ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

হংকংয়ে প্রবীণদের মধ্যে বাড়ছে ‘নিঃসঙ্গ’ মৃত্যুর সংখ্যা

হংকংয়ে প্রবীণদের মধ্যে বাড়ছে ‘নিঃসঙ্গ’ মৃত্যুর সংখ্যা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২১ | ০৫:১৪ | আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২১ | ০৫:৪৮

৭৯ বছর বয়সী হো ইয়া লিনের বামে চোখের ছানিতে অস্ত্রোপচার করা হয় গত বুধবারে। কিন্তু এ সময় তার কোনো স্বজন পাশে ছিলেন না।  অথচ হো ইয়া লিনের আছে চার সন্তান। তারা সবাই চীনের মূল ভূখণ্ডে বাস করে । তিনি নিজের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের উদ্বেগ বাড়াতে চাননি।

প্রায় ২০ বছর আগে হো ইয়া লিনের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে তিনি হংকংয়ে একাই থাকেন। এই শহরে তার চাচাতো ভাই আছেন, কিন্তু তার সঙ্গে খুবই কম যোগাযোগ হয়  হো ইয়া লিন।

চোখের অস্ত্রোপচারের পর পট্টি বাঁধা অবস্থায় নিজ বাড়িতে হো ইয়া লিনকে খুব সাবধানে কাজ করতে হয় যাতে কোনো কিছুতে আঘাত না লাগে।

বর্তমানে হংকং সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় পাওয়া মাসোহারায় তার দিন চলে।

শুধু  হো ইয়া লিন নয়, হংকংয়ে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের দেড় লাখেরও বেশি মানুষ বাড়িতে একা থাকেন। যত্ন এবং সহায়তার অভাবে কেউ বা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে চরম খারাপ পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছেন।

সমাজকর্মী এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে অনেক প্রবীণই পারিবারিক যোগাযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার কারণেও তাদের মধ্যে নিঃসঙ্গতা বাড়ছে। এমনকী মৃত্যুর সময়ও প্রবীণরা কোনো স্বজনকে পাশে পাচ্ছেন না।

সমাজকর্মীদের আশঙ্কা , এই শহরে তাদের অগোচরে হয়তো আরও অনেক বয়স্ক মানুষের ’নিঃসঙ্গ’ মৃত্যু হবে।

হো বলেন, এমন ’নিঃসঙ্গ’ মৃত্যু অনেক বেদনাদায়ক। তিনি জানান, কয়েক বছর আগে পাশের ফ্ল্যাট থেকে তিনি ও প্রতিবেশীরা দুর্গন্ধ পান। পরে পুলিশ এসে এক বৃদ্ধার মরদেহ খুঁজে পান।

হো জানান, তার নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা আছে। যদিও এখনও তিনি নিজের কাজ নিজেই করেন, ধীরে ধীরে হেঁটে গিয়ে দোকান থেকে কেনাকাটাও করেন। তবে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটে না তা নয়। হো আরও জানান, বাড়িতে টেবিলের কোণে আঘাত পেয়ে  প্রায় দুই বছর আগে একবার পাঁজরের হাড় ভেঙেছিলেন। পরে ফোন করায় একজন সমাজকর্মীকে এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন।

যদিও হো এতদিন একাই সব করেছেন, তারপরও এখন তিনি ‘নিঃসঙ্গ’ মৃত্যুর কথা ভেবে অসহায় বোধ করেন । একাকীত্ব ঘোচাতে তাই নিজের বিছানায় তিন মেয়ে, এক ছেলে আর নাতি-নাতনিদের ছবি রাখেন।

হো বলেন, তার ছেলেমেয়েরা তার কাছে আসতেন এবং তিনিও প্রতি বছর মূল ভূখণ্ডে যেতেন। কিন্তু মহামারির কারণে তিনি প্রায় দুই বছর ধরে তাদের দেখেননি।

আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংস্থা সামারিটান বেফ্রেন্ডার্স হংকং -এর মতে, মহামারিকালীন হংকংয়ে গত বছর মোট ১ হাজার ১৯ টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ৪৩৮, যা মোট মৃত্যু ৪৩ শতাংশ।  ১৯৭৩ সাল থেকে আত্মহত্যার রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে বয়স্কদের মধ্যে এটাই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ আত্মহত্যা।

বয়স্কদের অনেকেই ভাবেন, তারা ঘরে মরে থাকলেও কেউ জানবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স্ক ব্যক্তিরা স্বাস্থ্যগত কারণে অনেকসময় আত্মহত্যার চিন্তা করে। অনেকে আবার অবসর গ্রহণের পর নিজেকে পরিবার এবং সমাজের জন্য বোঝা মনে করে হতাশায় ভোগে।

সমাজকর্মীরা বয়স্কদের আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে কিংবা ’নিঃসঙ্গ’ মৃত্যু রোধে কমিউনিটি পরিষেবা ব্যবস্থা উন্নত করাসহ, খাবার সরবরাহ, হোম ক্লিনিংয়ে জন্য সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছে।

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সুইসাইড রিসার্চ অ্যান্ড প্রিভেনশনের পরিচালক এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী ডিন অধ্যাপক পল ইয়িপ সিউ-ফাই বলেন, এমন নিঃসঙ্গ প্রবীণদের খুঁজে বের করে তাদেরকে কমিউনিটির সঙ্গে আবারও সম্পৃক্ত করতে থাকে। তা না হলে এমন নিঃসঙ্গ মৃত্যু রোধ করা যাবে না। সূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

আরও পড়ুন

×