পাইপলাইনে তেল পরিবহন শুরু চলতি মাসেই

.
হাসনাইন ইমতিয়াজ
প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫ | ২৩:৪৮
চট্টগ্রাম-ঢাকা জ্বালানি তেল ডিজেল পাইপলাইন বাণিজ্যিক পরিবহনের জন্য প্রস্তুত। পরীক্ষামূলক তেল পরিবহন সফলভাবে শেষ হয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি বাণিজ্যিকভাবে ডিজেল পরিবহন শুরু হবে। এতে বছরে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা গেছে।
শুরুতে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। পরে সংশোধিত ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায়। এটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ২৩৭ কিলোমিটার।
বিপিসি চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান সোমবার সমকালকে বলেন, ‘আশা করছি দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে সেনাবাহিনী পাইপলাইন প্রকল্পটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে। তার পরই আমরা বাণিজ্যিক কাজ শুরু করে দেব। এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পাইপলাইনে পরীক্ষামূলকভাবে ছয় হাজার টন ডিজেল পরিবহন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় তেল পরিবহনের ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। যেমন রেলওয়ের ওয়াগন থাকলেও লোকোমোটিভ পাওয়া যায় না। সড়কপথে পণ্য পরিবহনে যানজটসহ নানা সমস্যা হয়, দীর্ঘ সময় লাগে। জলপথেও সমস্যা হয়। পাইপলাইনটি চালু হলে এসব সমস্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। তিনি বলেন, আমাদের ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মধ্যে ডিজেল ৬৫ শতাংশ। ডিজেলের সরবরাহ নিশ্চিত হবে পাইপলাইনটি চালু হলে। পেট্রোল ও অকটেন আগে যেভাবে সরবরাহ করা হতো, কখনও রেলওয়ে ওয়াগনে করে, কখনও নদীপথে ট্যাঙ্কারে করে– সেভাবেই আসবে।
জানা গেছে, গত ২৪ জুন থেকে পরবর্তী পাঁচ দিন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোতে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই সরবরাহ শতভাগ সফল বলে বিপিসি কর্মকর্তারা জানান।
দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৯২ শতাংশ আমদানি করা হয়। বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৮০ থেকে ৯০ লাখ টন। পরিশোধিত তেলের মধ্যে সরকারিভাবে সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয় ডিজেল। বর্তমানে ঢাকায় তেল পরিবহনে প্রথমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে নেওয়া হয়। এর পর সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় তেল পরিবহন করা হয়। পরিবহনে ব্যবহৃত হয় ১৫০টি ছোট-বড় জাহাজ। এতে বছরে ২০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়।
বিপিসির এক পরিচালক জানান, পাইপলাইনটি চালু হলে সড়ক ও জলপথে পরিবহনের জন্য কোনো টাকা ব্যয় হবে না। শুধু পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ বিল, জমির ভাড়াসহ কিছু খাতে ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকা। বছরে প্রকল্পটি থেকে আয় হবে ৩২৬ কোটি টাকা। সাশ্রয় হবে আড়াইশ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে যে টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা আগামী ১৬ বছরের মধ্যে উঠে আসবে। এ ছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে জ্বালানি তেল পরিবহন খরচ কমবে এবং নির্বিঘ্ন হবে সরবরাহ ব্যবস্থা। একই সঙ্গে পরিবেশ দূষণ কমবে। শুষ্ক মৌসুমে নৌপথে নাব্য কমে যাওয়ায় তেল পরিবহন করার যে সংকট, তাও আর থাকবে না। নদীপথে লাইটারেজে করে পরিবহনকে কেন্দ্র করে একটি বিশাল সিন্ডিকেট আছে। পাইপলাইন চালু হয়ে গেলে এসব বিষয়ও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করছে বিপিসি।
- বিষয় :
- তেল