ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

স্বাস্থ্যকর ডায়েট

স্বাস্থ্যকর ডায়েট

.

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০০:২০ | আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১২:৫১

এমন অনেকেই আছেন, যারা নিজে নিজে ইউটিউব কিংবা নিউজ সাইট দেখে একটি তালিকা তৈরি করেন। এর পর কঠিনভাবে সেটি মেনে চলেন। আবার কোনো একবেলা না খেয়ে থাকেন এবং অন্যদের বলে বেড়ান তারা ডায়েটে আছেন। এটি আসলে সঠিক ডায়েট নয়। স্বাস্থ্যকর ডায়েট হলো এমন একটি খাদ্য পরিকল্পনা, যা শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। সুস্থ, সুন্দর ও একটি দীর্ঘায়ু জীবনযাপনের ভিত্তি তৈরি করে ডায়েট। স্বাস্থ্যকর ডায়েট সম্পর্কে জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের পুষ্টিবিদ আয়েশা সিদ্দিকা স্বাস্থ্যকর ডায়েটের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর ডায়েটের প্রধান অংশ হলো সুষম খাদ্য। এতে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন এবং মিনারেলস সঠিক মাত্রায় থাকতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে প্রাকৃতিক ও তাজা খাবার খেতে হবে। শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখতে এবং বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সঠিকভাবে চালানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। রাতে হালকা খাবার খাওয়া উচিত, যা সহজে হজম হয় এবং রাতে ভালো ঘুমের সহায়ক হবে।’

বয়সভেদে ডায়েট

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের পুষ্টির চাহিদা বদলাতে থাকে। শিশু, কিশোর-কিশোরী, প্রাপ্তবয়স্ক এবং বয়স্কদের ডায়েটের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা পরিকল্পনা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে বায়োজিন কসমেসিউটিক্যাল উত্তরা ব্রাঞ্চের পুষ্টিবিদ মুনিয়া মৌরিন মুমু বলেন, ‘সুস্থ জীবনযাপনের জন্য জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ডায়েটের প্রয়োজন রয়েছে। একটি শিশু যখন জন্মায়, তখন মায়ের দুধ পানের মাধ্যমে তার ডায়েটের শুরু হয়। এরপর শিশু বড় হলে তার শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী ডায়েটের পরিবর্তন হয়।’ বয়সভেদে ডায়েট 
পরিকল্পনাও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

শিশুর ডায়েট (১-১২ বছর)

শিশুর জন্য সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ দ্রুতগতিতে হয়। তাই তাদের ডায়েটে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ভিটামিনযুক্ত খাবার রাখতে হবে। শিশুর প্রোটিনের প্রধান উৎস হলো দুধ, ডিম ও মাছ। এই খাবারগুলো তাদের হাড় ও পেশি গঠনে সহায়তা করে। শিশুরা প্রচুর শক্তি খরচ করে, তাই তাদের ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট রাখতে হবে। এর জন্য চাল, রুটি, আলু ইত্যাদি খাওয়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া তাজা ফল ও শাকসবজি শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে ভিটামিন ও খনিজ থাকে, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

কিশোর-কিশোরীর ডায়েট (১৩-১৮ বছর)

এই বয়সে শরীরের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। এ সময়ে প্রোটিন, আয়রন ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের প্রয়োজন বেশি। এ বয়সে ডাল, মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি প্রোটিন এবং আয়রনের প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে। এটি শরীরের বিভিন্ন টিস্যুর গঠনকার্যে সহায়তা করে। তাদের হাড়ের গঠন সঠিকভাবে করার জন্য ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। তাই দুধ, দই, ছানা এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার ডায়েটে পরিকল্পনায় রাখতে হবে। কিশোর বয়সে শরীরের পানির প্রয়োজন বেশি থাকে। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে ।

প্রাপ্তবয়স্কের ডায়েট (১৯-৬৪ বছর)

প্রাপ্তবয়স্কের ব্যালান্সড ডায়েট অনুসরণ করতে হবে। এ বয়সে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পূরণের পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও জরুরি। প্রোটিন, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট এবং বিভিন্ন ভিটামিন-খনিজসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। ডাল, দানা শস্য, সবুজ শাকসবজি, তাজা ফল ও পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্কে ডায়েটে রাখতে হবে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট।

বয়স্কের ডায়েট (৬৫ বছর এবং তার বেশি)

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হজম শক্তি কমে যায় এবং শরীরের পুষ্টি চাহিদাও বদলাতে থাকে। এজন্য বয়স্কের জন্য হালকা কিন্তু পুষ্টিকর খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিনের চাহিদা বাড়াতে তাদের ডায়েটে রাখতে হবে দুধ, ডিম, মুরগির মাংস ও মাছ। এই প্রোটিন তাদের শরীরের বিভিন্ন কোষের গঠন ও মেরামত করতে সাহায্য করবে। বয়স্কদের জন্য ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার যেমন ওটস, ব্রাউন রাইস, সবুজ শাকসবজি প্রয়োজন। ফাইবার হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে সাহায্য করে। বয়স্কদের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল যেমন– বেরি জাতীয় ফল, আপেল এবং সাইট্রাস ফল খাওয়া উচিত। এগুলো শরীরের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বয়সজনিত রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে ডায়েট 

ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া বর্তমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। ওজন কমাতে সঠিক ডায়েট অনুসরণ করা জরুরি। অতিরিক্ত ওজন কমাতে ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। খাদ্য তালিকা থেকে উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার যেমন–সাদা চাল, মিষ্টি এবং ফাস্টফুড বাদ দিতে হবে।
পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে; যা শরীরের টক্সিন দূর করতে এবং হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে সাহায্য করবে। ব্যালান্সড ডায়েট মেনে চললে এই সমাধান হবে বলে আশা করা যায়।

ডায়াবেটিক রোগীর ডায়েট 

ডায়াবেটিক রোগীর জন্য ডায়েট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিক ডায়েট পরিকল্পনা মেনে খাবার গ্রহণ করতে হবে। ডায়াবেটিক রোগীর জন্য গ্লাইকেমিক ইনডেক্স কম এমন খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সবজি, দানা শস্য, কম মিষ্টি ফল এবং চর্বিহীন প্রোটিন ডায়েটে রাখতে হবে। ডায়েটে চিনি এবং উচ্চ ক্যালরিযুক্ত, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, সেসব খাবার বাদ দিতে হবে। ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার যেমন ওটস, শাকসবজি এবং ব্রাউন রাইস খেতে হবে। কারণ, ফাইবার জাতীয় খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।

হার্টের রোগীর ডায়েট

হার্টের রোগীর জন্য ডায়েটে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং চর্বিযুক্ত খাবার কম রাখা উচিত। হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সঠিক ডায়েট অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার যেমন–রেড মিট, ফাস্টফুড ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে। এসবের পরিবর্তে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ মাছ, বাদাম ও অলিভ অয়েল খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রচুর পরিমাণে ফল ও শাকসবজি খাওয়া উচিত। এগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা হার্টের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। খাবারে লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কারণ বেশি লবণ রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

ডায়েটের সময় যেসব ভুল করা যাবে না

বেশির ভাগ মানুষই ডায়েটের সময় কিছু সাধারণ ভুল করে থাকেন, যা এড়িয়ে চলা উচিত। অনেকেই পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া ডায়েট শুরু করেন। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা থাকে।

একাধিক খাবার বাদ দেওয়া:  অনেকেই ওজন কমাতে গিয়ে এক বা একাধিক খাবার খাওয়া বাদ দেন, যা পুষ্টির ঘাটতি তৈরি কর। এটি শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে।

ক্যালরির হিসাব না রাখা: ডায়েটের সময় ক্যালরি হিসাব না করলে ওজন কমানো কঠিন হয়ে যায়। তাই খাবারের পরিমাণ এবং ক্যালরি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। প্রতিদিন নিয়ম করে নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে।

পর্যাপ্ত পানি পান না করা: পানি ছাড়া আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ কোনো কাজই সম্পাদন সম্ভব নয়। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে শরীর 
ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়, যা হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা তৈরি করে।

সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ: অনেকেই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে দ্রুত ফলাফল পেতে চান। আবার বর্তমানে অনলাইনে প্রচলিত হয়েছে ওজন কমানোর বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট। অনেকেই হুজুগের বশে সেগুলো সেবন করে থাকেন। এটি মোটেও উচিত নয়। যে কোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন

×