এডাস্টে তামাকবিরোধী সচেতনতায় সেমিনার
তরুণদের মধ্যে তামাক ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে

আলোচনা শেষে অতিথি ও সুহৃদরা
সুহৃদ সমাবেশ ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫ | ১৯:১৮
গতকাল ছিল বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। বিশ্বের নানা দেশে দিবসটি পালিত হয় সচেতনতা বৃদ্ধির নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশও বিভিন্ন আয়োজনে দিনটি পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (এডাস্ট) সমকাল সুহৃদ সমাবেশ আয়োজন করেছে ‘তামাকবিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার।
সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারীমৈত্রীর পরিচালক খালিদ বিন ইউসুফ। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আব্দুল কাইউম সরদার আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমপিএইচ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. আরিফুজ্জামান খান, সুহৃদ সমাবেশের সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান। এ ছাড়া এডাস্ট সুহৃদ উপদেষ্টা, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও কো-অর্ডিনেটরসহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কমিটির সুহৃদরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান আলোচক খালিদ বিন ইউসুফ তথ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে তামাক ব্যবহার ও এর প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন কিশোর-কিশোরী তামাক ব্যবহার করছে। তামাক কোম্পানিগুলো তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে চটকদার প্যাকেট, ফ্লেভার এবং বিজ্ঞাপনী কৌশল ব্যবহার করছে; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি। গ্লোবাল অ্যালায়েন্স টু অ্যান্ড টোব্যাকোর ২০২২ সালের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ১৫-ঊর্ধ্ব আনুমানিক চার কোটি মানুষ তামাকজাত পণ্য নিয়মিত ব্যবহার করে। এর এক-চুতুর্থাংশ নারী। এই সংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশ তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যায় বিশ্বে পঞ্চম এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্যমতে, দেশে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার ১৩৫ জন তামাকজনিত রোগে মারা যান। তামাক ব্যবহারের কারণে বার্ষিক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় প্রায় ৩৯ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা।
আব্দুল কাইউম সরদার আলম বলেন, ‘তামাকজনিত রোগে প্রতিবছর লাখো মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। হৃদরোগ, ক্যান্সার, স্ট্রোক, শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা, অ্যাজমা ও ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী ও প্রাণঘাতী রোগের পেছনে তামাক অন্যতম প্রধান কারণ। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী জনসমক্ষে ধূমপান নিষিদ্ধ বিজ্ঞাপন ও প্রোমোশন নিষিদ্ধ, স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তা বাধ্যতামূলক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে বিক্রি নিষিদ্ধ, স্কুলে তামাকবিরোধী শিক্ষা অন্তর্ভুক্তি, মোবাইল ফোনে তামাকবিরোধী বার্তা প্রচার, চিত্রায়িত স্বাস্থ্য সতর্কীকরণ লেবেল বাধ্যতামূলক করা, এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর ভূমিকা, গবেষণা ও তথ্য প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার কথা রয়েছে। তারপরও তরুণদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে তামাক ব্যবহার বেড়েছে।’ তিনি শিক্ষার্থীদের তামাক তথা ধূমপান থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন।
সূচনা বক্তব্যে সুহৃদ প্রধান উপদেষ্টা শারমিন আকতার তামাকবিরোধী সচেতনতায় পরিবারের ভূমিকার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। এই পর্বে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জীবনের লক্ষ্য এবং তামাকজনিত বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধান আলোচক।
প্রতিবছর ৩১ মে নানা আয়োজনে দিনটি পালিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আন্তর্জাতিক সচেতনতা দিবস হিসেবে ১৯৮৭ সালে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে অবহিত করা এবং তামাকমুক্ত সমাজ গঠনের আহ্বান জানাতে দিনটি ঘোষণা করে। সমকাল সুহৃদ সমাবেশ এডাস্টের প্রাক্তন সভাপতি সাগর হোসেনর সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।