হাসিনা-মোদি বৈঠক
সম্পর্কের নতুন মাত্রা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২০ | ১২:০০
সম্পর্কের দিক থেকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই আমরা মনে করি। চলমান কভিড পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার বৈঠকটি ভার্চুয়াল হলেও কার্যত দু'দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে হৃদ্যতার দিক থেকে বাস্তবতার ব্যত্যয় ঘটেনি। শুক্রবারের সমকালের প্রতিবেদনে এই বৈঠককে বলা হয়েছে 'সহযোগিতার নতুন অধ্যায়'। বস্তুত উভয় প্রধানমন্ত্রীই দ্ব্যর্থহীনভাবে সেটিই তুলে ধরেছেন। শেখ হাসিনা যেমন দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য ভারতের সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরও দৃঢ় হবে; তেমনই নরেন্দ্র মোদির কথায়ও বন্ধুত্বের সুরই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের কাছে বাংলাদেশ এক নম্বর পিলার। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী ও দৃঢ় করার বিষয়টি তার ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম থেকেই অগ্রাধিকার পেয়ে আসছে। এ সম্মেলনে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্নিষ্ট তিস্তাসহ নদনদীর পানি বণ্টন, রোহিঙ্গা সংকট, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড, করোনার টিকাসহ যেসব বিষয়ে দুই নেতা কথা বলেছেন, এর প্রত্যেকটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ও সীমান্ত হত্যা- এ দুটি সমস্যার সমাধানের জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন এবং সীমান্ত হত্যার প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। ভারত তিস্তা চুক্তিসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন অগ্রগতির জন্য দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকসহ পুরো প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহারের যে বিষয়টি উঠে এসেছে, আমরা তারও স্বাগত জানাই। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, বহু দেনদরবার, সালিশ-মীমাংসা ও প্রতিশ্রুতিতেও যখন বন্ধ হচ্ছে না সীমান্ত হত্যা, তখন বিষয়টি শূন্যতে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা যুক্তিযুক্ত। বাণিজ্য, জ্বালানি, কৃষি, পরিবেশসহ বিভিন্ন খাতে দুই দেশের মধ্যে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই হয়। আমরা জানি, এ বছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরটি কভিড-১৯ এর কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি। আগামী মার্চে নরেন্দ্র মোদিকে ঢাকা সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
কভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হলে তিনি আসার কথা বলেছেন। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই ভার্চুয়াল বৈঠকটি বিশ্বের সামনে দু'দেশের আস্থার সম্পর্কের বিষয়ে সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ রোহিঙ্গা সংকট। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দুই শীর্ষ নেতৃত্বের আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। ভারতের হাইকমিশনার এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুতদের নিরাপদ, দ্রুত এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের গুরুত্বের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আমরা চাই, এ ইস্যুতে ভারত আরও এগিয়ে এসে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করুক। মিয়ানমারে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকটের দায় বাংলাদেশ কেন বহন করবে? এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী দেশ হিসেবে ভারত বিশ্ব সম্প্রদায়কে নিয়ে সংকট নিরসনের পথ বের করতে পারে।
চলমান বৈশ্বিক সংকট করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশেষ করে সারাবিশ্বে এখন করোনার টিকার জোর তৎপরতা চলছে। এ টিকা উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবস্থাপনায় ভারত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাজ করছে। বাংলাদেশও যাতে দ্রুততম সময়ে টিকা পেতে পারে সে জন্য ভারতের সঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী এ শীর্ষ বৈঠকে বন্ধুত্বের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, আন্তরিক সদিচ্ছায় তা আরও এগিয়ে যাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যাশা, বড় দেশ হিসেবে ভারত অমীমাংসিত সব সমস্যার সমাধান করতে আন্তরিকতার পরিচয় দেবে।
- বিষয় :
- হাসিনা-মোদি বৈঠক