সালতামামী ২০২৪
টেকসই ফ্যাশন বিষয়ে সচেতনতা ও চর্চা বেড়েছে

ছবি কোলাজ: মিলন শিকদার
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৭:৩৪ | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৭:৪৭
২০২৪ সালজুড়ে ফ্যাশন ডিজাইনাররা টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উপকরণের দিকে ঝুঁকেছেন। রিসাইকেলড ফেব্রিক, প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার শীর্ষে ছিল। পোশাকের আরামদায়ক বিষয়টির সঙ্গে স্টাইলকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। লিখেছেন রিক্তা রিচি
খালিদ মাহমুদ খান
কর্ণধার, কে ক্র্যাফট
এ বছরের পোশাকের নকশা বা প্যাটার্নে নানা ধরনের ধারা দেখা গেছে। সুনির্দিষ্ট একক কোনো ধারার শক্তিশালী প্রভাব দেখা যায়নি। এর মাঝেও কিছু বিশেষ পরিবর্তন চোখে পড়েছে। যেমন ট্র্যাডিশনাল মোটিফ সমসাময়িক আধুনিক প্যাটার্নে নতুন বিন্যাসে উপস্থাপনে নানা কাজ হয়েছে। পাঞ্জাবি ও কামিজের প্যাটার্নে পরিবর্তন এসেছে। পাঞ্জাবির কাটে নিরীক্ষা দেখা যাচ্ছে। শাড়িতে বুননে, সারফেস অর্নামেন্টেশন ও লেআউটে, মোটিফের ব্যবহার এবং কালারের বিন্যাসে বৈচিত্র্য ছিল। ব্যবহার উপযোগিতা এবং ডিজাইনার বা হাউসের স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে যার যার নিজস্ব ধারায়। টেকসই ফ্যাশন বিষয়ে সচেতনতা ও চর্চা বেড়েছে। নিজের পোশাক নানাভাবে ব্যবহার করা, আপসাইকেল ও রিসাইকেল করার বোধ এ বছর অনেক দেখা গেছে। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি রঙের কদর বেড়েছে। আরামদায়ক কাপড়ের ব্যবহার যেমন বেড়েছে, তেমনি হাতেবোনা কাপড়ের ব্যবহার ও সুচিকর্মের ব্যবহার পোশাকে কম দেখা গেছে।
বিপ্লব সাহা
কর্ণধার, বিশ্বরঙ
বিশ্বরঙ মানেই ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আধুনিকতার মেলবন্ধন। প্রাত্যহিক জীবনের সাদামাটা সময়গুলোকে উৎসবমুখর ও রঙিন সাজে সজ্জিত করার আয়োজনে ‘বিশ্বরঙ’ সবসময়ই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। প্রতি বছরের মতো ২০২৪ সালেও বিশ্বরঙ ক্রেতাসাধারণের রুচি এবং ক্রয়ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পোশাকে নিয়ে এসেছে নতুনত্ব, নান্দনিকতা। তাঁতের কাপড়, সুতি, ভয়েল, জয় সিল্ক, সফট সিল্কের মতো দেশীয় কাপড়ের ব্যবহার ছিল উল্লেখযোগ্য। কাপড়ে স্ক্রিন প্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট, হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, কম্পিউটার এমব্রয়ডারি, ব্লক প্রিন্ট, টাইডাই, কারচুপি দিয়ে ভ্যালু-অ্যাড হয়েছে। মোটিফ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ট্রাইবাল, শখের হাঁড়ি, আলপনা, জ্যামিতিক নকশা। এ ছাড়াও পিনটাক, প্লিট, পাইপিং ইত্যাদির নান্দনিক ব্যবহার পোশাকে যুক্ত করেছে অন্য মাত্রা।
সৌমিক দাস
কর্ণধার, রঙ বাংলাদেশ
২০২৪ সালের ফ্যাশনে বিশ্বব্যাপী কিছু প্রধান ট্রেন্ড দেখা গেছে, যা বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও বাজার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে ফ্যাশন ডিজাইনাররা টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উপকরণের দিকে ঝুঁকেছেন। এ ক্ষেত্রে রিসাইকেলড ফেব্রিক এবং প্রাকৃতিক রং ব্যবহৃত হয়েছে। আরও ছিল মিনিমালিজম ও সিমপ্লিসিটি অন্যতম প্রধান ট্রেন্ড। এ ছাড়া ফ্যাশন ট্রেন্ড ছিল অ্যাক্টিভ ওয়্যারের সঙ্গে মার্জিত রুচিশীলতার মিলিত বহিঃপ্রকাশ; যাকে অ্যাথলেটিক সফিস্টিকেশন বলা হচ্ছে। পোশাকের আরামদায়ক বিষয়টির সঙ্গে স্টাইলকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পলো শার্ট, ওয়াইড লেগ ফরমাল প্যান্টের পাশাপাশি উজ্জ্বল ও চকচকে ফেব্রিক সমানভাবে ট্রেন্ড কাঁপিয়েছে। অন্যান্য ট্রেন্ডি ফ্যাশনের মধ্যে ছিল ফ্যাশনের গতিশীলতা, বোল্ড প্যাটার্ন এবং পরিশীলিত শৈলীর মিশ্রণের প্রতিফলন।
আফসানা ফেরদৌসী
সাস্টেইনেবল ফ্যাশন ডিজাইনার, আফসানা ফেরদৌসী
আমাদের ব্র্যান্ড ‘আফসানা ফেরদৌসী’ চেষ্টা করে নিজেদের ট্রেন্ড তৈরি করতে। যেহেতু আমাদের ব্র্যান্ডকে স্টোরি টেলার বলা হয়, চেষ্টা করি নিজেদের গল্প বলার জন্য। এ বছর আমাদের খাদি কালেকশন ছিল, যেখানে আমরা বাংলাদেশের খাদিকে দেশীয় ক্রাফটসম্যানশিপে ওয়েস্টার্ন এবং ইস্টার্ন দু’ভাবে উপস্থাপন করেছি। মানুষের ভেতরে অনেক রকম অনুভূতি থাকে। সেসব অনুভূতি আমরা ফেব্রিক ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে পোশাকে নিয়ে এসেছি। আমাদের ট্রেন্ডে সাসটেইনেবিলিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন বিশ্ব ট্রেন্ডে এটি চলমান। এর পাশাপাশি আমাদের নকশিকাঁথাসহ বিভিন্ন হাতের কাজের পোশাক ছিল। পোশাকে গল্পের মাধ্যমে আমরা মানুষের গল্প, আমাদের চারপাশে থাকা পশুপাখির গল্প প্রকাশ করেছি। বছরজুড়ে পোশাকের প্যাটার্নে সিমেট্রিক্যাল এবং অ্যাসিমেট্রিক্যাল দুই-ই ছিল। স্লিভে টুইস্টেড স্লিভ, বেল স্লিভ এবং ওভার সাইজড প্যাটার্ন ছিল উল্লেখযোগ্য।
আবেদা খাতুন মিতুল
উদ্যোক্তা ও ফ্যাশন ডিজাইনার, সীবনী
আগের চেয়ে আমাদের দেশের ফ্যাশনশিল্প অনেক উন্নত হয়েছে। এ বছর তরুণী ও ফ্যাশন সচেতন নারীর মধ্যে শাড়ি পরার প্রবণতা বেশি ছিল। পাশাপাশি সিঙ্গেল কুর্তি, জামা ও পায়জামা সেট বেশি বিক্রি হয়েছে। বছরজুড়ে মিড লেন্থ, ছোট কামিজ, টপস সবকিছুই সমানতালে চলছে। মেয়েরা পালাজ্জো, বুটকাট প্যান্ট কিংবা ফ্লেয়ার প্যান্টের সঙ্গে টপস, শার্টও পরেছে। বছরজুড়ে প্রিন্টের কো-অর্ড বেশ চলেছে। ফ্যাশনেবল ও ফিউশনধর্মী পোশাকের কদর ছিল। দেশীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি পোশাক ও হাতের কাজের পোশাকের দিকে ক্রেতা বেশি ঝুঁকেছেন।
- বিষয় :
- ফ্যাশন ডিজাইনার
- লাইফস্টাইল