জৈব সারে আয় লাখ টাকা

পুকুরের এক পাড়ে সায়রা আমিনের জৈব সার তৈরির কারখানা। দেড় মাসে ১০ টন সার তৈরি হয় কারখানায় সমকাল
এম সেকান্দর হোসাইন, সীতাকুণ্ড
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:২৫
প্রবাসে থাকা স্বামী আবদুর রহমান ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী। ২০২০ সালে দেশে এসে করোনা মহামারিতে আটকা পড়েন। পরে বিদেশে গেলেও দেড় মাসের মাথায় কঠিন রোগ নিয়ে ফিরে আসেন। একদিকে সংসারের খরচ অন্যদিকে স্বামীর চিকিৎসা, অনেকটা নিঃস্ব হয়ে পড়েন গৃহিণী সায়রা আমিন। কিন্তু বসে থাকলে তো হবে না। সাহস করে সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করলেন সায়রা, স্বর্ণালংকার বিক্রি করে বাড়ির পাশে একটি পুকুর খনন করেন। পুকুরে চারপাশে শুরু করেন সবজি চাষ। এক পর্যায়ে মাছ ও সবজি বিক্রি শুরু করেন। এই সময় তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার শরণাপন্ন হন। কৃষি কর্মকর্তা তাকে মাছ ও সবজি চাষের পাশাপাশি জৈব সার (ট্রাইকো কম্পোস্ট সার) উৎপাদনের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। শুরুটা এভাবেই– এখন তার মাসিক আয় লাখ টাকা। নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন, তার খামারে প্রতিদিন ৮ জন নারী-পুরুষ কাজ করেন। জৈব সার উৎপাদন করে বেশ সাড়া জাগানো সায়রা আমিন ধৈর্য ও পরিশ্রমের মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি সীতাকুণ্ডের লালানগর গ্রামের বাসিন্দা। তার স্বামী আবদুর রহমান।
সরেজমিন দেখা যায়, সায়রা আমিনের বাড়ির পাশেই ১১০ শতক জায়গার একপাশে রয়েছে একটি পুকুর। পুকুরের উত্তর পাশে রয়েছে টিনশেড ঘরের মধ্যে জৈব সার উৎপাদন কারখানা। সেখানে কাজ করছেন কয়েকজন লোক। সায়রা আমিন বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে গ্রামের মানুষ আমাকে নিয়ে হাসি-তামাশা করত। কিন্তু আমার স্বামী আমাকে সবসময় উৎসাহ দিত। এ কারণে আমি আজ সফল হতে পেরেছি। প্রতি ৪৫ দিন পরপর ১০ টনের বেশি জৈব সার উৎপাদন হয় আমার কারখানায়। প্রতি কেজি ২০ টাকা করে বিক্রি করি।’
যেসব উপাদান দিয়ে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার তৈরি হয় সেগুলো হলো– গোবর, মুরগির বিষ্ঠা, সবজির উচ্ছিষ্ট, কচুরিপানা, কাঠের গুঁড়া, ভুট্টার ব্রান, চিটাগুড়, ছাই ও নিমপাতা এবং ট্রাইকোডারমা ছত্রাকের অণুবীজ। এসব উপাদান নির্দিষ্ট অনুপাতে একত্রে মিশিয়ে বিশেষ উপায়ে হাউসে জাগ দিয়ে ৪০-৪৫ দিন রেখে পচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জৈব সার তৈরি করা হয়। সায়রা আমিন জানান, দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয় এই সার।
ট্রাইকো কম্পোস্ট সারের ভালো গুণ রয়েছে বলে জানান সীতাকুণ্ড উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এ সার গাছের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ, ফলন বৃদ্ধি ও গাছকে সতেজ রাখতে ভূমিকা রাখে। এই সারের বিশেষ আরেকটি গুণ হচ্ছে গাছের পাশাপাশি মাছের খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার কারা যায়। এ সার প্রয়োগে মাটির গুণাগুণ ঠিক থাকে। ফলন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। সারটি উৎপাদন করতে ৪৫ দিন সময় লাগে। এ সার উৎপাদনে প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় গরুর গোবর।
প্রতিষ্ঠানে কাজ করা শ্রমিক জাফর বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদন ও কৃষি জমিতে কাজ করি। যেদিন কৃষিকাজ করি সেদিন ৬০০ টাকা ও যেদিন জৈব সারের কারখানায় কাজ করি সেদিন ৭০০ টাকা মজুরি পাই। সায়রা আমিনের সাফল্য দেখে গ্রামের বেকার তরুণ-তরুণীরা এ কাজে বেশ উৎসাহী হচ্ছে।’
- বিষয় :
- জৈব সার