৮৭ বছর বয়সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন

ভারাথা শানমুগানাথন
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২১ | ০৩:৫৪ | আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২১ | ০৪:৪১
ভারাথা শানমুগানাথনের বয়স ৮৭ বছর। কিন্তু মনের দিক দিয়ে এখনও তিনি প্রাণবন্ত এক তরুণ। এ কারণে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনি ছুটছেন নিজের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে। সে লক্ষ্যে তিনি সফলও হয়েছেন। তিনিই প্রথম প্রবীণ হিসেবে কানাডার ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উচ্ছ্বসিত শানমুগানাথন বলেন, নভেম্বরের প্রথম দিনটিতেও আমি সাধারণ একজন হয়ে সাধাসিধে জীবনযাপন করছিলাম। কিন্তু নভেম্বরের দ্বিতীয় দিন, যখন আমি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পেলাম, আমার চাপাশের সবকিছু বদলে গেল।
ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির মুখপাত্র গ্লোরিয়া সুহাসিনি জানান, অন্টারিওরবিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বয়স্ক শিক্ষার্থী হিসেবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন শানমুগানাথনে। তার পড়াশোনার বিষয় ছিল শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা।
শানমুগানাথন বলেন, আমার সবসময়ই স্বপ্ন ছিল, রাজনীতি নিয়ে পড়শোনা করা এবং এ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করা। অবশেষে তা করতে পেরে আমি খুশি।
শানমুগানাথনের জন্ম শ্রীলঙ্কার ভেলানাই নামে ছোট এক গ্রামে। তার মনে সবসময়ই নিজের দেশে চলা ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন ছিল।
শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয় ১৯৮৩ সালে। ২৬ বছর ধরে চলা ওই গৃহযুদ্ধ শেষ হয় ২০০৯ সালের মে মাসে। দীর্ঘ এবং রক্তক্ষয়ী এই সংঘাতে দেশটির উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের কমপক্ষে ৭০ হাজার মানুষ মারা যান।
কেন এই গৃহযুদ্ধ তা নিয়ে সবসময়ই প্রশ্ন ছিল শ্রীলঙ্কান নারী ভারাথা শানমুগানাথনের মনে। সব সময়ই ভাবতেন এ বিষয়টি তিনি গবেষণা করবেন। পড়াশোনার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করবেন নিজের দেশে কীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় তা নিয়ে।
শানমুগানাথন বলেন, সবসময় হৃদয়ে, শান্তি, ন্যায়বিচার, সাম্য এবং গণতন্ত্রকে লালন করেছি । আমার দেশের মানুষ যে শান্তির জন্য আকুল সেটা আমি প্রত্যেক প্রজন্মের কাছে পরিষ্কার করে বলতে চাই।
এটি শানমুগানাথনের প্রথম স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নয়। এর আগে তিনি ভারতের মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পরে তিনি ভারতীয় ইতিহাস এবং ইংরেজি শেখানোর জন্য শ্রীলঙ্কায় ফিরে যান।
১৯৯০ সালে তিনি দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ইংরেজি শেখানোর জন্য লন্ডনে চলে যান এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত ভাষাতত্ত্বে তার প্রথম স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
শানমুগানাথন ২০০৪ সালে তার মেয়ের সাথে থাকার জন্য কানাডায় চলে আসেন। পরে তিনি ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের শুলিচ স্কুল অফ বিজনেস থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় প্রবীণ নাগরিকদের বিনামূল্যে পড়াশোনা সুযোগ দেয়। শানমুগানাথন জানান, এরপরই তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার কথা ভাবেন। এই লক্ষ্যে ২০১৯ সালে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং নিজের স্বপ্ন পুরণে সক্ষম হন।
ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট রোন্ডা লেন্টন সিএনএন-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি নিঃসন্দেহে অন্যদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনে অনুপ্রাণিত করবেন এবং সব বয়সের নারীদের জন্য একটি শক্তিশালী রোল মডেল হিসেবে অনুসরণীয় হয়ে থাকবেন।
শানমুগানাথন জানান, তার লক্ষ্য এখনও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। যুদ্ধ পরবর্তী শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি এবং শান্তির সম্ভাবনা নিয়ে একটি বই লেখারও তার ইচ্ছা আছে।
শানমুগানাথন বলেন, জীবনে সবসময় একটি লক্ষ্য থাকা উচিত। আপনি কোন স্বপ্ন পূরণ করতে চান তা খুঁজে বের করুন এবং শেষ পর্যন্ত তা পূরণের চেষ্টা করুন। এমন কিছু নিয়ে ভাবুন যা নিয়ে আপনার আগ্রহ আছে, কিন্তু তা যেন অন্যদের জন্যও উপকারী হয় সেটা লক্ষ্য রাখুন। নিজের স্বপ্নপূণের লক্ষ্যে অবিচল থাকুন, তাহলে তা ঠিকই অর্জন করতে পারবেন।
যে গ্রামে সব পুরুষকেই দুই বিয়ে করতে হয়
রাজস্থানের (Rajasthan) সীমান্তবর্তী বারমের জেলার দেরসার গ্রামে বহু বিবাহ (Polygamy) না করলে সামাজিক বয়কটের মুখে পড়তে হয় পুরুষদের। কোনও গল্পকথা নয়, যুগ যুগ ধরে এমন আজব রীতিই চলে আসছে এই গ্রামে।
পাক সীমান্তের কাছে ছোট্ট গ্রামটিতে ৬০০ জনের বাস। প্রতিটি পরিবারের পুরুষদের একাধিক বিয়ে। অন্তত দু’টি করে বিয়ে রয়েছে তাঁদের। কিন্ত কেন এমন রীতি? তার পিছনেও রয়েছে এক কুসংস্কার। অদ্ভুত এক গল্প।
স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, প্রথম স্ত্রী সন্তান ধারণে অক্ষম। তাই তাঁকে কার্যত বাড়ির পরিচারিকা করে রাখা হয়। দ্বিতীয় বিবাহের পর সেই বউয়ের সেবা করাই ধর্ম হয়ে দাঁড়ায় প্রথম স্ত্রীর। প্রথম বউয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কও রাখেন না স্বামী। এই রীতির সূত্রপাত বহু বছর আগে। সেই সময় বিয়ের বহু বছর পরেও সন্তানের মুখ দেখেননি এক দম্পতি। পরিবারের পরামর্শে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। তার পরই ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা। অন্তঃসত্ত্বা হন দুই স্ত্রী-ই। তার পর থেকে অন্তত দু’টি বিয়েই রীতি হয়ে দাঁড়ায় দেরসার গ্রামে। যে এই রীতি ভাঙার চেষ্টা করেন, তাঁকেই একঘরে হতে হয়।
তবে শুধু সন্তানধারণ নয়, এই রীতির পিছনে লুকিয়ে রয়েছে আরও এক করুণ কাহিনী। থর মরুভূমির বুকে থাকা এই গ্রামটিতে জলকষ্ট প্রচণ্ড। গ্রামে পানীয় জল মেলে না। সেই জল আনতে হেঁটে পার করতে হয় কয়েক কিলোমিটার রাস্তা। কোনও অন্তঃসত্ত্বা মহিলার পক্ষে অতদূর থেকে জল বয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই প্রথম স্ত্রীকে সন্তানধারণ করতে দেয় না শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। এমনটাই প্রচিলত রয়েছে।
[আরও পড়ুন: ঘরে ঘরে যমজ, অদ্ভুত রহস্য বুকে নিয়ে পর্যটকদের টানে কেরলের এই গ্রাম]
দ্বিতীয় স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হলে প্রথম স্ত্রী তাঁর দেখভাল করে। রোদে পুড়ে জল আনতে যায় ৫ কিলোমিটার দূরে। তিনি পরিচিত হন জল স্ত্রী নামে। তবে নামেই স্ত্রী, আদপে পরিবারের পরিচারিকা হয়ে কেটে যায় তাঁর জীবন।