মায়রা মাইরন ওরা দুই ভাইবোন
ফরিদুর রেজা সাগর-এর গল্প

ছবি এঁকেছেন দেওয়ান আতিকুর রহমান
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ২৩:৪৯
মায়রা-মাইরন। ওরা দুই ভাইবোন। নানা-নানি ওদের খুব প্রিয়। নানা খুব মজার মানুষ। একেবারে শিশুর মতো। মায়রা সারাক্ষণ নানার কাছে থাকে। নানা যখন অফিস যায় তখন ওর মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। অনেক খেলনা আছে ওর। নানা না থাকলে খেলনাগুলো ছুঁয়েও দেখে না মায়রা। মাইরন বয়সে বেশি ছোট। ও আনন্দেই থাকে সবসময়। নানা সন্ধ্যার সময় বাসায় ফেরেন। মায়রা তখন লিফটের গেটে হাঁটি হাঁটি পা পা করে দাঁড়িয়ে থাকে। গাড়ির শব্দ শুনলেই মায়রা চঞ্চল হয়ে ওঠে। নানা আসছে। নানা আসছে। লিফট থেকে নেমেই নানা মায়রা আর মাইরনকে কোলে তুলে নেন। প্রতিদিন নানা খেলনা নিয়ে আসেন। মাইরন খেলনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। মায়রা নানার কোল থেকে নামতেই চায় না। নানি আর মা মেঘনা খাবার নিয়ে ছোটাছুটি করে। কিন্তু মায়রার খাবারের দিকে নজর নেই। বাবা রাফাত এসে কোলে নিতে চায়। কিন্তু মায়রা যাবে না।
মা, নানাভাই তো এখন ফ্রেশ হবে। তাই না?
মায়রার এসব কথা কানে যায়। সে দু’হাত দিয়ে নানার গলা জড়িয়ে ধরে রাখে। নানাও শিশুর মতো আদর করেন মায়রা-মাইরনকে। নানি বা মোহনা খালা তখন দূরে সোফায় বসে বসে নানা-নাতনির খেলা দেখতে থাকেন।
নানার বাসার ছাদে বিশাল একটা সুইমিংপুল আছে। পুলের একপাশে আছে বেবি কর্নার। নানা ছুটির দিনে ছাদে ওঠেন। তারপর সুইমিংপুলের বেবি কর্নারে চুপ করে শুয়ে থাকেন। মায়রা-মাইরন তখন নানাকে জড়িয়ে ধরে খেলা করে। হাত পা ছুঁড়ে ওরা নানার বুকে পিঠে লাফালাফি করে। নানা খুব মজা পান। চোখ মুদে হাত পা ছড়িয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকেন। তার শরীর জলের ধারায় ধুয়ে যায়। মায়রা-মাইরন, নানার দুই কোলে নাচতে থাকে।
মা মেঘনা আর খালা মোহনা সুইমিংপুলের পাশে বসে নানা-নাতির খেলা দেখতে থাকে। নানা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। মাথার ওপর সূর্য জ্বলছে। মায়রা হঠাৎ টের পায় ওর পায়ে কে যেন কুটুস করে কামড় দিলো। মায়রা তখন ওর ছোট ছোট পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে, একটা লাল রঙের মাছ ঘুরে বেড়াচ্ছে। মায়রা মাছটার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। মাছটা ভুল করে নাক বের করে। তারপর ফিসফিস করে বলে, মায়রা তুমি কি মাছের দেশে যাবে?
কোথায় সেই দেশ?
পানির অনেক গভীরে।
সেখানে কি আছে?
মাছেদের একটি দেশ আছে। সেখানে থাকে মৎস্যকন্যা।
অনেক রকমের মাছ সেখানে ঘুরে বেড়ায়।
মায়রা বলে, যাবো আমি।
এখনই যেতে হবে।
এখনই যাবো? কিন্তু নানাকে ছেড়ে যে আমি কোথাও যাই না।
না, সেখানে বড় মানুষেরা যেতে পারবে না। শুধু শিশুরা যাবে।
মা মেঘনা তখন বলে ওঠে,
মায়রা তুমি কার সঙ্গে কথা বলছো? একা একা গুনগুন করছো।
মায়রা তখন নানার বুকে মাথা রেখে পা নাচাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে, লাল মাছটা গেলো কোথায়?
মাছেদের দেশে আছে মৎস্যকন্যা। মাছটা কি তাহলে একা একা মৎস্যকন্যার কাছে চলে গেলো?
- বিষয় :
- গল্প প্রতিযোগিতা