দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক কাল
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে ‘সিন্ডিকেট’ নিয়ে মারামারি

.
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫ | ০১:০২ | আপডেট: ২০ মে ২০২৫ | ০৭:৩২
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য খুলতে যাচ্ছে– খবরে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে জনশক্তি ব্যবসায়ী ‘সিন্ডিকেটের’ পক্ষে-বিপক্ষের লোকজন। গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠনের (বায়রা) কিছু সদস্য সিন্ডিকেটের ‘বিরুদ্ধে’ সংবাদ সম্মেলন ডাকলে তাতে হামলা করেন অপর পক্ষের ব্যবসায়ীরা।
গত শনিবার পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র এবং মানবসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। আগের মতো নির্দিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি নয়, বাংলাদেশের সব বৈধ এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দিতে অনুরোধ জানান তিনি। আগামীকাল বুধবার ও পরের দিন ঢাকায় দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
এ অবস্থানের জন্য গতকাল সংবাদ সম্মেলন থেকে সিন্ডিকেটবিরোধী ব্যবসায়ীরা উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছিলেন। তবে তাদের বিরোধী ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, সব এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেওয়ার নামে আদতে শ্রমবাজার খোলার পথে বাধা তৈরি করা হচ্ছে। ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আতিকুর রহমান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে দুপুর ১২টার দিকে কয়েক ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলনস্থলে জোর করে ঢুকে সিন্ডিকেটবিরোধী ব্যবসায়ীদের মারধর করে। ভাঙচুর চালায় ডিআরইউতে। পুলিশ এসে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করে। পরে দুই পক্ষ পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে।
২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেয় মালয়েশিয়া। এ এজেন্সিগুলো সিন্ডিকেট নামে পরিচিতি পায়। সেবার শুরুতে ৩৭ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও কর্মীপ্রতি আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা নেয় এজেন্সিগুলো। জিটুজি প্লাস নামের এই পদ্ধতিতে দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৮ সালে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে মালয়েশিয়া।
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের জন্য মালয়েশিয়ার চক্রকে দায়ী করেছিল বাংলাদেশ। তবে শনিবারের বৈঠকের পর মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিরা নিশ্চিত করেন, মালয়েশিয়া কোনো ধরনের অনিয়মে জড়িত ছিল না, যেমনটা আগে উত্থাপন করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে কিনা– এ বিষয়ে আসিফ নজরুল এবং প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়ার বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল।
সংবাদ সম্মেলন ডাকা ব্যবসায়ীদের নেতা বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ তুলে নিয়ে আগের সরকারের অনিয়মকে বৈধতা দেওয়া যায় না।
সংবাদ সম্মেলনে প্রবেশ নিয়েই বায়রার আরেকটি পক্ষের লোকজন হট্টগোল করেন। ফখরুল ইসলামের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন কিছু সদস্য। এক পর্যায়ে তারা ফখরুলকে কিল-ঘুষি দেওয়া শুরু করলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়।
প্রাণ বাঁচাতে ডিআরইউর সাগর-রুনি মিলনায়তন থেকে ফখরুল পাশের ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্র্যাব) অফিসে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানেও তাঁকে ধাওয়া করে কয়েকজন। আল-হাবিব নামের রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নজরুল ইসলামকে পেটায়। পুলিশ আসার পর অন্যরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।
ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, ভাড়া নিয়েছিলেন ফখরুল ইসলাম। তারা যেন সংবাদ সম্মেলন করতে না পারেন, সে জন্য আরেকটি পক্ষ সকাল থেকেই চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে তারা হামলা করে। ডিআরইউর ইতিহাসে যা আগে ঘটেনি। পরবর্তী সময়ে তাদের দুই পক্ষের আপস হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বায়রার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রিয়াজ-উল ইসলাম বলেছেন, আগের সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা পালিয়ে গিয়ে বিদেশে বসে আবারও সিন্ডিকেট করতে চাইছেন, কিছু রাজনীতিকও যুক্ত হয়েছেন।
ফখরুল ইসলাম বলেন, সাধারণ ব্যবসায়ীরা চান সিন্ডিকেট নয়, সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত থাকবে। মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক কর্মীরা বিএমআইটির ডেটাবেজে নিবন্ধন করবেন। রিক্রুটিং এজেন্সি ডেটাবেজ থেকে কর্মী বাছাই করবে। কর্মী স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ভিসা পাওয়ার পর এবং মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় তিন ধাপে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা দেবেন। এভাবে করলে কর্মীরা দালালের হাত ধরে আসবেন না, সিন্ডিকেটও হবে না।
আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীরা পালিয়ে যাওয়ার পর কোন রাজনীতিকরা সিন্ডিকেটে জড়িত– প্রশ্নে ফখরুল ইসলাম বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কাজী মফিজুর রহমান রয়েছেন তাদের সঙ্গে।
ওই পক্ষের সংবাদ সম্মেলন শেষে ডিআরইউর শফিকুল কবীর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আতিকুর রহমান বলেন, বায়রার সাধারণ সদস্য হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে গিয়েছিলাম। তারা আমাদের বের করে দেয়। যারা আজকের সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল, তারা ভারতের স্বার্থকে হাসিল করতে চায়। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ করতে চায়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বায়রা নেতা ফখরুল এতদিন সিন্ডিকেটে যোগ দিয়ে টাকা উপার্জন করেছেন। এখন মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ করতে চান। এসব কুচক্রীর কথা না শুনে মালয়েশিয়া সরকারের নীতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে সে দেশে কর্মী পাঠাতে হবে। তা না হলে মালয়েশিয়া সরকার অন্য দেশ থেকে প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়ে নেবে।
- বিষয় :
- মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার