ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বিজয়ের মাস

অবরুদ্ধ ঢাকা, চূড়ান্ত বিজয়ের অপেক্ষা

অবরুদ্ধ ঢাকা, চূড়ান্ত  বিজয়ের অপেক্ষা

প্রতীকী ছবি

গৌতম মণ্ডল

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:৫৫

১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর, উত্তাল রণাঙ্গন। শুধু বিজয়ের অপেক্ষা। পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর তুমুল লড়াই। যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়। বিজয়ের খুব কাছাকাছি বাংলার মুক্তিকামী মানুষ।

দৃঢ় চিত্তের মুক্তিযোদ্ধারা এদিন গেরিলা কৌশলে প্রতিরোধ করেন পাকিস্তানি সেনাদের। একে একে অবস্থান হারাতে থাকে শত্রুরা।
 ত্বরান্বিত হয় বিজয়। একাত্তরের ১৫ ডিসেম্বর তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে অন্যরকম এক দিন।

ঐতিহাসিক দলিল বলে, ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, বগুড়া, খাগড়াছড়ি ও পাবনা জেলা হানাদারমুক্ত করে। বিভিন্ন স্থানে পথে পথে গড়ে তোলে প্রবল প্রতিরোধ। পিছু হটতে থাকে হানাদার বাহিনী। এক পর্যায়ে শুরু হয় মুক্তিবাহিনীর বিজয়োল্লাস। এ সফলতাই ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণের দিকে নিয়ে যায়, নিশ্চিত হয় তাদের পরাজয়।
গাজীপুরের জয়দেবপুরে এদিন মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পর্যুদস্ত হয় পাকিস্তানি সেনারা। ঢাকার অদূরে টঙ্গী, ডেমরা ও নারায়ণগঞ্জে গেরিলা আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী। সাভার পেরিয়ে গাবতলীর কাছাকাছি অবস্থান নেয় যৌথ বাহিনীর একটি দল। রাতে সেখান থেকে ঢাকার দিকে রওনা হয় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রসেনারা। পথে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় ‘কাদেরিয়া বাহিনী’। রাত ২টার দিকে যৌথ বাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের মুখোমুখি হয়। চলে রাতভর লড়াই। চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে পাকিস্তানি সেনাঘাঁটিতে আক্রমণ চালায় একদল মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে ফৌজদারহাট পর্যন্ত। একে একে সব বাধা অতিক্রম করে ঢাকামুখে রওনা হয় মুক্তিবাহিনী। মুক্তির স্লোগান দিয়ে ঢাকার পথ ধরে ময়মনসিংহ, সিলেট, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ঢাকা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে শহরের বাসিন্দারা গড়ে তোলেন প্রবল প্রতিরোধ। চেকপোস্ট স্থাপন করে সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত করে পাকিস্তানি সেনারা। শহরের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ ও গোলাগুলি চলতে থাকে। ঢাকা পরিণত হয় উত্তাল রণাঙ্গনে। 

তার আগে বিকেলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানেকশ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজীকে জানিয়ে দেন, আত্মসমর্পণ করতে হবে শর্তহীন, নইলে যুদ্ধবিরতি নয়। তবে প্রস্তাবের সাড়া দিয়ে ১৫ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা থেকে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকার ওপর বিমান হামলা বন্ধ রাখার কথা জানান শ্যাম মানেকশ। আত্মসমর্পণ না করলে প্রতিশোধ নেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেন। গভীর রাতে এই বার্তা পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে পাঠান নিয়াজী। পরে সেখান থেকে নির্দেশনা আসে আত্মসমর্পণের। এভাবে একদিকে আক্রমণ প্রতিরোধ, অন্যদিকে দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের দিনক্ষণ নির্ধারণে পেরিয়ে যায় ১৫ ডিসেম্বর। 

এদিকে, পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসর্মপণ নস্যাৎ করতে দিনভর চেষ্টা চালায় কিছু বিদেশি শক্তি। আত্মসমর্পণ ঠেকাতে কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে। তবে মুক্তিকামী বাঙালির প্রবল আকাঙ্ক্ষা ও মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত টেকেনি সেই ষড়যন্ত্র।
 

আরও পড়ুন

×