– চট্টগ্রামের মদিনা ট্যানারি, হামিদিয়া অয়েল, হামিদিয়া মেটাল; ঢাকার বেঙ্গল ট্যানারি, ন্যাশনাল ট্যানারি, দি ন্যাশনাল ট্যানারি, ওমর সন্স এবং যান্ত্রিক পাবলিকেশন। বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিএনপি সরকারের আমলে বাংলাদেশ গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ (হাইসন্স), মেটাল প্যাকেজেস, ট্রাস্ট আধুনিক হাসপাতাল, দেলোয়ার পিকচার্স, গাজীপুরের ইউনাইটেড টোবাকো ও চট্টগ্রামের মালটিপল জুস কনসেনট্রেট প্লান্ট বন্ধ করা হয়। এ ছাড়া জিয়াউর রহমান, এরশাদ সরকারসহ বিভিন্ন সরকারের আমলে বন্ধ হয় ঢাকার হরদেও গ্লাস, মডেল কমপ্লেক্স, নাজ সিনেমা হল, মুন সিনেমা হল, গুলিস্তান সিনেমা হল, পারুমা (ইস্টার্ন), তাবানী বেভারেজ, সিরকো সোপ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, বাক্সলী পেইন্টস।
বন্ধ হওয়ার কারণ
কল্যাণ ট্রাস্ট বেহাল হওয়ার জন্য বিভিন্ন সরকারের আমলে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিই প্রধান কারণ। ২০০১ সালেও ট্রাস্টের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তাবানী বেভারেজের লাভ ছিল প্রায় ২৫ কোটি টাকা। অথচ ২০০৮ সালে লোকসান ও অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করা হয়। মিমি চকলেট কোম্পানি ১৯৬৫ সালে ঢাকার তেজগাঁওয়ে এক একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রতিষ্ঠানটি কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালেও প্রতিষ্ঠানটি মাসে গড়ে ৬০ লাখ টাকার চকলেট ও চুইংগাম বিক্রি করত। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি নেমে আসে বার্ষিক ১৮-২০ লাখ টাকায়। তবে ট্রাস্টের সংকট মূলত শুরু হয় ১৯৭৯ সালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি স্কেলে বেতন দেওয়ার পর থেকে। ১৯৭৮ সালে পাকিস্তান আমলের দায়-দেনা থাকা ১১টি প্রতিষ্ঠান কল্যাণ ট্রাস্টকে দেয় তৎকালীন সরকার।
এই দায় শোধ হওয়ার আগেই ১৯৭৯ সালে কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিয়াউর রহমান দুই বছর আগে থেকে তখনকার নতুন জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর করার নির্দেশ দেন। ফলে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বাড়তি চাপে লোকসান গুনতে শুরু করে ট্রাস্টের অনেক প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে তখন চট্টগ্রামে ১৬ কোটি টাকায় ‘মাল্টিপল জুস কনসেনট্রেট প্লান্ট’ স্থাপন করা হয়। কিন্তু নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কয়েক মাসের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় ওই প্লান্ট। এতে লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়ে।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী সমকালকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ১৪টি লাভজনক প্রতিষ্ঠান নিয়ে ট্রাস্ট গঠন করেছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ভালো ছিল। কিন্তু দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। এ জন্য বিগত সব সরকারই দায়ী। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। এখনও যেসব সম্পদ রয়েছে, সেগুলো কাজে লাগানো হলে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব।’
সাম্প্রতিক উদ্যোগ
জানা গেছে, দায়িত্ব গ্রহণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সমস্যা চিহ্নিত করা ও সমাধান বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়নের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ট্রাস্টের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এ লক্ষ্যে ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ড ও নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। ট্রাস্টে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিজি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পরে উপদেষ্টা ও নতুন ডিজি ট্রাস্টের অধীনে থাকা ১৩টি প্রতিষ্ঠান ও এর সম্পত্তি পরিদর্শন করেন। এ সময় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জমির দলিল ও দখলস্বত্ব নিয়ে যে আইনি জটিলতা রয়েছে, তা নিরসনেও নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের চট্টেশ্বরী রোডে দেলোয়ার পিকচার্স লিমিটেডের চারতলা ভবনটি সিনেপ্লেক্স চালুর জন্য উপযোগী কিনা, তা বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত দেন উপদেষ্টা।
সিনেপ্লেক্সের জন্য ভবনটি উপযোগী না হলে নতুন ভবন নির্মাণেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঢাকায় মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোডে তাবানী বেভারেজের জায়গায় টিভিএস কোম্পানিকে দেওয়া ভাড়ার চুক্তিনামা ও ভাড়ার হার পুনর্নির্ধারণ বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ১৯৯৫ সালে বন্ধ হওয়া ইস্টার্ন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের মালপত্র ও যন্ত্রপাতি টেন্ডারের মাধ্যমে ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় বিক্রির বিষয়টি অনুমোদন করেন উপদেষ্টা। একইভাবে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের জমিতে থাকা দোকান ও বাণিজ্যিক ব্যাবহারের জন্য ভাড়া বা বিক্রির বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন সমকালকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোকে আয়বর্ধক করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার জন্য আলোচনা চলছে।’
সম্পদ কত?
ট্রাস্টের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে ৭২.৩৮ একর জমি রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মোট সম্পদের পরিমাণ ৮১৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এফডিআর থেকে পাওয়া লভ্যাংশের একটি অংশ দিয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের ছাত্রবৃত্তি প্রদান করা হয়। এ ছাড়া এফডিআর থেকে পাওয়া লভ্যাংশের অপর অংশ, গুলিস্তানসহ কয়েকটি মার্কেটের ভাড়া ও পূর্ণিমা ফিলিং স্টেশন মিলিয়ে পাওয়া টাকা দিয়ে বর্তমানে ট্রাস্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যয় নির্বাহ করা হচ্ছে। একসময় ট্রাস্টের অধীনে প্রায় ১০ হাজার কর্মচারী থাকলেও এখন কর্মরত ১৪২ জন।
বিগত সরকারগুলো ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচাতে ১২৬ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণসহ গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিলও মওকুফ করেছে। ১৯৮১ সালে সরকার ট্রাস্টের সাতটি প্রতিষ্ঠানের ১৩ দশমিক ৮৪ একর জমি ও যন্ত্রপাতি মাত্র ১০ কোটি ৩৩ লাখ টাকায় বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়-দেনা মেটায়।
আছে দুর্নীতির অভিযোগও
বিভিন্ন সরকারের আমলে ট্রাস্টে দুর্নীতির কারণে বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইফতেখারুল ইসলাম খানসহ একই পদের অন্তত সাতজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে ওঠে। ইফতেখারুল ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করছে।
এদিকে ট্রাস্টের আওতাধীন ঢাকার গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স-২-এর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস বিক্রির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ উঠেছে। শপিং কমপ্লেক্স-২-এর ব্যবসায়ী মো. মান্নান মিয়াসহ সংশ্লিষ্টরা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়, ট্রাস্টের নামে বরাদ্দ জমিতে ২০ তলা ভবন নির্মাণের নামে প্রায় তিনশ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে।
জানা গেছে, ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন সম্পদ নানাভাবে বিক্রি করা হয়েছে। সম্পত্তি বিক্রি ও ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রেও দুর্নীতি হয়। এসব কারণেই গত তিন দশকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠানগুলো লাভজনক হয়নি।
বেদখল সম্পত্তি
ট্রাস্টের ভূ-সম্পত্তিসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য ধরা হয়েছে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। তবে এর মধ্যে ঢাকার তেজগাঁও ও চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় মেটাল প্যাকেজেস লিমিটেডের চার একর, নারায়ণগঞ্জের ডালপট্টির ১ দশমিক ১১ একর এবং মদনগঞ্জে ৩ দশমিক ১৯ একর, ঢাকার কেএম দাস লেনে ৩০ শতাংশসহ মোট ৬ একর সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে। এগুলো উদ্ধারে ট্রাস্টের পক্ষে-বিপক্ষে আদালতে অর্ধশতাধিক মামলা বিচারাধীন।
আছে সম্ভাবনাও
জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে আগের প্রতিষ্ঠানগুলো চালু না করে বাস্তবতার নিরিখে নতুন প্রতিষ্ঠান চালু, মার্কেট নির্মাণসহ ২৬টি আয়বর্ধক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে তাবানী বেভারেজের জায়গায় থাকা একটি গভীর নলকূপকে (কোকা-কোলা উৎপাদনে ব্যবহৃত) ব্যবহার করে মিনারেল ওয়াটার কোম্পানি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামে ট্রাস্টের জায়গায় প্রায় দেড় ডজন বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। সেখান থেকে নিয়মিত ভাড়া আসছে।
ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির প্রধান ডা. এম এ হাসান সমকালকে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর সুফল মেলেনি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা শুধু তাদের সরাসরি কাজে লেগেছে। এর বাইরে যা কিছু তা ব্যর্থ হয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে। এরা সেখানে স্বার্থ খুঁজেছে অর্থাৎ দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলে এখনও ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠানগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে লাভজনক করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারগুলো এখনও অসহায়। ট্রাস্টের সম্পদ কাজে লাগিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে সহায়তা করা প্রয়োজন।