ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ঘাস

ঘাস

ছবি এঁকেছেন রজত

লিখেছেন মোস্তফা হোসেইন

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:৫৯

ভাতের প্লেটে করে কি আর ঘাস খাওয়া যায়? গরুর এই খাবারটা যদি খেতেই হয়, তাহলে মাঠে চড়ে খাওয়াটাই উত্তম। মানুষের ঘাস খাওয়ার এমন চিন্তাটা শাওনের মাথায় এসেছে জুলহাস স্যারের কথায়। 
ক্লাসে সবার সামনেই তিনি বলেছেন, এই সাধারণ অংকটাও যখন তোর মাথায় ঢুকে না, তখন তোর উচিত এখন থেকে ভাতের পরিবর্তে ঘাস খাওয়া।
স্যার কি ভুল বলতে পারেন? নিশ্চয়ই ঘাসে এমন কিছু আছে যা খেলে মাথা খুলে যায়। মানে যত কঠিন অংকই হোক না কেন, ঘাসখেকোদের জন্য সেটা জলবৎ তরলং না হয়ে পারে না!
সেই থেকেই শাওনের মাথায় ঘাস রান্নার রেসিপির বিষয়টি ঘুরেফিরে আসছে। রেসিপি নিয়ে এতো সময় নষ্ট করছে কেন সে। স্যার কিন্তু ঘাস রান্না করে খাওয়ার কথা বলেননি। তাহলে গরুর মতো একবারে কাঁচা-সবুজ ঘাস চিবিয়ে খেতে হবে? ভাবতে থাকে গরু কীভাবে ঘাস খায়। খুঁটিতে বাঁধা হয় দড়ি, দড়ির অন্যপ্রান্ত গরুর গলায় বাঁধা থাকে। তারপর গরু মনোযোগ দিয়ে ঘাস খেতে থাকে। ভাবে, একটু চেষ্টা করতে ক্ষতি কী।
বাড়ির পাশের গরু চরানোর মাঠে গিয়ে দাঁড়ায় শাওন। হাতে একটা দড়ি। দড়িটা গলায় বেঁধে নেয়, ঠিক যেমনি গরুর গলায় বাঁধা থাকে। মনে আসে গরুর শিং-এ ফড়িং বসে। তার তো শিংই নেই। বুদ্ধি আঁটে একটা। গায়ের শার্টটা মাথায় শিং-এর মতো করে জড়িয়ে দেওয়া যায়। যেই ভাবনা সেই কাজ, সে গা থেকে শার্টটা খুলে মাথায় জড়িয়ে নেয়।
কাছেই একটা গরু মনের আনন্দে ঘাস খাচ্ছে। গরুটার কাছে গেলে নিশ্চয়ই ওর শিং-এ বসা ফড়িংটার দৃষ্টি পড়বে। সেই চিন্তা করে সে গরুটার সমান্তরালে গিয়ে দাঁড়ায়। গরুর মতো হতে চেষ্টা করে। কিন্তু দুই হাতকে পা বানিয়ে ঘাসের কাছে মুখ নিলে যে একটা বাছুরের আকার হবে। হোক না সমস্যা নেই। দুই হাত ভূমিতে রেখে গরুর মতো হয়ে যায়। এবার হালকা মনে হয় তার। এবার শুধু ঘাসে মুখ দিলেই হলো।
কিন্তু বাধা এসে যায় দ্রুত। মেঝকাকার ডাক। এই শাওন, এই রোদে কী করছিস এখানে।
কাকাকে তার এই মিশনের কথা সে কীভাবে বোঝাবে? কাকা তার কাছে আসতেই সে বিরক্ত বোধ করে। কোনো কাজই করতে দেয় না, এই হেডমাস্টার কাকাটা। সবকিছুতে বিপত্তি তার। এভাবে না ওভাবে, পড়তে বসো, খেতে যা হাজার রকম অর্ডার লেগেই আছে। অবশ্য সবচেয়ে বেশি চকোলেটও দেন এই কাকাই। তাই তাকে সহজেই ক্ষেপাতে চায় না শাওন। 
কাকা জিজ্ঞেস করেন–কী রে, গলায় দড়ি কেন? মানুষ ফাঁস দিলে তো গাছে যায়। তুই কি না গরুর সঙ্গে ঘাসের মাঠে। ঘাস খাওয়ার ইচ্ছা হয় নাকি?
কাকা এতো সহজেই তার পরিকল্পনার কথা জেনে গেছেন। তিনি আসলেই বুদ্ধিমান। 
চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে শাওন। বিড় বিড় করে বলে, অনেকটা তাই। ঘাস খাওয়ারই রিহার্সাল দিচ্ছিলাম।
কাকা একটুও সময় নিলেন না। বললেন, তুই না আসলে আস্ত একটা গাধা।
গরু থেকে গাধায় বদলে যায় শাওনের ভাবনা। আচ্ছা গাধাও তো ঘাস খায়। তার মানে গরু আর গাধায় তফাৎ নেই। বরং গাধা হলে নিজেকে বাছুর বাছুর মনে হবে না। গাধার শরীরের কাছাকাছি হয়ে যাবে তার শরীর। সেই ভালো সে গাধাই হোক।
কিন্তু গাধা হওয়ার একটা সমস্যা আছে। গাধাকে মানুষ অবজ্ঞা করে বেশি। তার পাশাপাশি গাধার পিঠে ২ মণ ওজনের বস্তাও চাপিয়ে দেয়। সেই বস্তা নিয়ে গাধাকে পা টুকে টুকে হাঁটতে হয়। অনেক সময় মুখের দিকে তাকালে মনে হয় জিহ্বা বেরিয়ে গেছে গাধার। 
তাই গাধা হওয়ার ইচ্ছাটা আপাতত চাপা দিয়ে রাখে। বলে-কাকা আসলে গরুরা ভদ্রপ্রাণী। কাউকে কামড় দেয় না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে গরুর মাথার মগজটা অনেক বড়। আমি কোরবানির গরুর মগজ দেখেছি। আমি ভাবছি গরুর মগজের মতো মগজ বানাতে হবে। এর একটা উপায় হচ্ছে গরুর মতো ঘাস খাওয়া। একবারে কাঁচা ঘাস, রান্না করা যাবে না। কিংবা ঘাস দিয়ে সালাদ কিংবা জেলিও বানানো যাবে না।
কাকা বলেন, হইছে তুই পাগল হয়ে যাচ্ছিস।
এই কথা শোনার পর শাওন দ্রুত গলা থেকে দড়িটা খুলে ফেলে। কাকার যেই মেজাজ, শেষ পর্যন্ত না এই দড়ি ধরে টানতে টানতেই তাকে বাড়ির দিকে নিতে শুরু করেন। ভাগ্য ভালো দড়ি ধরে না টেনে হাত ধরেই বাড়ির দিকে নিয়ে যান শাওনকে।
উঠোনের পাশে গাছতলায় গিয়ে বসেন শাওনের বাবার ইজিচেয়ারে। পাশেই তাকে বসতে বলেন চেয়ারে। জানতে চান, ঘটনা কী?
শাওনের কাছ থেকে পুরো ঘটনা শুনে কাকা ধীরকণ্ঠে বলেন, আসলে বুঝতে পারলাম তোর মাথায় কেন এতো গোবর। ঘাস খেলে তো গোবর হবেই।
তোর কি একটুও বোধ হবে না রে বোকা। তোর স্যার তোকে গালি দিয়ে এই কথাটা বলেছেন। আর তুই কি না সেটাই সত্য বলে ধরে আছিস? শোন, মেধাবী হতে গেলে, অংকে ভালো করতে হলে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে হয়, ঘাস কিংবা ভাত খাওয়ার ওপর ভালো ছাত্র হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এবার গলা থেকে দড়িটা খুলে গরু থেকে মানুষ হয়ে যা। n 

আরও পড়ুন

×