ঘ্রাণই বলে দেবে আমের মিষ্টতার পরিমাণ

এ যন্ত্র ব্যবহার করে কোনো ধরনের স্পর্শ ছাড়াই নির্ণয় করা যাবে আমের মিষ্টতা এবং কঠিনতা
মুসাদ্দিকুল ইসলাম/ আতিকুর রহমান
প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫ | ০০:১৮ | আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫ | ১৬:৪০
আম উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। উৎপাদন-পরবর্তী বাজারজাতকরণ ও মিষ্টতা নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমের স্বাদ গ্রহণ না করে মিষ্টতা নির্ণয় করা অসম্ভব। তাই পৃথিবীর অনেক দেশে মিষ্টতার পার্থক্যের ভিত্তিতে আম বাজারজাত করা হলেও, আমাদের দেশে হয় না। এ অবস্থায় ‘ই-নোজ’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমের মিষ্টতা ও কঠিনতা নির্ণয়ের গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।
দেশে প্রথমবারের মতো ‘ই-নোজ’ এবং ‘এমকিউ সেন্সর’ ব্যবহার করে সাফল্য পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন প্রধান গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিসুর রহমান। উদ্ভাবিত যন্ত্রটি ব্যবহার করে কোনো ধরনের স্পর্শ ছাড়াই নির্ণয় করা যাবে আমের মিষ্টতা এবং কঠিনতা। তাছাড়া অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মিষ্টতার পার্থক্যের ভিত্তিতে আম বাজারজাত করা যাবে।
ড. আনিসুর রহমান জানান, এমকিউভিত্তিক ইলেকট্রনিক নোজ (ই-নোজ) ব্যবহার করে আমের গুণমানের পূর্বাভাস প্রকল্পের আওতায় গত বছরের জুলাই থেকে গবেষণার কাজ শুরু হয়। এক বছর মেয়াদি এ প্রকল্প বাস্তবায়নে পাঁচ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের একটি গবেষণাপত্র ‘কিউ ওয়ান’ জার্নালে ‘স্মার্ট এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি’ প্রকাশিত হয়েছে।
বর্তমানে কৃষক ও ভোক্তা সবাই আম হাতে চেপে বা চোখের আন্দাজে জাত অনুযায়ী মিষ্টতা এবং কঠিনতা অনুমান করেন। এটি সব ক্ষেত্রে সঠিক হয় না। আবার এমন চাপ প্রয়োগে আমের গুণাগুণ দ্রুত নষ্ট হয়। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে স্পর্শ ছাড়া আমের মিষ্টতা ও কঠিনতা নির্ণয় জরুরি।
আনিসুর রহমান আরও বলেন, ‘ই-নোজ বা ইলেকট্রনিক নোজ মূলত আম থেকে বের হওয়া ঘ্রাণ বা গ্যাসের মধ্যে অবস্থিত মিষ্টতা নির্ধারক পদার্থের পরিমাণ সেন্সরের মাধ্যমে নির্ণয় করতে পারে। একটি আম ই-নোজের চেম্বারে রেখে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে তা কতটুকু মিষ্টি বা শক্ত তা নির্ধারণ করে দেবে।’ খুব কম খরচে ই-নোজ ব্যবহার করে আমের মিষ্টতা নির্ণয় করা যাবে বলে জানান এ গবেষক।
গবেষণা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী কাজী সাকিবুর রহমান বলেন, ‘ই-নোজ ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশেও এখন মিষ্টতা অনুযায়ী আমসহ অন্যান্য ফলের শ্রেণি বিভাগ করা যাবে। এতে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মিষ্টতার ভিত্তিতে ফল খেতে পারবেন।’
গবেষণাটি মাঠ পর্যায়ে খামারিদের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে আমের বাজার ও ভোক্তা অনেক উপকৃত হবেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।