ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

কবি হেলাল হাফিজকে নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কাজ করবে

সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

কবি হেলাল হাফিজকে নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কাজ করবে

কবি হেলাল হাফিজকে শেষ বিদায় জানাতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সমবেত হন তার সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।। ছবি: সাজ্জাদ নয়ন

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩:১১ | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৭:৪৫

কবি বেঁচে থাকেন তার কবিতায়। হেলাল হাফিজ তার কবিতাতেই বেঁচে থাকবেন। তিনি একাকী জীবনকে বেছে নিয়েছিলেন। আমি জানি না তার এই জীবন নিয়ে আক্ষেপ ছিল কি না। প্রয়াত কবি হেলাল হাফিজকে নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কাজ করবে। আমি নিশ্চিত দ্রুতই কিছু একটা জানানো হবে মন্ত্রণালয় থেকে।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলা একাডেমিতে প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজের প্রথম জানাজা শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এসব কথা বলেন। এছাড়াও তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে শেষ বিদায় জানাতে জানাজায় অংশ নেন।

তিনি বলেন, মাত্র একটি কবিতার বই লিখে একটি জাতির শিল্প সংস্কৃতির ইতিহাসে আর কোনও কবি এতো প্রভাব রাখতে পেরেছেন কি না আমার জানা নেই। বাংলাদেশের সংস্কৃতি জগত কবি হেলাল হাফিজের শূন্যতা বোধ করবে।

উপদেষ্টা ফারুকী আরও বলেন, তিনি খুব বেশি কবিতা লেখেননি। খুব বেশি বইও বের হয়নি তবুও তারুণ্য ও যৌবনের গান বললেই হেলাল হাফিজের নাম মনে পড়ে। এটা তার অর্জন।

কবি হেলাল হাফিজকে শেষ বিদায় জানাতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সমবেত হন তার সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ছবি- সাজ্জাদ নয়ন

শেষ জীবনে কবি হেলাল হাফিজ নিসঙ্গতা, একাকিত্বে জীবন অতিবাহিত করে গেছেন। তার মৃত্যুর পরও তাকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকার কী উদ্যোগ নেবে; সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, কবি বেঁচে থাকেন তার কবিতায়। হেলাল হাফিজ তার কবিতাতেই বেঁচে থাকবেন। তিনি একাকী জীবনকে বেছে নিয়েছিলেন। আমি জানি না তার এই জীবন নিয়ে আক্ষেপ ছিল কি না। তবুও কবি হেলাল হাফিজকে নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কাজ করবে। আমি নিশ্চিত দ্রুতই কিছু একটা জানানো হবে মন্ত্রণালয় থেকে।

জানাজায় তার দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সহকর্মীরা তাকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে এসময় হাজির হন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। জানাজা শেষে তার ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় হেলাল হাফিজকে বিদায় জানানোর সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তার ভাতিজি। 

 

জানাজায় আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজমসহ অন্যরা।

হেলাল হাফিজকে বিদায় জানানোর সময় এভাবেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তার ভাতিজি। ছবি: সাজ্জাদ সুমন

প্রয়াত কবিকে পরে বাদ জোহর জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।

কবির মরদেহ গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন কবির বড়ভাই দুলাল এ হাফিজ।

এর আগে শুক্রবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তার মৃত্যুতে শোকাহত বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও তার অগণিত ভক্তরা। 

প্রতিভাবান কবি হেলাল হাফিজের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায়। তার প্রথম কবিতার বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত বইটির মুদ্রণ হয়েছে ৩৩ বারেরও বেশি। লেখালেখির পাশাপাশি হেলাল হাফিজ দৈনিক যুগান্তরসহ বিভিন্ন পত্রিকায় দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেন। ১৯৮৬ সালে প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশের পর জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে আসেন কবি। 

দেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সময় হেলাল হাফিজের ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’র পঙক্তি ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ উচ্চারিত হয় মিছিলে, স্লোগানে, কবিতাপ্রেমীদের মুখে মুখে। ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তার আগে খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কারসহ নানা সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন

×