জেলহত্যা দিবস
শোক পরিণত হোক শক্তিতে

সিমিন হোসেন রিমি
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২০ | ১৫:০৭
আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে গ্রিক রাষ্ট্রনায়ক, দার্শনিক পেরিক্লিস তার তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের একটি শপথ বাক্য পাঠ করাতেন। সেখানে বলা হতো আমি আমার জন্মের সময় যে দেশকে পেয়েছি, আমার কর্মের মধ্য দিয়ে আমার মৃত্যুর সময় তার চেয়ে উন্নততর দেশ রেখে যাব।
আড়াই হাজার বছর আগের দেশপ্রেমের এই কঠিন শপথ বাক্য দিয়ে আজ ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি জাতির সম্পদ চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে। দেশের মানুষের জন্য উন্নততর স্বপ্নের বাস্তবায়নে দেশ গঠন প্রক্রিয়ায় জীবনের বিভিন্ন স্তরে এই বরণীয় মানুষরা জড়িত ছিলেন ওতপ্রোতভাবে।
সময়ের আবর্তে বছর ঘুরে ফিরে আসে ৩ নভেম্বর। আবার চলেও যায় নীরবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষাকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করার অপরাধে ঠিক আড়াই মাসের মধ্যে জেলে বন্দি অবস্থায় নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের সফল নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে।
যারা অন্যায়কারী-হত্যাকারী তারা মনে করে, হত্যা করে তাৎক্ষণিক অন্যায় দিয়ে সব নিঃশেষ করে ফেলা যায়। কিন্তু মানবসভ্যতার ইতিহাস বলে যারা ইতিহাস সৃষ্টি করেন, তারা ইতিহাসের অংশ হয়ে যান। ইতিহাসের কালি এতটাই শক্তিশালী, এমন অমোচনীয়, কোনো কিছুই তা মুছে ফেলতে পারে না। একমাত্র সময়ই জানে কখন সে দৃশ্যমান হবে।
৩০ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা এ মাটি। লাখো মা-বোনের অশ্রুতে ভেজা এ মাটি। যুদ্ধ জয়ী এই বাংলাদেশ। খুব শীতের ভোরে যখন ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে চারদিক, তখন মনে হয় সূর্যের শক্তি যেন গ্রাস করছে এই কুয়াশা! সূর্য তখন অলক্ষ্যে হাসে। কুয়াশা দূর হয়। সূর্য নতুন ভোরের পথ দেখায়।
আজ শোকের শক্তিতে উদ্ভাসিত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানদের দেশের জন্য জীবনভর আত্মত্যাগ কখনোই ম্লান হওয়ার নয়। ৩ নভেম্বর এক অর্থে দেশপ্রেমের শপথ নেওয়ারও দিন। শপথ হোক প্রত্যেকের নিজ দায়িত্ব সততার সঙ্গে, দায়বদ্ধতার সঙ্গে পালন করা। মানুষকে কষ্ট না দেওয়া। শপথ হোক দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী, সমৃদ্ধশালী, যুক্তিনির্ভর, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার। শপথ হোক দুর্নীতি, অসততা, উগ্রতা, পাশবিকতা মুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণে নিবেদিত এবং সচেষ্ট হওয়ার। বিবেককে জাগ্রত রেখে সাধ্যমতো, তা সীমিত পর্যায়ে হলেও মানুষের জন্য কল্যাণের চেষ্টা করাই সর্বোত্তম সাধনা।
সংসদ সদস্য; লেখক ও সমাজকর্মী
- বিষয় :
- জেলহত্যা দিবস
- সিমিন হোসেন রিমি