ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ

সমাজ-পরিবারও এগিয়ে আসুক

সমাজ-পরিবারও এগিয়ে আসুক

টিকিটের জন্য সৌদি এয়ারলাইনসের কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেছেন প্রবাসীরা (ফাইল ছবি)

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২০ | ১৪:৪৪

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে রাজধানীসহ দেশজুড়ে যে বিক্ষোভ, সমাবেশ, মানববন্ধন, সাংস্কৃতিক আয়োজন চলছে, তার সমাজ জাগরণমূলক চরিত্র আমাদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিতই করে। নারীর অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের দেশে আইনি সুরক্ষা ব্যবস্থা ও প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান যেমন রয়েছে, তেমনই জনপরিসরে এ ব্যাপারে আলোচনা ও উদ্যোগও কম নেই। কিন্তু তারপরও পরিস্থিতি যেন দিনের পর দিন অবনতিই হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও নারী নির্যাতনের খবর প্রকাশের দুর্ভাগ্যজনক খবর আমাদের প্রকাশ করতে হয়। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের অভিমত, বিশ্নেষণ ও সাক্ষাৎকারও আমরা প্রায় নিয়মিত বিরতিতে প্রকাশ করে থাকি। এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আমরা কম তাগিদ ও সুপারিশ প্রদান করিনি। কিন্তু তারপরও যেন কিছুতেই সভ্যতার এই লজ্জা সম্পূর্ণ নিবারণ হচ্ছে না। এমনকি সিলেটে ও নোয়াখালীতে দুই গৃহবধূ বর্বরতম নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর গত কয়েক দিনে যখন দেশজুড়ে এ নিয়ে তোলপাড়, তখনও নারী নির্যাতন থেমে নেই। বরং আমাদের বেদনামিশ্রিত বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে- নারী নির্যাতনের অঘটন যেন গত কয়েক দিনে আরও বেড়েছে। এতসবের মধ্যেই একজন বয়স্ক নরপশু দুই দিনে চারজন শিশুকে ধর্ষণ করেছে খোদ রাজধানীতে- এই খবরও আমাদের দেখতে হয়েছে।

আমাদের এও স্বীকার করতেই হবে যে, নারী নির্যাতনকারী বা ধর্ষকদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও সম্প্রতি বেড়েছে। সিলেট ও নোয়াখালীর অঘটনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতরা তো বটেই, প্রায় প্রত্যেকটি নির্যাতনের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। আগে যেখানে ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধ স্থানীয় রাজনীতিক, সমাজপতি ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতিনিধিরা 'মিটমাট' করে ফেলতে দেখা গেছে, গত কিছুদিনে এই অন্যায্যতারও প্রতিকার হতে দেখছি আমরা। সর্বশেষ সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০' দ্বিতীয় দফা সংশোধনের চূড়ান্ত খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন সংসদ অধিবেশন না থাকায় আজ মঙ্গলবারই সংশোধিত এই ভাষ্য অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে এবং পরবর্তী সময়ে সংসদে পাস হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। আইনটির বিদ্যমান ভাষ্যে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর প্রাণহানি হলেই কেবল মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল। নাগরিক সমাজের একটি পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে আইনটি সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। চলমান বিক্ষোভ-সমাবেশগুলো থেকেও উঠেছিল একই দাবি। আমরা দেখেছি, খোদ সরকারের মধ্য থেকেও বিভিন্ন সময়ে এই দাবি উঠেছে। বস্তুত এই সংশোধনীর মধ্য দিয়ে ধর্ষণ বা নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারের সদিচ্ছারও প্রতিফলন ঘটেছে। কিন্তু আগের মতো এখনও আমাদের সম্পাদকীয় অবস্থান স্পষ্ট- ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধানই শেষ কথা হতে পারে না। কয়েকদিন আগে এ প্রসঙ্গে প্রকাশিত সম্পাদকীয় স্তম্ভের মতো এখনও আমরা মনে করি যে, আইনের প্রয়োগ ও অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করাই মূল বিষয়। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাষ্ট্রপক্ষ বা বাদী নিযুক্ত আইনজীবীদের আন্তরিকতা ও দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। এই রাজনৈতিক অঙ্গীকারও খুবই জরুরি যে- ধর্ষক বা নারী নিপীড়করা রাজনৈতিক প্রশ্রয় পাবে না। আমরা আশা করি, দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে সামাজিক জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, দল-মত নির্বিশেষে রাজনীতিকরা তা আমলে নেবেন।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একই সঙ্গে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জাগরণও জরুরি। পারিবারিক অনুশাসন ও শৃঙ্খলার প্রতিও মনোযোগ দিতে হবে সবাইকে। শিশুর মানসে নারীর মর্যাদার বিষয়টি পরিবার ও সমাজ থেকেই গড়ে তুলতে না পারলে পরিণত সময়ে আইন ও শাসন দিয়ে সম্পূর্ণ শোধরানো কঠিন। আমরা দেখছি, রাষ্ট্র এগিয়ে এসেছে। সমাজও হয়ে উঠেছে সোচ্চার। এখন পরিবারও এগিয়ে আসুক। মানবজাতির গুরুত্বপূর্ণ এই তিন প্রতিষ্ঠান সমানভাবে স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হলে নারী নির্যাতনের এই অন্ধকার দূর করা অবশ্যই সম্ভব। কাজটি কঠিন সন্দেহ নেই, কিন্তু অসম্ভব হতে পারে না।

আরও পড়ুন

×