ইসলাম ও সমাজ
ইবাদতের সুবর্ণকাল

প্রতীকী ছবি
মো. শাহজাহান কবীর
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩:০১
শীতকাল নফল রোজা পালনের সুবর্ণকাল। আমরা চাইলেই খুব সহজে এ সময় সাপ্তাহিক ও মাসিক রোজাগুলো সম্পন্ন করতে পারি। কাজা রোজা থাকলে তা আদায়ের জন্যও শীত উপযোগী। কোরআনের ভাষায়, ‘আল্লাহ দিন ও রাতের আবর্তন ঘটান, নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষা রয়েছে’ (সুরা নুর, আয়াত ৪৪)। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘শীতকাল হলো মুমিনের বসন্তকাল’ (মুসনাদে আহমাদ)।
সাহাবায়ে কেরামরাও শীতের জন্য অপেক্ষা করতেন। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘হে প্রিয় শীত! তোমাকে স্বাগতম। কেননা, তা বরকত বয়ে আনে; রাতগুলো দীর্ঘ হয়। ফলে কিয়ামুল লাইলের জন্য সহায়ক এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা সহজ’ (আল মাকাসিদুল হাসানা)।
কেউ যখন বলবেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাকে জামহারির জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন।’ তখন আল্লাহ জাহান্নামকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘আমার এক বান্দা তোমার জাহান্নাম থেকে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছে। আমি তোমাকে সাক্ষ্য রেখে বলছি, আমি তাকে মুক্তি দিলাম।’ সাহাবিরা বলেন, জামহারির কী? জবাবে রাসুল (সা.) বললেন, ‘জামহারির জাহান্নামের এমন একটি ঘর, যেখানে কাফিরদের নিক্ষেপ করা হবে। শীতের তীব্রতায় তারা বিবর্ণ হয়ে যাবে’ (আস-সিলসিলাতুদ-দায়িফাহ)।
শীতকালে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। শীতের শেষ দিকে গাছপালার সব পত্র-পল্লব যেমন শূন্য হয়ে যায়, তেমনি গুরুত্ব সহকারে নামাজ আদায় করলে নামাজির পাপগুলোও এভাবে ঝরে যায়। হজরত আবু জার গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) শীতকালের কোনো একদিন বের হলেন, যখন গাছের পত্র-পল্লব ঝরে পড়ছিল। তিনি গাছের দুটি ডাল ধরলেন, ফলে পাতাগুলো আরও বেশি ঝরতে লাগল। তিনি বললেন, ‘হে আবু জার,’ আমি বললাম, ‘আমি উপস্থিত, হে আল্লাহর রাসুল!’ তিনি বললেন, ‘কোনো মুসলমান বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করে, তখন তার পাপগুলো এই গাছের পাতার মতো ঝরে পড়ে’ (মুসনাদে আহমাদ)।
শীতে সুস্থ থাকার জন্য দরকার পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র এবং শীতজনিত রোগের নিরাময়ে প্রয়োজন সুচিকিৎসা ও ওষুধ-পথ্য। এই সামর্থ্য অনেকেরই থাকে না। বিভিন্ন জায়গায় বিশেষত রাস্তার পাশ, বাসস্ট্যান্ড ও রেলস্টেশন, বাজার-ঘাটে রাতের বেলা এমন অনেক অসহায় মানুষ দেখা যায়, যারা শীতের প্রকোপে জবুথবু। এ সময় আমাদের উচিত শীতার্ত গরিব-অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়ানো। এটা আমাদের নৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। হাদিসে বলা হয়েছে, কোনো মুমিন যদি অন্য কোনো মুমিনের পিপাসায় পানি পান করায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সিল করা জান্নাতি পানীয় পান করাবেন। কোনো মুমিন যদি অন্য কোনো বস্ত্রহীন মুমিনকে পরিধান করায় তাহলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ বস্ত্র পরিধান করাবেন (তিরমিজি)।
শীতকালে সবকিছু শীতল হয়ে থাকে। পানি তো বরফের মতো হয়ে যায়। কাজেই অজু করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে এশা ও ফজরের নামাজের জন্য অজু করা খুবই কষ্টকর। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দেব না, যার কারণে আল্লাহতায়ালা পাপ মোচন করবেন এবং জান্নাতে মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন?’ সাহাবিরা বললেন, ‘হ্যাঁ, আল্লাহর রাসুল!’ তিনি বলেন, ‘মন না চাইলেও ভালোভাবে অজু করা, অধিক পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাজের পর আরেক নামাজের জন্য অপেক্ষা করা’ (মুসলিম)।
ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
- বিষয় :
- ইসলাম