ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ডিএমটিসিলের বিজ্ঞপ্তি

পাতাল রেলের খননে ভবন ধসের শঙ্কা নেই

ধসে গেলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে

পাতাল রেলের খননে ভবন ধসের শঙ্কা নেই

ছবি-সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২১:১৯

মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সরকারি কোম্পানি ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, পাতাল রেলের জন্য সুরঙ্গ (টানেল) খননে সড়ক এবং আশেপাশের ভবন ধসের শঙ্কা নেই।

সংস্থাটি সোমবার বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, টানেল বোরিং মেশিনে (টিবিএম) রেলপথ নির্মাণের সুরঙ্গ খনন করা হবে। রাজধানীর ঢাকার মাটির গুণাগুণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আর্থ প্রেসার ব্যালেন্সড (ইপিবি) টিবিএম ব্যবহার করা হবে সুরঙ্গ খননে। ইপিবি টিবিএমের সুবিধা হলো, মাটির যে স্তরের সুড়ঙ্গ খনন করা হবে, তাতে বিদ্যমান চাপের সমান ও বিপরীতমুখী চাপ প্রয়োগ করে খনন কাজ করা হবে। ফলে খনন কাজের সময় নির্মাণাধীন সুড়ঙ্গের আশেপাশের মাটিতে নতুন চাপ সৃষ্টি হবে না। এতে উপরিভাগের মাটি দেবে যাবার আশঙ্কা খুবই কম। সুড়ঙ্গ খননের সময় ভূপৃষ্ঠে  সড়কের কোন অংশ দেবে গেলে, তা ঠিকাদার ঠিক করে দেবেন।

রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলের (এমআরটি-১) পুরোটা পাতালে নির্মিত হবে। এমআরটি-১ এর অপরাংশ হলো, পূর্বাচলের পিতলগঞ্জ থেকে নতুন বাজার। এ অংশের পিতলগঞ্জ থেকে জোয়ারসাহার পর্যন্ত রেললাইন বসবে উড়ালপথে। বর্তমানে যেভাবে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলছে।

মাটির নীচে খনন করে রেললাইন এবং স্টেশনের নির্মাণ কাজের কারণে প্রকল্প এলাকার সড়কে এবং আশেপাশের ভবন ধসে যাবে কী না এ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। রামপুরা, মালিবাগসহ বিভিন্ন এলাকা ভবন মালিকদের মধ্যে এ গুজব ছড়িয়েছে।

এর জবাবে ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, টানেল খননের সময়ে এমআরটি-১ এ প্রকল্প এলাকার আশেপাশে উঁচু ভবনের ক্ষতি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতা থাকবে। মাটি নরম হলেও, ঢাকায় পানির স্তর অনেক নীচে থাকায় তা টানেল নির্মাণের উপযোগী। যে এলাকায় টিবিএমের মাধ্যমে খনন চলবে, এর দুই পাশের ভবনের নিচে সেন্সর লাগানো হবে। কোথাও ধস বা ভবন দেবে যাওয়ার  আশঙ্কা দেখা দিলে, সেন্সর তা আগাম জানাবে। তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপরও যদি কোনো স্থাপনার ক্ষতি হয়, তাহলে মেরামত করে দেওয়া হবে।

এমআরটি-১ প্রকল্পের পরিচালক আবুল কাশেম ভূঁইয়া সমকালকে বলেছেন, বিমানবন্দর থেকে রামপুরা পর্যন্ত সড়ক অনেক প্রশস্ত। এই এলাকায় সড়কের ৩০ থেকে ৩৫ মিটার গভীরে পাশাপাশি দুটি টানেল নির্মাণ করা হবে। একটি দিয়ে ট্রেন যাবে। অপরটি দিয়ে আসবে। রামপুরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত সড়ক সরু। এ অংশে ১০ মিটার গভীরে একটি এবং ৩০ থেকে ৩৫ মিটার গভীরে আরেকটি টানেল নির্মাণ করা হবে। অর্থাৎ একটি টানেল আরেকটির উপর দিয়ে যাবে।

বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর চার পৃথক প্যাকেজে পাতাল রেল নির্মাণের কাজ করা হবে। প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, এগুলোর দরপত্র আহ্বান কার্যক্রম চলছে। কাজ পাওয়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান টিবিএম আনবে। চারটি অংশে মোট ৯টি টিবিএম থাকবে। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার বলা যাবে কবে নাগাদ খনন শুরু হবে। প্রত্যেকটি টিবিএম দিনে ১০ থেকে ১২ মিটার সুড়ঙ্গ খুঁড়তে পারবে। খোঁড়ার সঙ্গে সঙ্গে কংক্রিট ব্লক বসিয়ে টানেল নির্মাণ করা হবে। ফলে মাটি ধসের শঙ্কা নেই।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডিপোর ভূমি উন্নয়নের মাধ্যমে এমআরটি-১ এর আনুষ্ঠানিক নির্মাণ কাজ শুরু হয়। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৭ শতাংশ। ডিএমটিসিএলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ডিসেম্বর নাগাদ পাতাল ট্রেন চলবে। তবে কোম্পানিটি সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, আগামী বছরের আগে টানেল খননের কাজ শুরুর সম্ভাবনা নেই। ফলে ২০২৮ সালের আগে ট্রেন চলাচল শুরুর আশা নেই।

এমআরটি-১ নির্মাণে ব্যয় হবে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এতে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ঋণ দেবে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই লাইনে দিনে ৮ লাখ যাত্রী পরিবহন করা যাবে। 

আরও পড়ুন

×