স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন
জেলা-উপজেলায় জটিল রোগের চিকিৎসা দিতে সুপারিশ

ফাইল ছবি
তবিবুর রহমান
প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫ | ২৩:৫৬
রাজধানীর বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের ওপর রোগীর চাপ কমাতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে জটিল রোগের চিকিৎসাসেবা চালু করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া ধাপে ধাপে যথাক্রমে বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কমিশনের প্রতিবেদনে এসব প্রস্তাব উঠে এসেছে।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৫ মে এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিশন। এতে বলা হয়, জেলা সদর হাসপাতালে যেসব অবকাঠামো রয়েছে, সেই অবকাঠামো দিয়েই জটিল রোগীর বিশেষায়িত সেবা দেওয়া সম্ভব। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী এবং নতুন যন্ত্রপাতি লাগবে। এর ব্যবস্থা করতে হবে। এসব হাসপাতালে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সহায়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। হাসপাতালে জরুরি বিভাগগুলো পরিচালিত হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নেতৃত্বে। ফার্মেসি, ডায়াগনস্টিক, রক্ত সঞ্চালন ও অ্যাম্বুলেন্স নেটওয়ার্ক গঠন করতে হবে। রোগীর চিকিৎসায় নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) সেবা উন্নত করা এবং প্রতিটি বিভাগে আন্তর্জাতিকমানের একটি আঞ্চলিক রেফারেল হাসপাতাল গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ বিদেশি বিনিয়োগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন সমকালকে বলেন, দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগে। এসব রোগের চিকিৎসাসেবা এখনও ঢাকাকেন্দ্রিক। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কমাতে ও চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য করতে জেলা পর্যায়ে উচ্চতর (টারশিয়ারি) স্তরের সেবা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে বিশেষত অসংক্রামক রোগের জটিল চিকিৎসা জেলা পর্যায়ে মিলবে। ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হার্টের সমস্যা, থ্যালাসেমিয়াসহ এসব রোগের চিকিৎসায় অনেক ক্ষেত্রে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে করতে হয়। এ জন্য ৬৪ জেলার সদর হাসপাতালে আইসিইউ সেবা চালুর সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চিকিৎসাসেবার নানা অবকাঠামো রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অপারেশন থিয়েটার, এক্স-রেসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব ব্যবস্থাই রয়েছে। তবে যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ৩৫ ভাগ যন্ত্রপাতিই বিকল। এ ছাড়া পর্যাপ্ত জনবলও নেই মাঠ পর্যায়ে। ফলে জেলা পর্যায়ে সেবা না পেয়ে রোগীরা ঢাকামুখী হচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, এসব হাসপাতাল সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। প্রতি রোগীর জন্য গড়ে ১০ মিনিটের পরামর্শ সময় নিশ্চিত করতে হবে। অতিদরিদ্র বা যারা দেশের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ, তারা সব হাসপাতালে বিনামূল্যে সব সেবা পাবেন।
জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, রোগীর জন্য ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ জন্য অনেক অর্থের দরকার হবে। এই অর্থ কোথা থেকে আসবে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থের জন্য বাজেট বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে কমিশন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ হাতে পাওয়ার পর কিছু বেশ কিছু কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকামুখী রোগীর চাপ কমাতে সেবা বিকেন্দ্রীকরণে উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে দুটি জিনিস বেশি প্রয়োজন হবে– একটি অর্থ, অন্যটি দক্ষ জনবল। দুটিই উন্নত করতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন বাজেট বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাত গুরুত্ব পায়নি। আবার ২৫-৩০ বছর দেখা গেছে, স্বাস্থ্যের ৬০, ৭০ বা ৭৫ ভাগের বেশি বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যবহার হয় না। বিভিন্ন স্তরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকদের অর্থ ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’
- বিষয় :
- চিকিৎসা