ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

করোনার ভ্যাকসিন

প্রয়োজন ত্রিমাত্রিক উদ্যোগ

প্রয়োজন ত্রিমাত্রিক উদ্যোগ

স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজার করেছেন সবাই

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২১ | ১২:০০

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ভ্যাকসিন দ্রুততম সময়ে উৎপাদনে বিশ্বের কয়েকটি দেশ সক্ষমতা দেখালেও চাহিদার বিপরীতে এর জোগান পরিস্থিতি এখনও সংকটজনক। অনেক দেশই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও দেশের সঙ্গে চুক্তি করেও প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন পাচ্ছে না। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কয়েকটি উৎস থেকে যে ভ্যাকসিন আমদানি করেছে ও উপহার হিসেবে পেয়েছে, তাতে এরই মধ্যে নিবন্ধিত সবার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাও সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন উৎস থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের পাশাপাশি দেশেও উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়ার যে কথা জানিয়েছেন, আমরা তা স্বাগত জানাই। অনেক জনস্বাস্থ্যবিদই এ ব্যাপারে বারবার তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। বৃহস্পতিবার সমকালসহ অন্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে বিভিন্ন দেশ ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত আছে।

আমরা জানি, ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা মনে করি, দেশে করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদনে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমরা এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই ইতোপূর্বে স্বদেশের সক্ষমতা কাজে লাগানোর তাগিদ দিয়েছিলাম। আমাদের ওষুধ শিল্প এখন অনেক বিকশিত ও সমৃদ্ধ। সাফল্যের দৃষ্টান্ত কম নেই। আমাদের দেশে উৎপাদিত ওষুধ এখন বিশ্বের অনেক দেশেই রপ্তানি হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতে গত তিন দশকে অনেক সাফল্যের মধ্যেও সৃষ্ট কিছু ক্ষত অনেক অর্জনই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমাদের এও স্মরণে আছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান করোনা-দুর্যোগে এর ভ্যাকসিন বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছিলেন। করোনার ভ্যাকসিন দেশে উৎপাদনের কয়েকটি ওষুধ তৈরি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার বিষয়টি ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সবার জন্য ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। এমতাবস্থায় শুধু ভ্যাকসিন সংগ্রহের চিন্তা না করে দেশে উৎপাদনের বিষয়টি সমধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রযুক্তি সহায়তাই নয়, প্রয়োজন এর অন্যতম অনুষঙ্গ কাঁচামালও।

একই সঙ্গে দরকার দক্ষ জনবল ও অবকাঠামো। আমরা জানি, মানবজাতির ইতিহাসে এত বিস্তৃত মহামারি বা অতিমারি যেমন আসেনি, তেমনি এত বড় 'বাজার' আগে কখনও দেখা যায়নি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বিষয়টি নিছক প্রতিযোগিতা বা মুনাফার নয়; বরং জীবন রক্ষার যুদ্ধ। আমরা মনে করি, ভ্যাকসিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদেরও এগিয়ে আসা উচিত। এ ক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক উদ্যোগ জরুরি- ভ্যাকসিন আমদানি, বিদেশি ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং দেশি ব্র্যান্ড উদ্ভাবন। একই সঙ্গে এও মনে রাখতে হবে, দেশে নকল ওষুধ উৎপাদন ও ভেজালের ছড়াছড়ি জনস্বাস্থ্যের জন্য যেমন অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, তেমনি আমাদের বিকাশমান ওষুধ শিল্পের জন্যও হুমকি। ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে যাতে এ রকম না ঘটে, এ জন্য সতর্কতা-কঠোরতার বিকল্প নেই। ওষুধ উৎপাদনে আমাদের এত সাফল্যের পরও এখনও আমরা কাঁচামালের ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভর। এ ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও রয়েছে।

দেশে গ্লোব বায়োটেকের 'বঙ্গভ্যাক্স' নামে ভ্যাকসিন উৎপাদনের অনুমোদন চার মাসেও মেলেনি। এই দীর্ঘসূত্রতার ব্যাখ্যা কী? এর নিরসন জরুরি। আমরা জানি, আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট-আইভিআই চুক্তি অনুসমর্থনের মধ্য দিয়ে দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের পথ প্রশস্ত হয়েছিল। এ কারণে দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং এ সম্পর্কিত গবেষণায় প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা পাওয়া কঠিন হবে না। রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে করোনার ভ্যাকসিন 'স্পুটনিক-ভি' উৎপাদনের চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। যৌথভাবে উৎপাদনের পাশাপাশি সে দেশ থেকে বাণিজ্যিকভাবেও ভ্যাকসিন কেনার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী দ্রুত যাতে আমরা ভ্যাকসিন পেতে পারি, এ জন্য জোরদার কূটনৈতিক তৎপরতা দরকার। রাশিয়া ও চীন বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের যে প্রস্তাব দিয়েছিল, বাংলাদেশ আগেই তাতে সম্মতি দিয়েছে। আমরা মনে করি, দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনে আমাদের যেসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা রয়েছে, তাদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া গতিশীল করা দরকার।

আরও পড়ুন

×