ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

পেঁয়াজের বাজার

দেশীয় স্বার্থ দেখুন সর্বাগ্রে

দেশীয় স্বার্থ দেখুন সর্বাগ্রে

রোববার সকালে সিটি করপোরেশনের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়- সমকাল

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২১ | ১৫:৪২

গত দুই বছরে পেঁয়াজের যে ঝাঁজ আমরা দেখেছি, নতুন বছরে এসে সে তুলনায় দাম পড়ে যাওয়া ভোক্তার জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ী ও চাষি উভয়েই। সোমবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে 'পেঁয়াজে শতাধিক ব্যবসায়ীর শতকোটি টাকা গচ্চা'র খবর আমরা দেখেছি। বস্তুত ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি পুনরায় চালু হওয়ার ফলে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ার প্রভাব ব্যবসায়ী ও চাষিদের ওপর পড়তে শুরু করেছে। অবশ্য ব্যবসায়ীদের বেশি ক্ষতি হওয়ার পেছনে বাজার পরিস্থিতি না বুঝে অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের মাত্রাতিরিক্ত এলসি খোলা, সময়মতো এলসি পণ্য দেশে আনতে না পারা, বিক্রির তুলনায় আমদানি খরচ বেশি হওয়াও কম দায়ী নয়।

আমাদের মনে আছে, গত বছর ও তার আগের বছর ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। তাতে সংকটে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। ওই সময় পেঁয়াজের নতুন বাজার ধরতে মাঠে নেমেছিল ছোট-বড় অনেক ব্যবসায়ী। ভারতের বিকল্প দেশ থেকে সাত লাখ টন পেঁয়াজ আনতে তাদের অনেকেই কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নিয়ে এলসি খোলে। তাদের আমদানির বেশিরভাগ পেঁয়াজ জাহাজে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারে সমুদ্রপথে আনতে হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এতে একদিকে যেমন খরচ বেড়ে গেছে, আবার সময়মতো আনতে না পারায় লাভ ধরতে পারছে না তারা। বাজার পর্যবেক্ষণ করে এলসি খুলতে গিয়ে যারা সময় নিয়েছে, এখন বেশি লোকসান গুনছে তারাই।

এমনকি সমকালের প্রতিবেদনে এসেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে এক মাস ধরে ৯০ কোটি টাকার প্রায় ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ পড়ে থাকলেও বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও এসব পেঁয়াজ খালাসে আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজের অভ্যন্তরীণ চাহিদার অধিকাংশ দেশে উৎপাদিত হলেও উল্লেখযোগ্য অংশ ভারত থেকে আমদানি করতে হয় বিধায় আমাদের পেঁয়াজের বাজারে দেশটির তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব আমরা দেখেছি। বিশেষ গত দুই বছরে সবাই ভালোভাবে টের পেয়েছে। অনেক ব্যবসায়ীও এ 'সুযোগ' কাজে লাগিয়েছে। গত বছর সেপ্টেম্বরের শেষদিকে ভারত যেদিন বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়, সেদিনই কেজিপ্রতি কোথাও ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। একইভাবে গত সপ্তায় দেশটি যখন আবার পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণা দেয় তখন থেকেই দাম কমতে শুরু করেছে।

এখন সমস্যা হলো, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসতে থাকলে আমাদের দেশি পেঁয়াজের দাম আরও কমে যাবে। তার প্রভাব আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের ওপর পড়েছে; একই সঙ্গে পেঁয়াজ চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ যখন পেঁয়াজ চাষিরা নতুন মৌসুমের ফসল তুলতে শুরু করেছে তখন এভাবে দাম কমলে তারা ন্যায্য দাম তো পাবেই না, উল্টো আরও লোকসান হতে পারে। এই সময়ে পেঁয়াজের ভালো দাম পেলে তারা উপকৃত হতে পারত। আমরা জানি, কৃষকরা পেঁয়াজের বাড়তি দামের সময়েই এটি রোপণ করেছিল। তাদের পরিচর্যা ও শ্রম-ঘামের অর্থ পেতে হলে ভালো দাম পেতে হবে। এ অবস্থায় আমরা মনে করি, দেশের ব্যবসায়ী ও চাষিদের স্বার্থে পেঁয়াজ আমদানি ক্ষেত্রে স্থগিত ৫ শতাংশ শুল্ক্ক পুনর্বহাল করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের যেমন দূরদর্শিতা প্রয়োজন, তেমনি এলসি খোলা ও প্রয়োজনীয় অনুমতি প্রদানে প্রশাসনেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা জরুরি।

আমরা জানি, পেঁয়াজে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা কঠিন নয়। কারও ওপর নির্ভরশীল না থেকে নিজেদের উৎপাদিত পেঁয়াজে যেন অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ হয় সেদিকে নজর দেওয়া চাই। সরকারকে যেমন ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা করতে হবে, একই সঙ্গে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের দিকও দেখতে হবে। সবার 'উইন উইন' অবস্থা নিশ্চিত করেই বাজারের মূল্য নির্ধারণ ও আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করা চাই। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, পেঁয়াজের শতাধিক ব্যবসায়ী যেভাবে অন্তত শতকোটি টাকা গচ্চা দিচ্ছে, তা পেঁয়াজের অভূতপূর্ব এক অস্থিতিশীল অবস্থার কারণেই হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া যায় কিনা, অবস্থার আলোকে তা বিবেচনার আহ্বান জানাই। আমাদের প্রত্যাশা, সবসময় বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রশাসন যথাযথ ভূমিকা পালন করবে।

আরও পড়ুন

×