মানসিক সতেজতা ও প্রবীণের ভালো থাকা

প্রতীকী ছবি
মাহজাবিন আলমগীর
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:৩৮
আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অতি ব্যবহারে নষ্ট হলেও ব্যতিক্রম মানবমস্তিষ্ক। আমরা যত ব্যবহার করব, ততই একে দীর্ঘদিন কর্মক্ষম রাখা সম্ভব। সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিদিন আমাদের শরীরে কিছু কিছু নিউরোসেলের মৃত্যু ঘটে। চল্লিশের আগে ও পরে মস্তিষ্ককে সঠিক জীবনযাত্রার মাধ্যমে কর্মক্ষম রাখা গেলে মগজের বার্ধক্য অনেকটাই রোধ করা সম্ভব। এমনকি প্রবীণ বয়সের ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমার্সের মতো জটিল স্মৃতিক্ষয়ের রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে মস্তিষ্ককে কর্মক্ষম রেখে। কথায় আছে– অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। অলস মস্তিষ্ক স্মৃতিশক্তি লোপ করারও উর্বর ক্ষেত্র।
দেখা যায়, সাধারণত যারা বই পড়া কিংবা কোনো পড়াশোনায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন তাদের মস্তিষ্ক দীর্ঘদিন ভালো থাকে। আমরা যত লেখাপড়া করি, মগজের নেটওয়ার্ক ততই বড় হতে থাকে। মস্তিষ্কে প্রতিদিন যে সেলগুলো তৈরি হয় তার কর্মক্ষমতা নির্ভর করে নিত্যনতুন বিষয় গ্রহণ করার ওপর। বই পড়া, বাচ্চাদের পড়ানো, শব্দজব্দের সমাধান, দাবা খেলা মস্তিষ্কের জন্য খুবই ভালো ব্যায়াম। এগুলো মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত রাখতে সহায়তা করে।
পাশাপাশি যারা কায়িক শ্রম বেশি করেন তাদের স্মৃতিশক্তি ও কর্মক্ষমতা দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভালো থাকে। মানুষের প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা হাঁটা দরকার। এতে মস্তিষ্কের কোষগুলোতে রক্ত সঞ্চালন হয়। কেননা, একটি মানবমস্তিষ্ককে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে প্রতি মিনিটে ১০০ গ্রাম ব্রেইন টিস্যুতে ৫০ মিলিলিটার রক্ত, ৫.৫ মিলিগ্রাম গ্লুকোজ এবং ৩.৫ মিলিলিটার অক্সিজেন সংবহনের প্রয়োজন হয়। আমরা যখন শারীরিক পরিশ্রম করি তখন মস্তিষ্কের এই চাহিদাগুলো পূরণ হয়। এ জন্য কর্মচাঞ্চল্যের কোনো বিকল্প নেই, তা ডিমেনশিয়ার মতো জটিল রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
একটা বয়স পর্যন্ত মানুষ যখন কাজকর্মে ব্যস্ত থাকে তখন মস্তিষ্কও কর্মচঞ্চল থাকে। প্রবীণ বয়সে যখন অবসর সময় বেড়ে যায় তখন মস্তিষ্কের কার্যশক্তি কমতে থাকে। এ জন্য বয়স বাড়লেও পছন্দানুযায়ী কোনো সৃজনশীল কাজে নিজেকে যুক্ত রাখা জরুরি। এতে মস্তিষ্কের সেল রিজেনারেশন ঘটে। হতে পারে তা বাগান করা, প্রিয় প্রাণী পোষার মতো কোনো কাজ। এগুলো মানসিক অবসাদ, বিষণ্নতা কাটাতে দারুণ ফলপ্রসূ, যা পরোক্ষভাবে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি বর্তমান সময়ের ডিজিটাল আসক্তি স্মৃতিক্ষয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যারা অতিরিক্ত মোবাইল স্ক্রিনে সময় কাটান, তাদের মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলো সারাক্ষণ উত্তেজিত থাকে, যা স্মৃতিক্ষয়ে কাজ করে।
মূলকথা, মানসিক সতেজতা যেমন আমাদের বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা বাড়ায়, তেমনি কমায় ডিমেনশিয়ার মতো জটিল স্মৃতিক্ষয় রোগের ঝুঁকি। কর্মচাঞ্চল্য আর প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা থাকলে তা আটকে দিতে পারে মগজের বার্ধক্য। প্রবীণ বয়সেও যদি প্রাণপ্রাচুর্যের মধ্যে থাকা যায়, তা ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখবে।
মাহজাবিন আলমগীর: শিক্ষক,
মোহাম্মদপুর, ঢাকা
- বিষয় :
- মানসিক স্বাস্থ্য