চারদিক
সাঁকোতে প্রসব ও সেতুর অপেক্ষা

ছবি: সমকাল
নূর মোহাম্মদ দীন
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৪ | ০২:৫০
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় রৌমারী-খাটিয়ামারী সড়কের মাঝিপাড়া-সবুজপাড়া আকবরের বাড়িসংলগ্ন বাঁশের সাঁকোতে সম্প্রতি সন্তান প্রসব করেছেন এক গৃহবধূ। এর আগে বাস, ট্রেন, অ্যাম্বুলেন্স, লঞ্চ, স্টিমার, নৌকা এমনকি বিমানেও সন্তান প্রসবের খবর আমরা দেখেছি বা শুনেছি।
সাঁকোতে প্রসব? মাস দুয়েক আগে বর্তমান সংসদ সদস্য সাঁকোটির টোল অবমুক্ত করে দেন এলাকাবাসীর জন্য। অর্থ অনুদানও দেন সাঁকোসংশ্লিষ্টদের। এতে এলাকাবাসী আনন্দিত ও উপকৃত হন। কিন্তু কেন সাঁকোটির এমন বেহাল দশা– প্রশ্ন উঠছে জনমনে।
উপজেলার যাদুরচর গ্রামের সাইজুদ্দিনের স্ত্রী ও ২ নম্বর শৌলমারী ইউনিয়নের সুতিরপাড় গ্রামের আহাম্মদ হোসেনের মেয়ে মোছা. বিলকিস বেগমের প্রসব বেদনা উঠলে সুতিরপাড় বাবার বাড়ি থেকে ভ্যানে রৌমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্দেশে রওনা হন স্বজন। সাঁকো পর্যন্ত এসে বিলকিসকে ভ্যান থেকে নামিয়ে তারা ধরাধরি করে এটি পার করার চেষ্টা করেন। মাঝামাঝি পর্যন্ত গিয়ে ভাঙা সাঁকোর ফাঁকে পা আটকে যায় বিলকিসের। প্রসব বেদনায় আরও কাতর হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে শুয়ে পড়েন সাঁকোর ওপর। উপস্থিত স্বজন, মা-বোনেরা তাদের ওড়না ও পথচারীদের গামছা দিয়ে পর্দা বেষ্টনী করেন। খোলা আকাশের নিচে সাঁকোর ওপরেই ফুটফুটে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। সাঁকোর সঙ্গে মিল রেখে সন্তানের নাম রাখেন স্বপ্না খাতুন। ঘটনার শুরু থেকেই ফেসবুকে একজন লাইভ দেখাচ্ছিলেন। তাৎক্ষণিক আমি জরুরি অ্যাম্বুলেন্স দরকার ও সাংবাদিক ভাইদের এগিয়ে আসার জন্য ফেসবুকে একটি পোস্ট দিই। এমপি মহোদয়সহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াকে ফোন করি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সংবাদকর্মীরা উপস্থিত হন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং প্রসূতি-নবজাতকের খোঁজখবর নেন।
স্বজনের অভিযোগ, যদি সাঁকোটি ভালো থাকত বা একটি ব্রিজ থাকত তাহলে ভ্যান থেকে নামতে হতো না তাদের। সাঁকো পারাপারে সময়ও নষ্ট হতো না। এভাবে লজ্জিত-অসম্মানিত হয়ে সন্তান জন্ম দিতে হতো না বিলকিস বেগমকে। যতক্ষণে ভ্যান থেকে নামানো হয়েছে এবং সাঁকো পারাপারে সময় নষ্ট হয়েছে ততক্ষণে প্রসূতিকে রৌমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া যেত। নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশে শিশুটির জন্মদান সম্ভব হতো। ভাগ্যিস, বৃষ্টি ছিল না। আলহামদুলিল্লাহ, তিনি নিরাপদে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। যদি বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেত, তবে কে নিতেন এর দায়ভার?
কোনোভাবেই সাঁকোসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা এর দায় এড়াতে পারেন না। বিলকিসের পরিবার ও এলাকাবাসী এই লজ্জা ও অসম্মানের দায় নেবেন না; নিতে পারেন না। অবশ্যই এ দায় সাঁকোসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিতে হবে। আপনারা থাকতে কেন সাঁকোর ওপরে সন্তান জন্ম দিতে হলো? কেন বিলকিস ও তাঁর পরিবার-স্বজন লজ্জিত ও অসম্মানিত হলেন? কেন সাঁকোটি সেতুতে রূপান্তরিত হলো না?
অতিসত্বর বেড়িবাঁধ প্রকল্প বাতিলসহ সব জটিলতা দূর করে একটি সেতু নির্মাণ করতে হবে। আর যেন কোনো মা-বোনকে সাঁকোর ওপর সন্তান প্রসব করতে না হয়। আর যেন কোনো ভয়-দুর্ঘটনায় চোখ মুছতে না হয় আমাদের।
নূর মোহাম্মদ দীন: ব্যাংকার
[email protected]
- বিষয় :
- সেতু
- সন্তান প্রসব